৩১ আগস্ট, ২০১৬ ১৩:৩৪
যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ২ টায় মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান বক্তারা।
এদিকে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর রিভিউর রায় নিয়ে লন্ডনে পক্ষে-বিপক্ষে মুখোমুখি অবস্থানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামি সমর্থিত সংগঠন 'সেইভ বাংলাদেশ'।
মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকায় বিচার বিভাগ ও সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবীতে লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় সমাবেশ আয়োজন করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে, ঠিক একই সময় ওই স্থানে ‘সেইভ বাংলাদেশ’ নামে জামায়াত সমর্থিত একটি সংগঠন কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়কে অবৈধ ও আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক আক্রোশ মূলক রায় বলে এই রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়।
একই সময়ে দুই পক্ষের সমাবেশ এর কারণে মুখোমুখি অবস্থান নেয় সমাবেশে আসা নেতা কর্মীরা। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জয়বাংলা শ্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলেন আলতাব আলী পার্ক। পাকিস্তানের দালালেরা পাকিস্তানে চলে যা, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাই নাই ইত্যাদি শ্লোগান দেয় তারা।
অন্য পক্ষে সেইভ বাংলাদেশের পক্ষে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দেয়।
দুই পক্ষের মাঝখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং কোন ধরণের সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, উভয় পক্ষের নেতাদের সাথে কথা বলে নিশ্চয়তা চেয়েছে।
কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে উত্তেজনা। এক পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে দুই পক্ষকে পার্ক ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পুলিশের কাছে নিশ্চয়তা চান আগে জামায়াত নেতাকর্মীদের যেন শহীদ মিনার এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয় এবং তারা যেন শহীদ বেদীতে না আসতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটা অংশ তখন শহীদ বেদীতে অবস্থান নেয়।
জামায়াতে ইসলামি মুখপাত্র আবু বকর মোল্লা ও পুলিশের কাছে একই দাবী জানান । আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আগে শহীদ মিনার এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবী জানান তিনি। পুলিশ এক পর্যায়ে দুই পক্ষকেই পার্ক থেকে সরিয়ে দেয়।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ,কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, প্রজন্ম ৭১, নারী জোট, জাসদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
বক্তারা বলেন, একাত্তরের গুপ্তঘাতক কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির সাজা তার প্রাপ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় মীর কাসেম এড়াতে পারেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলী ১৯৭১ সালে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন কুখ্যাত গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান।
এসময় বক্তারা কাসেমকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বন্ধ ও বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন মীর কাশেম। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, এ রায়ের ফলে সারাবিশ্বের বাঙালিদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে এটা সমগ্র বিশ্বের বাঙালিদের আশা।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এমএ রহিম, শামসুদ্দিন আহমদ মাস্টার, যুগ্ম সম্পাদক নঈমুদ্দিন রিয়াজ, মারুফ আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌ, দপ্তর সম্পাদক শাহ শামীম আহমদ, যুবও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক তারিফ আহমদ, জনসংযোগ সম্পাদক রবিন পাল, শিল্পও বাণিজ্য সম্পাদক আসম মিসবাহ, জাসদের মুজিবুল হক মনি, যুবলীগের সেলিম খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সায়েদ আহমদ সাদ,বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত দাস গুপ্ত, কৃষকলীগের এমএ আলী, জাতীয় শ্রমিকলীগের শামীম আহমদ, যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জামাল খান, সহ দপ্তর সম্পাদক অজিত লাল দাস, যুবলীগ নেতা শাহজাহান কবীর প্রমুখ।