প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ২৯ জুন, ২০১৭
ভারতে উগ্রবাদীরা এক মুসলমান কিশোরকে মারলো। বাংলাদেশে ধর্ষক, খুনি এক হিন্দু ছেলেকে মারলো। কিছু মানুষের কথা শোণে মনে হচ্ছে দুই জায়গায় কোন মানুষ মরে নাই, দুইটা ধর্মের লোক মরছে। দুই কারণই পরস্পরের সাথে অতুলনীয়। এবার আপনাদের ঠিক ধরে আসেন একটা হিসাব মিলিয়ে দেন।
এ জেহাদ-জেহাদ খেলায় আপনার মন্দির ভাঙেন। ধরেন প্রতিশোধস্বরূপ ভারতে মসজিদ ভাঙা শুরু করলো। কি করবেন? ভারতে ১৩০ কোটি জনগণের ১৭ কোটি মুসলিম। বাংলাদেশে ১৬ কোটি। ১৭+১৬= ৩৩ কোটি। দুই দেশের মুসলমান মিলিয়েও তো রক্ষা করতে পারবেন না (যদি ভারতীয় মুসলিমরা যোগ দেয় আপনাদের সাথে।)
বাংলাদেশে একটা হিন্দু ধর্মের কিশোরকে মারা হয়েছে। খুন করা হয়েছে। আপনারা পৈশাচিক আনন্দে মত্ত। ঐ খুনি কিন্তু হিন্দু বলে ছেলেটারে খুন করে নাই। ঐ খুনি দ্বারা আপনিও খুন হতে পারেন। দেশের শতশত খুনির মতো, দস্যুর মতো ঐ খুনিও একজন খুনি। ধর্মীয় আবহ দিয়ে আপনি পৈশাচিক আনন্দে ধর্মেরই বিরুদ্ধাচরণ করছেন।
ধরেন হিন্দু ছেলে খুনের প্রতিশোধে ভারতে যদি এখন দুইজন মুসলমান মারে? এরপর আপনারা চারজন মারবেন? এরপর ভারতে আটজন। এমন করে আপনারা বাংলাদেশের এক-দেড় কোটি হিন্দুকে খুন করলেন। তারপর? ভারতে তো ১৭ কোটি মুসলমান!
আপনারা আসলে কি? ইসলাম মানেন না, কোরআন মানেন না, হাদিস মানেন না, নবী মানেন না অথচ আপনারা ধার্মিক। অনেকেই আক্ষরিক অর্থেই ধার্মিক। তাহলে এমন কেন মনোভাব আপনাদের? একদিক দিয়ে নবীকে বলবেন ‘দয়াল নবী’ আরেক দিক দিয়ে নবীর নাম নিয়ে এমন কাজ করেন যা করতে নবী কঠিনভাবে নিষেধ করতে বলছেন। কোন নবীর অনুসারী আপনারা? একবার ভাবেন এত হিংস্রতা আপনাদের মধ্যে এলো কি করে?
আল্লাহ বলছেন পড়ো-শয়তান বলছেন শুনো।
আপনারা মুখে আল্লাহ-আল্লাহ করছেন। অনেকের অন্তরেও যথার্থই আল্লাহ। কিন্তু আপনারা অনুসরণ করছেন শয়তানের। ধর্মের মতো একটা স্পর্শকাতর নিয়ে আপনাদের পড়ার সময় কোথায়? আপনারা শুনেন। আপনারা হুজুর শুনেন, রাজনৈতিক নেতার ধর্মীয় ফতোয়া শুনেন, সৌদি শুনেন। এমনকি আপনারা এখন আমেরিকাও শুনেন। আল্লাহ তো বলছেন পড়ার কথা। পবিত্র কোরআনকে কেউ আপনারা বলেন সংবিধান, জীবন বিধান, পৃথিবীর আইন। সে কোরআন আপনি না বুঝেই পড়েন। কোরআনকে বলছেন আপনার পথের দিশা। অথচ এই পথের দিশায় কি বলছে আপনি না পড়ে তা শুনেন। আর না বুঝে পৃথিবীর শান্তির জন্য প্রেরিত গ্রন্থ আপনি পড়ের না বোঝা ভাষায় পরকালের জন্য কেবল!
বাংলায় কোরআনের ভালো ভালো অনুবাদ পাওয়া যায়। সেটা যদি পড়তেন প্রথম কথাটা রাখা তাহলে বুঝতেন কিভাবে কি করতে হবে? আপনারা এমন শুননেওয়ালা যে ওয়াজের মাঠে কেউ স্প্যানিশ ভাষায় বক্তৃতা দিলেও আপনারা বিজ্ঞের মতো ঘেটি নাড়েন। আসেন আপনারা যারা ধার্মিক সেজে দুই কিশোরের খুন হওয়া নিয়ে জেহাদি জোশে আছেন তাদের নিয়ে ইসলামে কি বলা আছে জেনে নিই :
বল অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক ও অভিন্ন হতে পারে? - সুরা রায়াদ :১৬
একজন অন্ধ অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটে। আল্লাহ আপনাকে চক্ষু, জ্ঞান দেওয়ার পরও আপনি অন্যের কাঁধে ভর দিয়েই হাঁটছেন।
যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কারো ক্ষতির কারণ না হও। -সূরা হূজরাত: ৭
উপরের আয়াত থেকে কি স্পষ্ট বোঝা যায় না আল্লাহ জেনে বুঝে বিশ্বাস করতে বলেছেন? আপনি কি তা করছেন? করেন নাই। এতে কি আল্লাহর আদেশ স্পষ্টত লঙ্ঘন করেন নাই?
যে কিনা একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করলো সে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করলো, যে একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো সে যেন পুরো মানবজাতির প্রাণরক্ষা করলো। - সূরা আল মায়েদা
এবার বলেন কোরআনের বাণী অনুযায়ী হিন্দু কিশোরটির খুন সমর্থন দেওয়ার কারণে আপনার আমলনামায় কী লেখা হবে?! এবার কি কোরআনকে অস্বীকার করবেন?
এখানে আরও উল্লেখ্য যে কোন নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষের কথা বলা হয় নাই বলা হয়েছে সমগ্র মানবজাতির কথা। কারণ যে যেই ধর্মাবলম্বী হোক না কেন,আল্লাহ ঘোষণা করেছেন সবই তার সৃষ্টি। কোন ইসলামের দোহাই দিয়ে এসব নিরীহ হত্যাকাণ্ড হলো?
এবার দেখেন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে অমুসলিমদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে কী আছে:
যে মুসলিম ব্যক্তি মুসলমান রাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাত তো দুরে থাক তার সুগন্ধও পাবেনা যদিও জান্নাতের সুগন্ধ ৪০ বছর সমপরিমাণ দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়”। (সহীহ বুখারী সংখ্যা-৩,হাদিস নং-২৯৯৫)।
এ বিষয়ে সুরা তওবাতে স্পষ্ট পথ দেখানো আছে-
তোমাদের কাছে বিপদে পড়ে কোন প্রতিমা পূজারিও যদি আশ্রয় চায় তাকে আশ্রয় দিও, তাকে আল্লাহর কালাম শুনিও। তারপর সে আল্লাহর কালাম অস্বীকার করলেও বিপদ কেটে গেলে তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিও।–সূরা তওবা: ৬
পবিত্র কোরআনে অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিষয়ে আরও বলা আছে :
অন্য ধর্মাবলম্বীরা যাদের উপাসনা করে তোমরা তাদের উপাসক সম্বদ্ধে কটু কথা বলো না, কারণ এর ফলে তারা আল্লাহ সম্বদ্ধেও কটু কথা বলতে পারে। - সূরা আনাম: ১০৮।
আপনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের রক্ষা তো পরের কথা মুসলমান পর্যন্ত মারছেন। আপনি, আপনারা কোন কোরআন অনুসরণ করছেন?
হাদিস অনুযায়ী :
হাশরের বিচার সভায় প্রথম বিচার শুরু হবে যারা অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করেছে তাদের। - বুখারী : ৬৩৫৭
সুরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ স্পষ্টতই ঘোষণা করেছেন যে স্বেচ্ছায় নিরীহ/ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করবে সে আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত।
যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মানুষকে হত্যা করবে,তার শাস্তি জাহান্নাম সে চিরকাল সেখানেই থাকবে৷ আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য কঠিনতম শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন৷" । সূরা নিসা :৯৩
ধর্মের নামে যারা নিরপরাধ মানুষ মারলো, মারছে তারা আল্লাহ কর্তৃক অভিশপ্ত। তাদের জন্য আল্লাহ কঠোরতর শাস্তির ব্যবস্থা কোরানের মাধ্যমেই ঘোষণা করেছেন।
রাসুল্লাহ (সা:) হুশিয়ার করে বলেছেন :
কোন মুসলমান যদি কোন অমুসলিমের উপর অত্যাচার করে, অন্যায় অপমান করে, অমুসলিমের সম্পদ কেড়ে নেয় তবে শেষ বিচারের দিন আমি মোহাম্মদ সেই অমুসলমানের পক্ষে সাক্ষ্য দিব। - আবু দাউদ
পূজার মণ্ডপ ভাঙছেন, মালাউন বলে গাল দিচ্ছেন, ভিন্ন ধর্মীদের উপর অত্যাচার সমর্থন করছেন। তৈরি থাকুন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) রোজ হাশরের দিন আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন। মহানবী (সা:) যুদ্ধের ময়দানেও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনা গৃহে একটা ঢিলও মারতে নিষেধ করেছেন। আপনারা কোন ইসলামের অনুসারী?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য