প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল | ০৩ জুলাই, ২০১৭
বছর জুড়ে সমালোচনা চলবে - সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ পাঁচ হাজার ছয়শ কোটি টাকা বেড়েছে। আমরা স্বভাবসুলভভাবেই তীর ছুঁড়ে মারবো সরকারি নেতা ও মন্ত্রীদের দিকে।
২০১১ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের টাকার পরিমাণ যে ৩৪% কমেছিল তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিংবা কেউ সাধুবাদ দিয়েছে? সংবাদটিই ব্ল্যাক আউট করা হয়েছিল।
অর্থ পাচার নিয়ে সরকারের দিকে আঙুল তোলার আগে আপনি কি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন পাচার হওয়া টাকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইসলামী ব্যাংক সংশ্লিষ্ট জামায়াত নেতাদের নয়?
অর্থ পাচারের পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করে বলা যায় অর্থ পাচারের পরিসংখ্যান এমন হবে: জামাত ৪০%, বিএনপি ৩০%, সরকারি কর্মকর্তা ১৫%, ব্যবসায়ী ৫% এবং অন্যান্য ১০%।
কিছু সমীকরণ তুলে ধরছি।
অর্থ সংশ্লিষ্ট নীতিমালা:
বিএনপির সর্বশেষ শাসনামল পর্যন্ত সরকারকে ৭.৫% দিয়ে ব্ল্যাক মানি হোয়াইট করা যেত। তাই অর্থ পাচারের প্রবণতা কম ছিল। তারপরও শুধু খালেদা জিয়ার পরিবারের নামে বেনামে অর্জিত অর্থ কল্পনাকে হার মানায়! তাদের টাকার অংক এত বেশি ছিল যে সিঙ্গাপুর, হংকংয়ে টাকা রাখাসহ মালয়েশিয়ায় বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে।
বিএনপি ঘরানার পত্রিকা নিউ এজসহ অন্যান্য পত্রিকায় মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক তারেক রহমানের একটি প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত অর্থ বাতিল এবং ২০০৭ সালে তারেক রহমানের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির সংবাদ প্রকাশিত হয়।
৭.৫% কর দিয়ে ৯২.৫% টাকা সাদা করার নীতিতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে যার ফলে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে টাকা সাদা করার উপায় ২৫% কর ও ১০% জরিমানা। উপরন্তু অর্থ ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন এবং আর্থিক লেনদেনকে কয়েকটি স্ল্যাবে বিভক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং চালু করায় কালো টাকার মালিকরা টাকা পাচারে বাধ্য হচ্ছে।
কেন অর্থ পাচারে বিএনপি-জামায়াত জড়িত:
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সুইস ব্যাংকগুলোতে ৩৯% এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণার পর ২০১০ সালে ৫৮% অর্থ পাচার বৃদ্ধি পায়।
আওয়ামী লীগ যেহেতু সরকারে তাই নেতাদের সম্পদ বৃদ্ধি হতে পারে কিন্তু তারা টাকা পাচার করবে কেন?
কিছু বিবেচ্য বিষয়:
১. খালেদা জিয়ার এবং যুক্তরাজ্যের মতো একটি দেশে তারেক রহমানের বিলাসবহুল জীবনযাপনের অর্থের উৎস কী?
২. তারেক রহমানের দুর্নীতি মামলার বিচারক মোতাহার হঠাৎ সম্পদের মালিক হয়ে দুদকের নজরদারিতে পড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে স্থায়ী হওয়া বেশি বেশিদিন আগের কথা নয়।
৩. বিএনপি-জামায়াত সরকার দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল বলেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টে চার বার চ্যাম্পিয়ন হয়। তারা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। তাদের জন্য দেশে অর্থ রাখা কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়?
৪. জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৮ সাল থেকে দেশের সবচেয়ে লাভজনক খাতগুলোতে বিনিয়োগ করতে থাকে। তাদের বিশাল অংকের অর্থনৈতিক অবস্থান নিয়ে ড. আবুল বারাকাতের গবেষণাপত্র রয়েছে। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সন্তানরা কোথায় থাকে - এ প্রসঙ্গ এই প্রেক্ষাপটে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী), মীর কাশেম আলী - এরা শীর্ষ ধনীদের অন্যতম। ধনী রাজাকাররা কি কর ফাঁকির টাকা দেশে থাকবে?
৫. ইসলামী ব্যাংক লাভজনক ব্যাংকের শীর্ষে। এতে সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে জামায়াত নেতা, তাদের এনজিও, সমর্থিত জঙ্গি সংগঠন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কালো টাকা কি দেশে রাখা নিরাপদ?
৬. বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট গ্রুপগুলোকে কিভাবে পেমেন্ট করা হয়?
৭. ইসলামী দলগুলোর প্রতি নেত্রী নমনীয় এই মর্মে সমালোচনা করে লন্ডনের ইকোনমিস্ট একই নিবন্ধে কেন ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াতের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকে সরকারি নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করে? এটি কি ইকোনমিস্ট প্রভাবিত না হয়ে করেছে?
সুইস ব্যাংকগুলোতে কারা অর্থ পাচার করেছে তা অর্থনৈতিক নীতিমালা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে অনুধাবন করা কঠিন হয় না। জনগণ যেন এ বাস্তবতা বুঝতে পারে প্রয়োজন সে উদ্যোগের।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য