প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জুয়েল রাজ | ০৪ জুন, ২০১৭
ধর্মের অপব্যাখ্যা আর উগ্রবাদ উসকে দিয়ে হেফাজত ইসলাম নামক গোষ্ঠী দিন দিন দানবে পরিণত হচ্ছে। এদের এখনি রুখতে হবে। ধর্মের দোহাই দিয়ে দিন দিন রূপ নিচ্ছে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবে। আর হেফাজতকে এই দানবে পরিণত করার কাজটা করে দিচ্ছে বাংলাদেশের মিডিয়া হাউজগুলো। যখন যা ইচ্ছে হলো তারা ঘোষণা দিয়ে দিল, মিডিয়াও সেই ঘোষণা নিয়ে হামলে পড়ে। সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ কেউ আর পাত্তা পায়না, মিডিয়ার কাছে। দেখলে মনে হয় মিডিয়া বিষয়গুলোকে উসকে দিচ্ছে। তথাকথিত টিআরপি কিংবা বাণিজ্যের জন্য।
২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের কাহিনী শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমার মতে হেফাজতকে পুনর্জন্ম দিয়েছে মিডিয়া, এখনো মিডিয়াই বাঁচিয়ে রাখছে এদেরকে। সময় হয়েছে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের এই দানব কে রুখে দেয়ার।
মেরী শেলীর বিখ্যাত উপন্যাস ফ্রাঙ্কেনস্টাইন: অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস, কাহিনী সংক্ষেপ - এক জার্মান গবেষক, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নিরলস গবেষণার মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরনের বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে সমর্থ হয়। যার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির মধ্যে প্রাণসঞ্চার করা সম্ভব। সে তার এই পরীক্ষাটি এক মৃত ব্যক্তির উপর করলে মৃত ব্যক্তি ঠিকই বেঁচে উঠে, কিন্তু পরিণত হয় এক ভয়ঙ্কর দানবে। প্রচণ্ড শক্তিশালী এই দানবটি দেখতে কুৎসিত। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ভয় পেয়ে এই দানবের প্রতি অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করলে দানবটি হিংস্র হয়ে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের সংকল্প করে। সে বনে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তার প্রতিশোধ সে শুরু করে ফ্রাংকেনস্টাইন এর সহকারী ড. নীল ও একজন আয়া হত্যার মাধ্যমে। এরপর সে হত্যা করে তার সৃষ্টিকর্তার ভাইকে। তখন সে বনে আশ্রয় নেয় এবং শত শত সাধারণ লোক হত্যা করে। সে ফ্রাংকেন এর বিয়ের রাতে আবারো হত্যা করে তার স্ত্রীসহ তার পরিবারের বাকী সদস্যদের। এমন কী সে এক পর্যায়ে স্বয়ং তার সৃষ্টিকর্তাকেও মেরে ফেলে।
আজকের মিডিয়া যে দানবের জন্ম দিচ্ছে মিডিয়া এবং সরকার যেভাবে হেফাজতের দাবিগুলোকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে, সেই সুযোগে হেফাজত ইতোমধ্যে সুলতানা কামাল থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেয়ার মতো সাহস সঞ্চয় করেছে। তাদের এই হুমকিকে আপাত দৃষ্টিতে হয়তো আমরা খুব হালকাভাবে দেখছি। আসলেই কি বিষয়টি হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ আছে? আজকের হেফাজত শুধু হেফাজত না, তাদের মদদ দিচ্ছে আওয়ামী বিরোধী সব শক্তি। এই একটা জায়গায় বাংলাদেশে একটা অদৃশ্য ঐক্য আছে।
জামায়াতে ইসলামি, বিএনপির মতো সুসংগঠিত দল যেখানে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে হালে পানি পায় নি, সেখানে কোথাকার কোন হাটহাজারী মাদ্রাসাভিত্তিক একটা অরাজনৈতিক দল বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল! হেফাজত নিয়ে বিপরীতমুখি ভাবনা ও আছে। হঠাৎ করে ভুঁইফোড় একটা সংগঠনের এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠার পেছনে আওয়ামী লীগেরও হাত আছে।
হেফাজত ইসলাম আওয়ামী লীগের হাতের পুতুল, আওয়ামী লীগই হেফাজত ইসলামকে নিয়ে খেলছে। রাজনৈতিকভাবে আপাত দৃষ্টিতে হেফাজত মোকাবেলা করে কিংবা চোর পুলিশ খেলে আওয়ামী লীগ হয়তো আপাত দৃষ্টিতে ফায়দা নিচ্ছে, কিন্তু বাঙালি জাতির ললাটে রেখে যাবে কলঙ্ক চিহ্ন। রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে খেলতে বল আওয়ামী লীগের ঘরে নাও থাকতে পারে। ফসকে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কারণ আওয়ামী লীগ করা লোকজন বা এর নেতাকর্মী যখন হেফাজতের সুরে কথা বলে, মূর্তি আর ভাস্কর্যের পার্থক্য নিরূপণ করতে ব্যর্থ হয়। সুলতানা কামালের বক্তব্যের কিছু অংশকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে হেফাজতের সাথে সুর মিলিয়ে বিচার দাবি করে তখন সেই আশংকা আরও প্রকট হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ, সংবিধান, জাতীয়তাবাদ। সেই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই যদি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার সাথে আপোষ করে আওয়ামী লীগ, ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না। আমাদের চোখের সামনে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসাবে আছে আফগানিস্তান। এই বিষয়টি যেন ভুলে না যাই। আমি নিজেও বারবার বলি বাংলাদেশ কখনো আফগানিস্তান হবে না। এই দেশের মাটি জল ইতিহাস ঐতিহ্য তা হতে দেবে না। কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে সেই সম্ভাবনা বদলে আশংকায় পরিণত হয়েছে।
গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তাঁরা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাংবিধানিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। এখন জেনেশুনে যখন আপনি হেফাজতের কাছ থেকে বয়ান শুনতে যাবেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতির ব্যাখ্যা শিখতে যাবেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ বাঙালি জাতীয়তাবাদ নাকি ইসলামী জাতীয়তাবাদ সেই ছবক নিতে যাবেন, এসো হে বৈশাখ গান হিন্দু লেখকের অগ্নিপূজার গান কি না সেই বিতর্ক জানতে যাবেন, ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য না জানা মানুষদের আপনার মিডিয়াতে নিয়ে আসবেন বিতর্ক করতে তখন ভালো কিছু আশা করা যায় না।
আজকে হেফাজতকে পণ্য করে মিডিয়াগুলো বাণিজ্য করছেন, কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে হেফাজত তাদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু সরকারের উপর দায় চাপিয়ে উদ্ধার পাওয়া যাবে না। কোন মিডিয়া কি আজকে পর্যন্ত কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কেউ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে হেফাজতের নেতাদের ভূমিকা কি ছিল, আফগানিস্তান, ইরাক যুদ্ধ থেকে ফেরত এদের নেতারা কি করছে?
গণমাধ্যমের দায়িত্ব কি শুধুই সংবাদ প্রচার করা নাকি দায়িত্বশীলতার ব্যাপারটাও জড়িত সেটি বিজ্ঞ মিডিয়া কর্তারাই ভাল বলতে পারবেন। ১৩ দফা বাস্তবায়ন হলে আপনাদের বাণিজ্যের পরিণতিটুকুও মাথায় রাখবেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য