এনায়েত হোসেন সোহেল,প্যারিস

১৬ নভেম্বর, ২০১৫ ১১:৫৯

প্যারিসে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরলেন বাংলাদেশের তারেক

১৪ নভেম্বর শুক্রবার। প্যারিসে ঘড়ির কাঁটায়  রাত তখন ৯টা ৪৯ মিনিট। প্রতিদিনের মত বাতাক্লঁ কনসার্ট হলের কাফি বারের পিছনে বিকেলের শিফটে তখন কাজ করছিলেন বাংলাদেশের তারেক আহমদ। তাঁর  সাথে কাজে করছিলেন শেফ ক্রিস্তফ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বেখতন, সার্ভিস ম্যান মাকু ও ইবন। পাশের বাতাক্লঁ  থিয়েটারে তখন চলছিলো মনমাতানো কনসার্ট।

হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে ভড়কে যান তারা। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই পুরো থিয়েটার গুলির শব্দে একাকার হয়ে উঠে। উঁকি মেরে দেখতে পান সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বেখতন  তখন তাদেরকে নিরাপদে স্টোর রুমে ঢুকার  নির্দেশ দেন। তারা সাথে সাথে স্টোর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন।

তারেক বলেন তখন 'ভয় পেয়ে তখন আল্লাহ-খোদার নাম নিতে থাকি। এ সময় আমরা মানুষের গগনবিদারী চিৎকার আর সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি গুলির শব্দ শুনতে পাই। জীবনের প্রথম এ রকম পরিস্থিতিতে পড়ি। স্টোর রুমের ভিতরে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। আমাদেরকে তখন সাহস যোগান বেখতন। তিনি পুলিশের কাছে আমাদের অবস্থানের কথা মোবাইলে জানান। পুলিশ বেখতনকে পরামর্শ প্রদান দেয়। এক পর্যায়ে সবকিছু নিরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পরে প্রায় দেড় ঘণ্টার পর মা বাবা ,দেশবাসীর দোয়ায় পুলিশের  সহায়তায় আমরা মুক্ত হই।'  

এই ভয়াবহ ঘটনার প্রতক্ষদর্শী নির্ঘাত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা চল্লিশ বছর বয়সি তারেকের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা এলাকার গোলাপ নগরে। বাবা  মুক্তিযোদ্ধা তোতা মিয়া ও এবং মা ফাতেমা বেগমের একমাত্র পুত্র তিনি । এ ঘটনায় শুধু বাতাক্লঁ থিয়েটারে নিহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

তারেক আহমদ ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাশ করেন গোলাপগঞ্জের এমসি একাডেমী থেকে। সিলেট মদন মোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে এইচএসসি ও ডিগ্রী পাশ করেন। ১ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তারেক সবার বড়।  জীবন জীবিকার তাগিদে ২০০৩ সালে ফ্রান্স আসেন। ২০০৭ সালে প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ পান। দেশে রয়েছেন তার  স্ত্রী শারমিন আক্তার।
     
এই লোমহর্ষক ঘটনার যখন বর্ণনা দিচ্ছিলেন তারেক আহমদ তখন এক অজানা আতংক তার চোখে মুখে ফুটে উঠছিল।

তারেক জানান, 'বাতাক্লঁ  থিয়েটারের বারে আমি ৭ বছর ধরে একাধারে কাজ করে চলেছি। বিকেলের শিফটে প্রতিদিন ৫টা থেকে  রাত ১২/১ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। এখানে কাজের সুবাদে অনেকের সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছিলো। বিভিন্ন দেশের লোকজন এখানে কাজ করতো। একমাত্র বাংলাদেশী ছিলাম আমি। সহকর্মীদের  মধ্যে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছে। অনেকে আহত হয়েছে।'

তারেক বলেন, "থিয়েটারে কাজ করতো নাতালি, ওর মৃত্যুটা আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। মেয়েটি খুব ভালো ছিলো। ওকে গুলি করতে দেখেছি আমি। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝাঁঝরা হয়ে গেছিল তার শরীর। সার্ভিসম্যান লুই ও গুলি খেয়েছে। তবে মারা যায়নি সে। গুরুতর আহত হয়ে ভাগ্যচক্রে বেচে গেছে।"   

প্যারিসের লা প্লেইনের রুই লান্দির ১২ নম্বর বাসায় এ প্রতিবেদকের সাথে গতকাল বিকেলে কথা হলে তারেক জানান, আমি বেঁচে আছি এটা বিশ্বাস করতে পারছিনা কি ভাবে বেঁচে গেলাম। ডাক্তার বলেছে বিশ্রাম নেয়ার জন্য। পুলিশ এসে গাড়িতে করে নিয়ে গিয়েছিল থানায়। ঘটনার বিবরণ জেনে আমাকে আবার আমার বাসায় রেখে গেছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বলেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত