রুমেল আহসান, দুবাই থেকে ফিরে

১৭ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:৪০

দুবাইয়ে প্রবাসীদের বিপদে সহায় ‘জাহেদ ভাই’

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্যস্ত জীবনে প্রতিটি 'মুহূর্ত' যেন রুটিনবাঁধা। প্রতিটি মানুষ জীবন আর জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে স্ত্রী-সন্তান আর পরিবারের সদস্যদের জন্য।  আত্মকেন্দ্রিক জীবন ব্যবস্থায় নিজের পরিবার-পরিজন ছাড়াও অনেকে কমিউনিটির বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন কমিউনিটির অতিপরিচিত মুখ এম জাহেদ হাসান।

কমিউনিটিতে যিনি "জাহেদ ভাই" হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ তিন দশক ধরে নীরবে-নিভৃতে দুবাই, শারজাহ, ফুজাইরা, খরফাক্কান, আল বিদিয়া, আল দিব্বা এলাকা সহ সাতটি প্রদেশের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিপদগ্রস্ত মানুষের মুশকিল আহসানে আর্বিভূত হয়েছেন একজন জাহেদ। বিপদগ্রস্ত যে কোনো ব্যক্তি বা পরিবার সেলফোনে কল দিলেই বিপদগ্রস্তদের ঠিকানায় হাসিমুখে ছুটে আসছেন সবার প্রিয় জাহেদ ভাই। সাধ্যমতো সহযোগিতা করে আবার অন্য বিপদগ্রস্তের ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে যাচ্ছেন অন্যখানে। এভাবে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে জাহেদ ভাইয়ের মানবতার গল্প। বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনের সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

প্রাথমিক বিপদগ্রস্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের চেম্বার, গুরুতর অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন কাজের জন্য জব এজেন্সির সঙ্গে মিট করে দেওয়া তার কাজ। কোনো প্রবাসী আরব আমিরাতে মারা গেলে তার মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য সাহায্য সহযোগিতা করেন তিনি। কারো চাকরি না থাকলে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থাও করে দেন এম জাহেদ হাসান।

এ পর্যন্ত প্রায় ৩২৫ জন প্রবাসীর মরদেহ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে পাঠাতে সহযোগিতা করেছেন জাহেদ। ১৫৬ জন অসুস্থ প্রবাসীকে দেশে পাঠিয়েছেন কফিলের (স্পন্সর) কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে। প্রচুর বেকার প্রবাসীকে যোগ্যতা অনুযায়ী নিঃস্বার্থভাব কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

এছাড়া আল বিদিয়া এলাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করতে রয়েছে তার বিশেষ অবদান। জাহেদ হাসানের এই মানবিক কর্মকাণ্ড কমিউনিটির মানুষের কাছে প্রশংসা কুড়াচ্ছে । মানবিক এই কর্মকান্ড শারজাহ, ফুজাইরা শহর সহ সাতটি প্রদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিপদগ্রস্তদের মাঝে তার এই মানবিক সেবা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশি কমিউনিটিতে "জাহেদ ভাই" হিসেবে খ্যাত এম জাহিদ হাসানের বাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরের বন্দর থানার দক্ষিণ মধ্যেম হালি ৩৮নং ওয়ার্ডের ধুম পাড়া গ্রামে। ১৯৯২ সালে আরব আমিরাত যান তিনি। আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ এলাকায় তিনযুগ ধরে বসবাস করছেন। দীর্ঘ তিন দশক ধরে কমিউনিটির বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন এম জাহেদ হাসান।

আরব আমিরাতের আল বিদিয়ায়ে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশী মো. আয়াছ মিয়া ও ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ব্যস্ত জীবনে জাহেদ ভাই একজন ব্যতিক্রমী মানুষ। মানুষের উপকার করা তার নেশায় পরিণত  হয়েছে। তিনি কমিউনিটির জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। প্রবাসী কারো কাজ না থাকলে ও কোনো সমস্যায় পড়লে জাহেদ ভাই এসে তাদের পাশে দাঁড়ান। মানুষের উপকার করে যেন আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।

প্রবাসী গাড়ি চালক টিপু মিয়া বলেন, জাহেদ ভাই একজন মানবতার ফেরিওয়ালা। প্রবাসীদের যেকোনো বিপদ-আপদে তিনি ছুটে আসেন। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে সমস্যার সমাধান করেন। তিনি প্রবাসীদের বিপদের বন্ধু।

এ বিষয়ে কথা হয় এম জাহেদ হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোনো মানুষই সারা জীবন বিপদগ্রস্ত থাকে না। যে কোনো নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। মানব জীবনে যদি মানুষের বিপদে আপদে পাশে না থাকলাম সে জীবন মূল্যহীন। মানুষের জন্য কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই। সবই আল্লাহর ইচ্ছা, নবী ও রসুলের দেখানো পথে আমাদের চললে ইহকাল ও পরকালে আমাদের কল্যাণ সম্ভব। আল্লাহ পাক সবাইকে মানুষের কল্যাণে কাজ করার তওফিক দান করুন।

তিনি আরও বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধু পরিষদ আরব আমিরাতের কেন্দ্রীয় কমিটির ফুজাইরাহ প্রদেশের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। যেসকল প্রবাসী বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছেন, সে সকল প্রবাসীদের উপকারে আসতে পারছি এবং তাদের কল্যাণে করতে পারছি; এভাবে যেন আজীবন প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করতে পারি এটাই আমার চাওয়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত