আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কয়েক বছরের জন্য এবারই হয়তো আমার শেষ বইমেলা

জহিরুল হক বাপি  

২০১৭ এর বই মেলা শেষ হচ্ছে। শুনতে আঁতলামো মনে হতে পারে অনেকের কিন্তু সত্য যে কেমন যেন আত্মীয় দূরে যাওয়ার মতো নরম একটা অনুভূতি হচ্ছে। কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয় যে মানুষটি আত্মিক ভাবে বা সজ্ঞানে কখনও বই মেলার কথা ভাবেননি, পয়লা বৈশাখ যার কাছে কেবলই উৎসব, ২১ ফেব্রুয়ারি মানেই নিজেকে এক ধরনের দেশ প্রেমিক দেখানোর চেষ্টা সেও বোধ হয় জীবনের এক পর্যায়ে বুঝতে পারে ঐ বই মেলা, প্রভাত ফেরী বা মঙ্গল শোভা যাত্রা কেবল উৎসব নয় শরীরের সাথে মিশে থাকা প্রাচীন রক্তধারার টান। ৭৫ পরবর্তী থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালিয়ানার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত গিয়ে আজও এ দেশের মানুষগুলো নরম আছে হয়তো বা বিভ্রান্ত। সরল মানুষকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়।

বই মেলায় একটা বই বের হওয়ার কথা ছিল। গত কয়েক বছর প্রতি মেলায়ই বের হয়েছে। এক ধরনের একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আরেকটা বই বের হবে জুলাই-আগস্টে, সেই বইর প্রকাশক জানিয়েছেন। যে বইটা প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল সেটা প্রকাশ হয়নি। কেন হয় নি আমি জানি না। প্রচ্ছদ হয়েছে। কিন্তু ২৩ তারিখ পর্যন্ত কোন প্রুফ কপি হাতে না পাওয়ায় ২৪ তারিখ প্রকাশকের সহকারীকে বই বের করতে না করে দিয়েছি। আমি “না” না করলেও হয়তো তারা বইটি প্রকাশ করতেন না বা করতে পারতেন না। প্রকাশক আমার ফোন ধরেননি। তিনি যদি মেলার প্রথম দিকেও না করতেন বা এ সময়ও ফোন করে “কোন কারণ” দেখাতেন তাহলে অপমানিত বোধ করতাম না। তার সীমাবদ্ধতা তৈরি হতেই পারে। ২০১৬ মেলাও এমন হয়েছিল। ফাইনাল প্রুফ দেখার পরও বই প্রকাশ হয়নি। অবশ্য সেটার একটা কারণও ছিল। ক্ষমতাধর একজনকে নিয়ে কিছুটা লিখালিখি করেছিলাম। সম্ভবত...। পরে গত জুলাইয়ে উপন্যাসটি প্রকাশ হয়। কবিতার বই মেলাই হয়েছিল। কিন্তু এবার...।

কে জানে আগামী কয়েক বছরের জন্য এবারই হয়তো আমার শেষ মেলায় আসা। সেই কারণে এবং প্রকাশকের আচরণে মন কিছুটা খারাপ।

এবার মেলা এক ধরনের ভালয় ভালয় শেষ হচ্ছে। আরও ২/১ দিন আছে। বেচা কেনা খারাপ না। এবার কেউ কোপ খেয়ে মরলো না, কোন প্রকাশক গ্রেফতার হলো না, কোন স্টলে আগুন ধরলো না। কিন্তু বই নিষিদ্ধ হয়েছে। ভব’র চটি বইটি গত বছরের। নিষিদ্ধ হলো এ বছর! দুই/তিন বাক্যের ছড়া। বইটি কেন নিষিদ্ধ হলো বুঝি নাই। সবচেয়ে অবাক বিষয় এ নিয়ে কেউ কোন কথা বললো না। তাহলে সব ঠিক আছে?!! আমি ভুল বুঝেছি? এবার নাকি মেলায় মেলায় অভিজিৎ রায়ের কোন বই পাওয়া যাচ্ছে না। আমি যতদূর জানতাম তিনি বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী লিখা লিখতেন। ধর্মীয় উস্কানিমূলক কিছু লিখতেন না। তাহলে? মেলায় কি ধর্মকে বিকৃত করে, নারীকে ভোগ্য বস্তু বানিয়ে যে ধর্মীয় বইগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে কোন ব্যবস্থা হয়েছে? ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদেরকে ধর্ম থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার কি সুন্দর কৌশল শান্তির বদলে উগ্রবাদ, আলোর বদলে অন্ধকার। এ অন্ধকার থেকে বের হওয়ার উপায় কি?

বইমেলাটা আসলে চেতনার মেলা। এ পুরো মাস জুড়ে জেনে হোক-না জেনে হোক, সচেতন আর অবচেতন ভাবেই হোক বাঙালি একবার হলেও বাঙালি হয় পরানের গহীন থেকে। বই মেলায় অনেকে নিছক ঘুরতে আসেন। হয়তো বই কিনেন না, কিনতে পারেন না । কিন্তু আসেন তো। রিক্সা, সিএনজি, বাস ভাড়া খরচ করেই আসেন । আসুক। চেতনার জায়গা থেকে কেউই শূন্য হাতে যায় না। হাতে না থাকুক বই কিন্তু মনে কিছু থাকেই। ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ এ তিন মাস সঙ্গত কারণেই বাঙালি তার মুকুটদের বেশি মনে করে, বেশি মনে করে “বাংলাদেশ”, “বাঙালিয়ানা” ভাব/শব্দটা। বই মানে তো আলো।

একুশের বই মেলা আর দশটা বই মেলার মতো না। এটা প্রথমতো চেতনার মেলা। এ মেলায় এসে এবার বাঙালিরা বিভ্রান্ত হয়েছে, ভুল শিক্ষা নিয়ে গিয়েছে, কেউ বা সন্তানকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টা শিখাতে গিয়ে চুপিসারে কেটে পড়ে মেলায় ঘুরাঘুরি করেছেন। মেলা প্রাঙ্গণে একটা স্থায়ী শহীদ স্মৃতি সৌধ আছে। মেলা না হলেও এ মাস এবং আগামী মাসে স্মৃতি সৌধটা আদর যত্নে থাকার কথা। মেলা যেহেতু তাই আদর যত্ন হওয়ার কথা “জামাই আদর”। ফাল্গুনের মেঘেরা উড়ে উড়ে যায়। সামনেই কৃষ্ণচূড়া। মেঘেরা কখনও কখনও দাড়িয়ে বইর স্টলের আড়ালে পড়া স্মৃতি সৌধটা খুঁজে দেখে। তারপর কি অন্য কোন শহরে গিয়ে বরষা নামাবে। তারা অবিবেচক নয় বলেই এখানে বর্ষা নামায় না এখন। স্মৃতি সৌধটি শুধু আড়ালেই নয়, ক্লান্ত মানুষ, পুলিশ ও ফায়ার বিগ্রেডের বিশ্রামের টুলও বটে। মন্দ কি? যারা এ দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন আজ তাদের সম্মানে বানানো স্মৃতি সৌধকে ডাস্টবিন, চেয়ার হিসাবে ব্যবহার মেনে নিয়ে জীবনের অন্যপার থেকেও বাঙালির সেবা করে যাচ্ছেন তারা। আহ! তুমি আধপেটা মুক্তিযোদ্ধা। আহ! মায়ের আদরে ছেলে তোর লাশ খেল নেড়ি কুত্তায়, মৃত্যুর পর সম্মান সৌধও খেয়ে নিচ্ছে কেউ? কে খায়? টি. এস. সি দিয়ে মেলায় ঢুকতেই রাজু ভাস্কর্যের গলায় দড়ি ঝুলানো। সাধারণ মানুষ চেতনা, অবুঝ ভালোবাসা থেকে এসে দড়ি বাঁধা দেখে, স্মৃতি সৌধকে ডাস্টবিন ও বসার জায়গা হতে দেখে মানুষের অবচেতনে কি বোধ ঢুকে গেল?

এ মাসে এসব কি হলো? আগে চাপাতি খুন করে গেছে একজন একজন করে। এ বছর খুন হচ্ছে জাতি, আর্সেনিক বিষে খুন। আহাজারি করার মতো বোধও আমাদের নেই।

মেলাটা সুন্দর হোক । তার চেয়ে সুন্দর, শক্ত হোক মেলার ভিতরের মেলাটা। এমন আশা করেই পদ্মা-যমুনা অনেক শীর্ণ হয়েছে যুগে যুগে কালে কালে। এন্টিবায়োটিক আসলে শেষ পর্যন্ত ভালো না।

জহিরুল হক বাপি, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ