আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আওয়ামী লীগ: ২০ বছর আগে-পরে

আব্দুল করিম কিম  

২০ বছর আগের বাংলাদেশের কথা কি মনে আছে সবার? ১৯৯৭ সাল। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের মাত্র এক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। নতুন সরকারর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে।

১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দিনের একটি পরিবর্তন মানুষের সমস্ত স্বত্বাকে আলোড়িত করেছিল। আর তা হল, বাংলাদেশ টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার। সে ভাষণ যতবার দেখানো হত মানুষ ততবার মুগ্ধ হয়ে দেখতো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানগুলো শুনেও অনেকের চোখ জলে ভরে যেতে দেখেছি।

সরকার গঠনের পর বিরোধী দল হিসাবে বিএনপির নানা হঠকারিতা সত্বেও সংসদের স্পিকার হিসাবে সিলেটের হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীকে মনোনীত করা ও রাষ্ট্রপতি হিসাবে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে বঙ্গভবনে অধিষ্ঠানকে শুভযাত্রা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। বিরোধীদলের সংসদে যোগদান ও বিভিন্ন সংসদীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়া গ্রামেগঞ্জে আগ্রহের জন্ম দেয়। মানুষ সে সময় টিভিতে নিয়মিত সংসদ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতো। টিভিতে দেখার সুযোগ না থাকলে রেডিওতে সংসদ অধিবেশন শুনতো। বিরোধীদল ওয়াকআউট করলে চায়ের কাপে ঝড় উঠতো। আসলে দেশটা গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে ভেবে সবাই তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে।

গ্রামের মানুষের কাছে ডেপুটি স্পিকার আব্দুল হামিদ সাহেব খুবই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সংসদ কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আর বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী'র বাদানুবাদে দুই শিবিরে বিভক্ত টিভি দর্শকেরা ব্যাপক বিনোদন উপভোগ করতো। গ্রামেগঞ্জে দেখা যেত উদার মন-মানসিকতার বয়স্ক মানুষেরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। তরুণেরা সতর্কতার সাথে আওয়ামী লীগকে পর্যবেক্ষণ করতো। দেশে তখন সাংস্কৃতিক জাগরণ শুরু হয়েছে।

সত্তরের প্রজন্ম জন্মের পর থেকে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ের অপশাসনের গল্প রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শুনে এসেছে। এদের বড় অংশ প্রথম ভোটার হয়ে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রতি আস্থা প্রকাশ করে। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের মূল কাণ্ডারি বানাতে গিয়ে রাজপথে, সংসদে ও সংবাদপত্রে তর্ক-বিতর্কের এতো ক্ষেত্র খুলে দেয় যে মুক্তিযুদ্ধের পরের প্রজন্ম সে সব থেকে সত্যটা ঠিকই বের করে নেয়। এতে লাভ হয় আওয়ামী লীগের।

নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারি দলটির প্রতি এক ধরনের বেদনা অনুভব করে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে রাতের আঁধারে সপরিবারে হত্যা ও সেই হত্যার বিচার না করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সম্পর্কে অবহিত হয়ে শেখ হাসিনা'র জন্যে। একি সময়ে নতুন প্রজন্মের আরেকটি অংশ ভোট দেয়ার উপযুক্ত হয়ে মাগুরার উপনির্বাচন প্রত্যক্ষ করে। এরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদ ও রাজপথে গড়ে ওঠা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেয়।

শেখ হাসিনা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। পাশাপাশি তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রতি প্রশাসনের বড় অংশের অনাস্থায় গড়ে ওঠে জনতার মঞ্চ। ফলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়ে খালেদা জিয়াকে প্রথম পরাজয় মেনে নিতে হয়। আর আন্দোলনে জয়ের পাশাপাশি শেখ হাসিনা নির্বাচনেও বিজয় লাভ করে বাংলাদেশে নতুন স্বপ্নের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন। নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ঐক্যমতের সরকার। তখন থেকেই নতুন প্রজন্মের আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে পরিচয় হওয়া শুরু।

এ সময় তরুণদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সাদাসিধে আটপৌরে চালচলন নিয়ে প্রশ্নাতিত প্রশংসা করতে দেখেছি। আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমদ-এর বাগ্মিতা নিয়ে দেখেছি মুগ্ধতা। আব্দুস সামাদ আজাদ-এর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিচক্ষণতা নিয়ে চলতো বিস্তর আলোচনা। নতুনদের মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরী'র পরিচ্ছন্ন ইমেজ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর-এর ব্যক্তিত্ব আলোচিত হত। ঢাকা ও চিটাগাং সিটি কর্পোরেশন-এর দুই নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়েও মানুষের ছিল ব্যাপক প্রত্যাশা। পাশাপাশি হাজি সেলিম, জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, মোফাজ্জল হোসেন মায়াকে নিয়ে ছিল সমালোচনা।

২০ বছর পেছনে ফিরে গিয়ে আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সে সময়ের আওয়ামী লীগ সরকারকে মেলাতে গিয়ে দেখি ২০ বছর আগের আওয়ামী লীগ দল ও দেশকে নিয়ে এগিয়েছিল। ২০ বছর পর দলকে পেছনে ফেলে দেশ ও নেতাকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পেছনে পড়ে আছে কিংবদন্তির ঐতিহ্যবাহী দলটি। দলের সাথে সাথে আদর্শগুলোও পেছনে পড়ে যাচ্ছে।

আব্দুল করিম কিম, সমন্বয়ক, সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও প্রকৃতি রক্ষা পরিষদ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ