প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শাখাওয়াত লিটন | ১৬ আগস্ট, ২০১৭
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্টে প্রকাশিত সংবাদপত্রের সমালোচনা করতে গিয়ে সাংবাদিকতা পেশার সমালোচনা করছেন। বলা হচ্ছে, সংবাদপত্র গুলো নাকি সে সময় খন্দকার মোশতাকের সরকারের সাথে সুর মিলিয়েছিল। সাংবাদিকরা নাকি সে সময় মোশতাকের পদলেহন করেছেন।
যারা এমন অভিযোগ করছেন তারা সত্য গোপন করছেন।
সে সময় ব্যক্তি মালিকানায় কোন সংবাদপত্র ছিলনা। চারটি সংবাদপত্রই ছিল সরকারের মালিকানাধীন। স্বাধীন সংবাদপত্র বলে দেশে কিছু ছিলনা ১৫ আগস্টের কয়েক মাস আগে থেকেই। সেই সুযোগটাকে অপব্যবহার করেছে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাকের দল।
তাদের সরবরাহ করা সংবাদের পাণ্ডুলিপি হুবহু ওই চারটি পত্রিকায় পরদিন, ১৬ আগস্টে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন একটা কাগজের প্রধান শিরোনামে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে মোশতাকের ক্ষমতা গ্রহণ। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনী ক্যু করেনি। সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতাও দখল করেনি। সশস্ত্র বাহিনী ক্ষমতা দখল করলে তখনকার সেনা প্রধান ক্ষমতায় আসতেন। তাতো হয়নি।
খুনিরা সশস্ত্র বাহিনীকেও হাইজ্যাক করেছিল। তারা খুব ভালো করেই জানত যে, এ জঘন্য অপকর্মের দায় সশস্ত্র বাহিনীর উপর না চাপালে তারা বিপদে পড়বে। সে জন্য তিন বাহিনীর প্রধানদেরকে বন্দুকের মুখে রেডিও ভবনে নিয়ে খুনিদের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন জানাতে বাধ্য করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর চেইন অফ কমান্ড বলে কিছু ছিলনা। সেনা প্রধান ছিলেন অসহায়। খুনি চক্রের সাথে উপ-সেনা প্রধানের সম্পৃক্ততার ঘটনার অনেক আগে থেকেই ছিল।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত হয় ১৬ আগস্টে সংবাদপত্র। খুনিরা ক্ষমতায়, চারটি সংবাদ পত্র তাদের অধীন। সেই সংবাদপত্র গুলোতে খুনিদের বয়ান থাকবে সেটাই কী স্বাভাবিক নয়? ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্টে প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলো ছিল খুনিদের প্রোপাগান্ডা মেশিন। ওই সংবাদপত্র গুলোতে যারা কাজ করতেন তারা ওই খুনি সরকারের চাকরি করতেন।
১৯৯১ সালে দেশে গণতন্ত্রের পুনর্যাত্রা শুরু হবার পর সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার, বাংলাদেশ টাইমস, দৈনিক বাংলাতে কখনো কেউ স্বাধীন সাংবাদিকতা দেখেছেন? সরকার যখন যা চেয়েছে তারা তাই করেছে; এখনও করছে।
তাহলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে যে খুনিচক্র ক্ষমতা দখল করলো, সেই খুনিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংবাদপত্রের কাছে স্বাধীন সাংবাদিকতা আশা করে আমরা আজ কেন প্রলাপ বকছি; সাংবাদিকতা পেশার উপর কালিমা লেপন করছি?
তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগে থেকেই দেশে কিছু স্বাধীন সংবাদপত্র ছিল। তারা কী করতে পারত সে সময়? ১৫ আগস্টের যা ঘটেছিল তারপরেও তারা স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে পারতেন? সে সময়ের উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা ভাবা যাক।
মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংস ভাবে খুন করে তার সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে। যে দলটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল সেই দলের নেতাকর্মীরা কোন শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সশস্ত্র বাহিনীর চেইন অফ কমান্ড তছনছ। ঢাল নেই তলওয়ার নেই নিধিরাম সর্দার--সাংবাদিকরা কী করতেন অমন নাজুক পরিস্থিতিতে?
যে কোন কারণেই হোক, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন অসহায় হয়ে পড়ে বা ব্যর্থ হয় সামরিক শাসন প্রতিহত করতে বা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে; বিচার বিভাগের আস্তে আস্তে সামরিক শাসনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়; তখন চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে সংবাদপত্র কী করতে পারে?
মুক্ত পরিবেশ না থাকলে কি মুক্ত সাংবাদিকতা সম্ভব?
[ফেসবুক থেকে]
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য