প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এমদাদুল হক তুহিন | ১৩ এপ্রিল, ২০১৭
বৈশিষ্ট্যগতভাবে বাঙালি কখনই পুরো ধার্মিক নয়। আবার পুরোটা সাংস্কৃতিক মনস্কও নয়। বড় অংশটিই ধর্ম এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনে মিলেমিশে থাকতে চায়। এখানে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কখনও ধর্ম বড় হয়ে উঠেছে, আবার কখনও সংস্কৃতি।
প্রকৃতপক্ষে ধর্ম ও সংস্কৃতি সাংঘর্ষিক নয়। কতিপয় বকধার্মিক বরাবরই সংস্কৃতিকে ধর্মের প্রতিপক্ষ মনে করে, এবং সমাজে সংস্কৃতির নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরে। অথচ প্রবল সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিও পশ্চিমে সেজদা দেয়। নামাজ পড়ে। রোজা রাখে। উলুধ্বনি দেয়। পূজা করে। বিপরীতে বকধার্মিকেরা কেবল ধর্মকে বিক্রি করে। কাজকর্ম না করেই ধর্মের মন্ত্র শুনিয়ে করে আয় রোজগার। অর্থাৎ ধর্ম যেমন নিজের উপার্জনে ব্যবহৃত হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্র রাজনীতিতেও।
কেবল জামায়াতে ইসলামই নয়, ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এ দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই। তারা ছলেবলে কৌশলে নিজেকে ধার্মিক প্রমাণে ব্যস্ত। বাসায় পবিত্র কোরআন পড়ছেন, সেই ছবিও ভাইরাল হচ্ছে। মসজিদে যাচ্ছেন কিংবা মসজিদের বারান্দায় এমন ছবিও প্রকাশিত হচ্ছে। আর মক্কা মদিনায় পবিত্র হজব্রত পালনের ছবি প্রকাশ করার ঘটনা বহুবছর ধরেই চলে এসেছে। এখনও হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতেও হবে; হবেই। কেননা ধর্মহীন রাষ্ট্রব্যবস্থাও অচল।
বিপরীতে সংস্কৃতির আলোহীন সমাজ আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের মতোই অন্ধকার। তাই ধর্ম ও সংস্কৃতির সাম্যাবস্থা অতি আবশ্যিক। শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, রাষ্ট্র জীবনেও। কিন্তু যখন একদিকে হেলে পড়া হয় তখন সমাজে আর ভারসাম্য থাকে না।
বর্তমানে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিও ধীরে ধীরে ইসলামিক দলগুলোর দিকে হেলে পড়ছে। হেফাজতে ইসলামের দিকে প্রবল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে। তাদের মতাদর্শ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে। তারা একের পর এক এ দেশীয় সংস্কৃতি বিনষ্টের হুমকি দিচ্ছে। হয়তো আরও কোন গভীর থেকে হাইকোর্টের সামনে ভাস্কর্য স্থাপন ও অপসারণ নিয়ে নতুন করে ধর্মানুভূতির কলকাঠি নাড়া হয়েছে। এবং রাষ্ট্রকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
ভাস্কর্য অপসারণ প্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত জয়ী হেফাজতে ইসলাম। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কথা বলেছেন হেফাজতি সুরে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রধানমন্ত্রীর এই নমনীয় মনোভাব আমাদের আশাহত করে। বিপর্যস্ত করে।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যাকে শেষ ভরসার আশ্রয় বলা হয়, তার মুখের এই বক্তব্য আমাদের বিষাদগ্রস্ত করে তুলে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী খালেদার ছবি নিয়ে যেমন কটাক্ষ করা হয় তেমনি অদূর ভবিষ্যতে হয়তো হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীকে পাশে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নিয়েও কটাক্ষ হতে পারে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর মায়া, মমতা আমাদের আপ্লুত করে। তাঁর দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব আমাদের গর্বিত করে। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমাদের বারবার স্বপ্ন দেখায়। সেই আশা জাগানিয়া স্বপ্নের সঙ্গে ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে নৈরাশ্য। প্রবল নৈরাশ্যবাদ গ্রাস করছে প্রগতিশীল মুক্তচিন্তকদের। তারা ধীরে ধীরে আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
আস্থা রাখুন শব্দটি সমাজে এখন হাস্যকর বুলিতে পরিণত হয়েছে।
তবে প্রগতিশীল অংশ কখনও বৃহৎ ঐক্য গড়ে তুলতে পারে নি। আওয়াজ তুলতে পারে নি জোরে। দিতে পারেনি আল্টিমেটামও। কেবল সমালোচনা শেষে তারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ক্রমশ মতভেদে বিভক্ত হয়ে তারা সংকীর্ণতায় ডুবছে। জঙ্গিবাদের উগ্র আগ্রাসন, মৌলবাদের বৃহৎ অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে মানুষ দেশ নিয়ে স্বপ্ন দেখাও ভুলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি বাঁকা মেরুদণ্ড আরও হেলছে। অথচ সময় ছিল সোজা হয়েছে দাঁড়ানোর। টানটান। সংস্কৃতির অনিন্দ্য সুন্দর চিত্রে রূপায়িত হতে পারতো লোকজ গ্রাম বাংলা। চোখ খুলে ফিরিয়ে আনা যেত। দেখা যেত সুন্দরের এ কী রূপ!
সময় এখনও হাতে আছে। রাষ্ট্র একক সত্ত্বা নয়। রাষ্ট্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সত্ত্বার সংমিশ্রণ। পাল্লা যে দিকে ভারি হবে, রাষ্ট্রযন্ত্র হেলবে সেদিকেই। তাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের পাল্লা আরও ভারি করে তুলতে হবে। এই দেশে যতদিন না- সংস্কৃতির নবজোয়ার শুরু হচ্ছে, ততোদিন কাঠমোল্লাদের পাল্লাই ভারি হয়ে থাকবে। তাই এখনই সময় রুখে দাঁড়ানোর; আঁতাত কিংবা হেলে পড়ার বিরুদ্ধে। ধাক্কা দিয়ে হলেও সোজা করে দাঁড় করানো রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশটাকে টেনে উপরে তুলছেন। এটা প্রশংসনীয়। সারা বিশ্বই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে অবাক বিস্ময়ে আমাদের এও দেখতে হয়- হাসিনাকে ধর্মের সার্টিফিকেট দিচ্ছেন আহমদ শফী! এরচেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। অথচ এই শফী-ই কিছুকাল পূর্বে নারী সম্পর্কে কি বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন, জাতি তা ভুলে যায়নি। মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনার পর, শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর- হেফাজত নতুন করে হুমকি দিয়েছে। সারা দেশ থেকেই (ভাস্কর্য) অপসারণ করতে হবে।
অথচ এই দেশ যেমন মসজিদের দেশ, তেমনি ভাস্কর্যেরও।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য