প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
চিররঞ্জন সরকার | ০৬ জুন, ২০১৭
খবরটা সকালেই কোনো এক অনলাইন দৈনিকে পড়ছিলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান মারা গেছেন।
খবরটা পড়ে কেমন যেন একটা অনুভূতি সৃষ্টি হলো! কোনো অভিযোগ, বিচার ও শাস্তির মুখোমুখি না হয়েই এই ভদ্রলোকও শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন? বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ভদ্রলোক অনেক বড় একটা ক্ষত সৃষ্টি করেছিলেন!
এরশাদের সঙ্গে দুর্নীতি মামলা নিয়ে গোপন কথোপকথন ও ঘুষ কেলেঙ্কারির দায়ে বিচারপতি লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। অবস্থা বেগতিক থেকে তিনি পদত্যাগও করেছিলেন। এই ভদ্রলোকই পরবর্তীকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ারও সুযোগ পেয়েছিলেন! কি বিচিত্র মানুষের ভাগ্য!
মনে পড়ে ২০০১ সালের কথা। তখন আমি সংবাদে সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করি। প্রতিদিনই কিছু না কিছু লিখতে হয়। সেই সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বিচারপতি লতিফুর রহমানকে নিয়েও কত লেখা লিখেছি! সেসব লেখার বেশিরভাগটাই ছিল সমালোচনামূলক। কারণ সাংবাদিক হিসেবে আমার বিবেচনায় তিনি দেশের জন্য ভালো কিছু করেছেন বলে মনে করি না!
২০০১ সালের ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ৭.৩০ মিনিটে শপথ গ্রহণের কিছুক্ষণ পরই ১৩ সচিবকে একসঙ্গে বদলি করে বিতর্কের সূত্রপাত করেন। এরপর পুরো প্রশাসন যন্ত্রকে তিনি তছনছ করেন। এমনকি মৃত-ব্যক্তিকেও বদলি করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন।
তিনি খুব দ্রুতই বিএনপিপন্থী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করে আবারও বিতর্ক সৃষ্টি করেন। খুলনায় এক সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া সেনা মোতায়েনের দাবি জানানোর এক ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হাওয়া ভবনের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখা যায় তার সরকারের কর্মকাণ্ডে। যেসব স্থানে আওয়ামী লীগকে দৌড়ের উপর রাখলে বিএনপি প্রার্থীরা ভালো করবে, সেসব জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-অত্যাচার চালানো হয়।
নির্বাচনের আগে তিনি সারা দেশে নিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আর সমর্থকদের ঠেঙিয়ে ঘর ছাড়া করলেন। নির্বাচনের দিন অনেক জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পর্যন্ত কোমরে দড়ি দিয়ে পুকুরে ডুবিয়ে রাখলেন। দুপুর হওয়ার আগেই কেল্লা ফতে। সন্ধ্যার আগেই বিএনপি-জামায়াত বিজয় মিছিল বের করলো অনেক স্থানে।
তার শাসনামলে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর চিহ্নিত হয়ে থাকল একটি কালোদিন হিসেবে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা শুরু হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়ানক অরাজকতা শুরু হয়ে গেলো! লতিফুর রহমান ও তার সঙ্গীরা হাত গুটিয়ে বসে রইলেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সবাইকে নিষ্ক্রিয় করে দিলেন।
আর দেশব্যাপী চলল সীমাহীন তাণ্ডব। অসংখ্য নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হলো অন্য দলে ভোট দেয়ার অভিযোগে। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ সবই চলল বিরামহীন। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জীবনে নেমে এলো ঘোর অমানিশা! অসংখ্য ধর্ষিত পূর্ণিমার আর্ত-চিৎকারে সেদিন আকাশ ভারী হয়ে উঠেছিল!
এই খুন, ধর্ষণ আর অরাজকতার দায় কি একটুও বর্তায় না সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর? সেই সময় শত শত মানুষকে খুন করা হয়, পঙ্গু বানিয়ে দেওয়া হয়, ধর্ষণ করা হয়। এই খুন ও ধর্ষণগুলোর পরোক্ষ দায় কী বিচারপতি লতিফুর রহমানের উপর ছিটেফোঁটাও বর্তায় না?
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার দায় কী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নয়?
হায় আইন, একটা খুন করলে ফাঁসি হয় অথচ অসংখ্য খুনের পরোক্ষ দায় থেকে একজন মানুষ কেমন দিব্যি পার পেয়ে যান!
তার মৃত্যুতে অনেকে গভীর শোকও ব্যক্ত করেন!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য