সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ২০:৩৬

বারাক ওবামার চিঠি পেলো বাংলাদেশি ‘বিস্ময় শিশু’ সুবর্ণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে ‘রিকগনিশন অব একমপ্লিশম্যান্ট’ পেয়েছে ‘ক্ষুদে আইনস্টাইন’ হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশী শিশু সুবর্ণ আইজ্যাক বারী (৪)।

হোয়াইট হাউজ থেকে পাঠানো অফিসিয়াল ওই চিঠিতে বারাক ওবামা লিখেছেন, ‘প্রিয় সুবর্ণ, আমার মনে হয়, তোমার কঠোর প্ররিশ্রম এবং অর্জন নিয়ে তুমি গর্বিত। তোমার মতো শিক্ষার্থী আমেরিকায় আরো দরকার, যারা স্কুলে কঠোর পরিশ্রম করার চেষ্টা করে, বড় স্বপ্ন দেখে এবং আমাদের সমাজের পরিবর্তন ঘটায়। আমাদের দেশ অনেক চ্যালেঞ্জ মুখোমুখি হয়। কিন্তু আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে এসব মোকাবেলা করা কোনো ব্যাপারই না। তুমি তোমার চেষ্টা চালিয়ে যাও, আমি তোমার সাথে আছি। তোমার কাছে আমি অনেক বড় কিছু প্রত্যাশা করি।’

মার্কিন নাগরিকরা চাইলে হোয়াইট হাউজে আবেদন করে এই ‘রিকগনিশন অব একমপ্লিশম্যান্ট’ লেটার নিতে পারেন। শিশুর জন্ম, কারো জন্মদিন, অবসর, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি উপলক্ষে এটি চাওয়া যায়।

সুবর্ণ এই চিঠি পেয়েছে তার বিস্ময়কর প্রতিভার জন্য। মাত্র দেড় বছর বয়সে সে রসায়নের পর্যায় সারণি মুখস্থ করে ফেলেছিলো। আর মাত্র ৩ বছর বয়সে সে লেবু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরীক্ষা করে। এরই মধ্যে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকাসহ বিশ্বের বেশ কিছু গণমাধ্যম।

সুবর্ণর জন্ম ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল। অর্থাৎ তার বর্তমান বয়স মাত্র সাড়ে চার। এখনও স্কুলে ভর্তি হয়নি, কিন্তু এই অল্প বয়সেই সুবর্ণ তার কলেজ শিক্ষক বাবার সাথে ল্যাবরেটরিতে যাচ্ছে এবং অংকশাস্ত্র ছাড়াও রসায়নের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে।

সুবর্ণর বাবা রাশিদুল বারী জানান, এমন বিস্ময়কর প্রতিভার শুরুটা সুবর্ণর শৈশবে। শিশু সুবর্ণ নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের বেডে শুয়ে জ্বরে কাতরাচ্ছিল। তিনি তাকে বলেন, "আই লাভ ইউ মোর দ্যান এনিথিং ইন দ্য ইউনিভার্স"। সুবর্ণ সাথে সাথে বাবাকে পাল্টা প্রশ্ন করে, "ইউনিভার্স অর মালটিভার্স?" সুবর্ণর প্রশ্নে চমকে যান কলেজ শিক্ষক রাশীদুল বারী। তখনও তিনি জানতেন না এই সুবর্ণ ৩ বছর বয়সে অংক, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে দক্ষতা দেখিয়ে সারা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দেবে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুবর্ণ মাত্র ৪ বছর বয়সেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে। যে এখনও স্কুলেই যায়নি, সে জ্যামিতি, বীজগণিতসহ রসায়নের জটিল বিষয়ের সহজ সমাধান দিচ্ছে অনায়াসে!

সুবর্ণর বাবা জানান, একদিন ওর মা ওকে অংক শেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ সুবর্ণ বললো, "ইফ ওয়ান প্লাস ওয়ান ইক্যুয়াল টু টু, দ্যান টু প্লাস টু ইকোয়াল টু ফোর এবং এন+এন ইকোয়াল টু টোয়াইস এন, তাই না?" রাশীদুল বারী তখন পাশের রুমে তার ছাত্রদের পরীক্ষার খাতা দেখছিলেন। ছেলের এমন প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে তিনি উচ্চতর গণিত এবং বিজ্ঞানের পাঠ দেয়া শুরু করলেন। আর এভাবেই মাত্র ২ বছর বয়সে সে রসায়নের পর্যায় সারণি মুখস্থ করে ফেলে।

সুবর্ণর অবিশ্বাস্য মেধার কথা পৌঁছায় মেডগার এভার্স কলেজের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড পোজম্যানের কানে। তিনি সুবর্ণর সাথে দেখা করেন। আর সুবর্ণ পর্যায় সারণির সবগুলো মৌলের নাম বলে তাকে চমকে দেয়। এরপর সুবর্ণর ডাক পড়ে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগ থেকে। বাবা তাকে নিয়ে যান ওয়াশিংটন ডিসিতে ভয়েস অব আমেরিকা স্টুডিওতে। সেখানে ইন্টারভিউ দিয়ে বছরের সেরা ‘কনিষ্ঠ ইন্টারভিউ দাতা’ হিসাবে স্বীকৃতি পায় সুবর্ণ।

চট্টগ্রামের সন্তান রাশীদুল বারী উচ্চশিক্ষার জন্যে নিউইয়র্কে আসেন। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির বারুখ কলেজে গণিতের সহকারী অধ্যাপক এবং একইসঙ্গে নিউভিশন চার্টার হাইস্কুল ফর অ্যাডভান্সড ম্যাথ অ্যান্ড সায়েন্সে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। সুবর্ণর মা রেমন বারী ব্রঙ্কস কম্যুনিটি কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। সুবর্ণর একমাত্র বড় ভাই রিফাত আলবার্ট বারীর বয়স ১২। সেও অসাধারণ মেধার অধিকারী। সপ্তম গ্রেডে পড়ুয়া রিফাত জানে ৭টি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। হাইস্কুলে না গিয়েই বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা থেকে ইতোমধ্যেই সে তিনবার এসএটি দিয়েছে।

সূত্রঃ বণিক বার্তা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত