আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কিছু প্রশ্ন ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা

আরশাদ খান  

প্রকৃতির নিয়মে জন্ম ও মৃত্যুর ঘনঘটা একটি অতিসাধারণ বিষয়। জন্মের শুভক্ষণে উচ্ছ্বাস ও উচ্ছলতার অভিনিবেশ আমরা অনাদিকাল হতে অবলোকন করে আসছি। যদিও কোন একযুগে, কোন কোন ধর্মে, বা কোথাও কোথাও কোন এক বিশেষ যেমন মেয়ে শিশুর জন্মকে শুভেচ্ছার চাদরে মোড়ানো হত না। পরিবর্তন অবশ্য এসেছে-মেনে নেয়ার। মানবিক মূল্যবোধগুলোর পরিবর্তন, না-বাচক বা হা-বাচক যাই বলুন না কেন। মনে রাখতে হবে সব পরিবর্তনই কিন্তু গ্রহণযোগ্য নয়।পরিবর্তনের ঘোড়দৌড়ে মানবিকবোধের নিম্নগামিতা প্রবহমান।

আমরা অবশ্য এতে নির্বিকার থাকার পথেই আছি এবং শ্রেয়তর পন্থা হিসেবে আশ্রিত থাকার উদগ্র ইচ্ছাই প্রকাশ করছি। সময়ের হাত ধরে পথচলা, তার অবয়বে নিজেকে মেলানোই এখন মুখ্য। যখন সময়কে জীবনের মাঝে খুঁজতে চাই তখনই তো সমস্যার জন্ম হয়-হয়ত খেয়াল করি না। উল্টো করে যদি বলি, জীবনকে সময়ের মাঝে খুঁজি না কেন? তখনও কি সমস্যা?

তাহলে পরিত্রাণ? নিশ্চয়ই আছে। চলমান সংস্কৃতি কি সবসময় চলমান? নাকি সময়ই তাকে ভেঙ্গে চূড়ে নতুন করে গড়ে। আমাদের পূর্বপুরুষদের চর্চিত ও চর্বিত আচার-আচরণ, চাল-চলন,পোশাক-আশাক, নাওয়া-খাওয়া ইত্যাদি কি একই ভঙ্গিতে, রূপে ও ঢঙ্গে চলমান ও সঞ্চরণশীল। নিশ্চয় নয়। যদি তাই হতো তাহলে পরিবর্তনই বা কি এবং কেন?

আসলে স্বার্থকেন্দ্রিকতার মাত্রার পরিবর্তনই সার্থক হয়ে ওঠছে দিনে দিনে, যেখানে ব্যক্তি-স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে সর্বাংশে। সামষ্টিক কল্যাণকামী স্বার্থ ভঙ্গুর রূপ পরিগ্রহ করছে যদিও সার্থকতার ঐতিহ্যে যা পূর্বতন সমাজব্যবস্থায় কোন এক সময়ে হিমালয় তুল্যমূল্য ছিল। তাহলে কারা তখন নেপথ্যে থেকে মানবিক গুণের চর্চায় নিমজ্জিত ছিল।

অন্যের ব্যথা, অনুভূতি অনুভবে সচেতন ও সক্রিয় ছিল। যতটা জানি কবি, সাহিত্যিক, সমাজ-সংস্কারক, শাসক, সংস্কৃতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও আরো অনেকে। রক্তমাংসেরই মানুষ তো তারাও ছিল। তখন মানবিক বিপর্যয় ছিল না তা তো নয়। ধর্মে-ধমে, গোষ্ঠীতে- গোষ্ঠীতে, বর্ণে-বর্ণের, জাতিতে- জাতিতে ভেদাভেদের নানামাত্রিক ভিত্তি আর তার উপর যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠেছিল তখনকার সমাজ ব্যবস্থায়। কিন্তু কালের পরিক্রমায় পরিবর্তনের সূচনা আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় দ্রুতগতিতে রচিত হয়।

অণু পরমাণুর বিশ্লেষণ থেকে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনের গঠন কাঠামো তো এখন অজানা নয়। তাহলে বিপর্যয়ের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি মূল্যবোধের কর্ণকুহরে আঘাত হানছে কেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের বোঝাপড়ার অনুভূতির প্রখরতার গঠন ও বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নিশ্চয়ই থমকে নেই। বৈষম্য, ক্রোধ, ঘৃণা, হতাশা এসব পঙ্গপালের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কেন। এখানে তো ভালোবাসা, মায়ামমতা, স্নেহ, প্রেম-প্রীতি ইত্যাদির সমুদ্রে প্রতিটি মানবিক চেতনার অবগাহন করার কথা ছিল।

কেন হচ্ছে না। নিশ্চয়ই কোথাও একটি বিশাল শূন্যতা বিরাজ করছে। শিক্ষাব্যবস্থা, আধুনিকতা, উন্নয়ন, পারিবারিক স্নেহ- মমতা- এসব কি মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের হাতিয়ার নাকি সেসব আন্তরিকতাহীন প্রতিশ্রুতি-মাত্র।

হলি আর্টিজনের ঘটনা কিসের আলামত? রাজিবের পায়ুপথে পাম্প নজেল দিয়ে বায়ু প্রবেশ করে হত্যা কিসের ইঙ্গিত? মানবিক শিক্ষায় প্রজ্বলিত মনন তো কখনও হিংস্রতা, ধৃষ্টতা, ঘৃণা, ক্রোধ নিয়ে বেড়ে ওঠার কথা না। অথবা সাম্প্রদায়িক চেতনার অস্থির আগ্রাসন কেনই বা বারে বারে আমাদেরকে অসহায়ত্বের অচলায়তনে আবদ্ধ করে রাখছে।

অসহনশীল আচরণ, পরমতে অসহিষ্ণুতা, পরশ্রীকাতরতা, পরনিন্দা চর্চা- এসব কোন শিক্ষা ব্যবস্থা ও কোন সমাজের ফসল? তাহলে আমরা কি সঠিক বীজ বুনছি না, নাকি আমাদের হৃদয় মাঝারের উর্বরতা ক্রমহ্রাসমান যা সুস্বাস্থ্য মেধার বিকাশে প্রতিবন্ধকতা।

হত্যা, খুন, গুম, ধর্ষণ, বিদ্বেষ ইত্যাদি তো পাশবিক পরিচয়ের বর্তিকা-আধুনিক মানস গঠনের অনুষঙ্গ নয়।

তাহলে মানবিক বর্তিকার আলোর ক্ষমতা কি তাতে মিলিয়ে যাচ্ছে। এটি হলে তো আলো থেকে অন্ধকারেই ফেরা হয়। তাহলে অগ্রগতির সংজ্ঞা কি? চোখ দিয়ে তো মনকে দেখা যায় না মনের চোখে তাকাতে পারলে মনের অনুভূতির স্পর্শে আসা যায়। আর পরিবর্তন সেখান থেকেই শুরু হয়।

নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন সমাজের পরিবর্তনকে প্রকৃত অর্থে নির্দেশ করে না যেমনটি একটি দেশের মাথাপিছু আয় প্রত্যেকের আর্থসামাজিক অবস্থার হা-বাচক পরিবর্তনকে নিশ্চিত করতে পারে না। তাই মানবিক বিবেকের অনুভূতির শুভদয় ও তা বিস্তারের মাধ্যমে ব্যক্তি,সমাজ ,সবিশেষে জাতির বিবেকের মানবিক পরিবর্তন আনয়ন করে একটি সাম্য, শোষণহীন, অসাম্প্রদায়িক ও ঐক্যের সমাজ গঠনে ভূমিকা এখন সময়ের দাবী।

নৈতিক ও মানবিক অবক্ষয়ের কারণ বিশ্লেষণ ও তা প্রতিকারে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।সুস্থ সমাজ গঠনে আসুন আমরা সবাই এগিয়ে আসি।

আরশাদ খান, ব্যাংকার, সংস্কৃতিকর্মী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ