আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : কিছু অপপ্রচার ও জবাব

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল  

যে ব্যক্তির সারা জীবন কেটেছে এদেশের মানুষের উন্নয়ন ও অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি করে, সেই বর্ষীয়ান জননেতা, মুক্তিযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার, প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পরও নোংরামি বন্ধ হয়নি! সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে যুক্ত হয়েছে তথাকথিত প্রগতিশীল দাবিদাররা!

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে বিতর্কিত করার বহু অপচেষ্টা হয়েছে; অন্যতম দু'টির একটি ইসলাম ধর্ম বিষয়ক এবং অন্যটি এপিএস ফারুকের কাছে পাওয়া টাকা নিয়ে। ১৯৭০ সাল থেকে নয় বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, উপরন্তু বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে প্রবলভাবে। নির্লজ্জ অপপ্রচার দেখে আবারও বিষয় দুটি আলোচনা করছি।

মন্ত্রিত্ব ও কালো বিড়াল
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সারা জীবনে একটি মাত্র দুর্ঘটনাই ঘটেছে যা তার ভাবমূর্তি সংশ্লিষ্ট। অভিযোগ উঠলে তিনি দৃঢ়ভাবেই বলেছিলেন, "ছোটবেলা থেকেই আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। দুর্নীতির সঙ্গে আপস করব না। মন্ত্রীর বাড়িতে থাকি না। জিগাতলার বাড়িতেই থাকি। এপিএস ও রেলের জিএমের ব্যক্তিগত জীবনের খবর রাখা মন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়।"

বলেছিলেন, "এত টাকা এপিএসের বহন করা অস্বাভাবিক তো বটেই। যেহেতু সে এই টাকার মালিকানা দাবি করেছে। এখন তাকে প্রমাণ করতে হবে এটা তার টাকা কি না। আর যদি অঘোষিত টাকা হয় তাহলে সেটা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চলে যাওয়ার কথা।"

আরও বলেছিলেন, "এটা একটি ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীর তৎপরতা। এই গোষ্ঠী ৪০ বছরের সুবিধাভোগী আমলা, রাজনীতিক ও ঠিকাদার। এপিএস ফারুককে না আসার জন্য কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে বলবে।"

অনেক মন্ত্রীর এপিএসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে যা মন্ত্রীও জানেন না। মন্ত্রী থাকাকালে মহিউদ্দিন খান আলমগীরের এপিএসকে একই কারণে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, কোনও সংবাদ মাধ্যম জানতেও পারেনি।

বিবেচনা করুন:
১. রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলকে দুর্নীতি মুক্ত করার এবং কালো বিড়ালদের খুঁজে বের করার।

২. সর্বদা বিজয়ী এই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে কখনো অসততার অভিযোগ ওঠেনি। সারা জীবন কাটিয়েছেন সাধারণ মানুষের মতো।

৩. যে কয়েকটি শীর্ষ মন্ত্রণালয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি আর্থিক বরাদ্দ থাকে তার একটি রেল মন্ত্রণালয়। এমন একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শত কোটি টাকা নয়, এপিএসের কাছে থাকা ৭০ লাখ, মতান্তরে ৩৫ লাখ টাকার জন্য অভিযুক্ত হবেন - এটি হাস্যকর বিষয়।

৪. যিনি সবসময় রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়েন, তার বাসায় মধ্যরাতে এপিএস ওমর ফারুক কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে যাবে? অন্যদিকে বিএনপি নেয়া ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ এপিএস হিসেবে পরিচিত ফারুকের গাড়ি চালক পিলখানায় গাড়ি প্রবেশ করিয়ে বিজিবির কাছে ধরা দিল এবং মুহূর্তের মধ্যেই ক্যামেরাসহ প্রস্তুতি নিয়ে কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়ে গেলেন?

- এ ঘটনা যে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র তা বোঝার জন্য কি খুব বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন?

সংবিধান সংশোধন নিয়ে মিথ্যাচার
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, "সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর নাম থাকবে কি থাকবে না, সে দায়িত্ব এখন সুরঞ্জিত বাবুর ওপরে পড়েছে।"

সেই থেকে শুরু হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নিয়ে মিথ্যাচার।

কে অস্বীকার করতে পারবে যে, শুধুমাত্র হীন রাজনৈতিক স্বার্থেই সংবিধানে “বিসমিল্লাহ ও আল্লাহ’র নাম” যুক্ত করা হয়েছিল। এটি যুক্ত করা জিয়াউর রহমানকে কেউ নামাজ পড়তে দেখেছেন? মদ জুয়ার বৈধতা দেয়া জিয়ার কোন ইসলামের নমুনা? সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের আমলে এক ধাপ এগিয়ে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়। কোথাও নামাজ পড়তে যাওয়ার সপ্তাহ জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হতো আর এরশাদ নামাজের আগে বক্তব্য রাখতেন "গতকাল স্বপ্ন দেখায় এখানে নামাজ পড়তে এসেছি।" এসব কি ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু? এরশাদ ও জিয়া কোন ধরনের মুসলিম ছিল - এটা আমাদের মোল্লারা কখনো উচ্চারণ করে না, বরং সমর্থন করতে তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল।

ইসলামিক রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এক নয়। রাষ্ট্রকে কিভাবে কার সাক্ষীতে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হল এবং রাষ্ট্রের নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত কিভাবে আদায় হবে - এ সবকিছুই এক রহস্য।

গণতান্ত্রিক সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংবিধান ইচ্ছানুসারে পরিবর্তন করতে পারে এটা সত্যি, কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে 'সরকার সংবিধান থেকে অগণতান্ত্রিক ও কলঙ্কিত অধ্যায় বাতিল করা ছাড়া জনমতকে উপেক্ষা করে কিছু করবে না' - এ নিশ্চয়তা বার বার দেয়ার পরও পানি ঘোলা করার চেষ্টা অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশ ইসলামিক স্টেট নয়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তর্কের খাতিরে বলছি: এদেশের একজন নাগরিকের কি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার অধিকার নেই? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা স্বাধীনতা এনেছেন। তারা মত প্রকাশ করতে পারবেন না, অথচ ১৩ দফার দাবি করতে পারবে হেফাজতে ইসলাম?

প্রকৃতপক্ষে, তিনি ইসলামের ন্যুনতম সমালোচনা করেন নি। তিনি বরাবরই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

"সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর নাম" নিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য ছিল: "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সংবিধান সংশোধন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মতামতের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে এখনই কিছু জানানো হবে না। সময় এলে সবকিছুই জানানো হবে।" সূত্র: কালের কণ্ঠ

অথচ তাঁর কথাকে বিকৃত করে বিরামহীনভাবে অপপ্রচার চলেছে, আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।

তাঁকে কটাক্ষ করে যে ধরণের মন্তব্য করা হচ্ছে তা উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচার অত্যন্ত ঘৃণ্য মানসিকতার পরিচায়ক।

যাদের জন্য আজ আপনারা আজ স্বাধীনতা ভোগ করছেন, সংবিধানের দাবিদার হয়েছেন, যে বীরদের ত্যাগের বিনিময়ে ঘৃণ্য পূর্ব পাকিস্তানের বদলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি পেয়েছেন, তাদের একজন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ভয় করেন নি পাকবাহিনীকে, স্বৈরশাসকদের পালিত গুণ্ডা ও পুলিশের অত্যাচার, কারাবাস, নিপীড়ন, এমন কি ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েও গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। ক'জন নেতা তাঁর মতো বলতে পারেন, "একজন রাজনীতিকের কাছে পদ অর্জন সাংঘাতিক বিষয় নয়। ত্যাগ করাও সহজ। রাজনীতিবিদের কাছে মন্ত্রিত্ব স্থায়ী কোনো পদ নয়। মন্ত্রিত্বে থাকা-যাওয়া বড় ঘটনা নয়। স্থায়ী পরিচয় হচ্ছে রাজনীতিবিদ।"

আপনারা যারা এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষীয়ান নেতাকে অপমান করছেন, তারা আর যাই হোক দেশপ্রেমের পরিচয় দিচ্ছেন না!

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ