বদরুজ্জামান জামান, প্যারিস থেকে

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১২:২৭

প্যারিসে যুব ইউনিয়নের উদ্যোগে দিনব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত

‘শিক্ষা-সংস্কৃতি-ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশের চেতনায় জেগে উঠো বিশ্ব তারুণ্য’- এই শ্লোগানে ‘বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ফ্রান্সে’র উদ্যোগে প্যারিসে ৩য় বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী একুশে বইমেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

৫ ফেব্রুয়ারি যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল টেলি-কনফারেন্সের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন।

বিকাল ৫ টায় থেকে শুরু হয় “একুশের চেতনা ও বর্তমান বাংলাদেশ শীর্ষক” আলোচনা সভা। যুব ইউনিয়ন ফ্রান্স কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট রমেন্দু কুমার চন্দের সভাপতিত্বে এবং ফাহাদ রিপনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে আলোচনায় অংশ নেন ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রান্সের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড.ফিলিপ বেনোয়া।

প্রধান বক্তা হিসাবে বাংলাদেশ থেকে টেলি-কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিশেষ বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াজ, বিশেষ অতিথি ছিলেন উদীচী ফ্রান্সের সভাপতি কিরণময় মণ্ডল ও সিপিবি ফ্রান্সের সম্পাদক কমরেড আহমদ আলী দুলাল।

কবি ও প্রাবন্ধিক সাখাওয়াত টিপুর লিখা একুশের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন তানবির সরকার শাওন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক রহমত উল্লাহ চৌধুরী সুজন।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জবরুল ইসলাম লিটন, ম্যাডাম ক্লেয়ার, দোলন মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ও হেড অফ চেনসরী হযরত আলী খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান, কণ্ঠ শিল্পী আরিফ রানা, কুমকুম সাঈদা, চিত্রশিল্পী ইসমাইল হোসেন মুহিত, তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব শাখাওয়াত মিয়া, চারণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিলয় সূত্র ধর, বাসদ এর জুয়েল দাস লেনিনসহ কমিউনিটির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ফিলিপ বেনোয়া বলেন, আমি তসলিমা নাসরিনের বইয়ের অনুবাদক হওয়ার কারণে এবছর ঢাকার একুশে বইমেলায় আমার আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বে আমাকে যেতে দেয়া হয়নি। কিন্তু যখন শোনলাম এখানে একুশে বইমেলা হবে তখন আমি খুব খুশী হয়েছি। যারা এই বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমি এরকম আয়োজন দেখে মুগ্ধ।

তিনি বলেন, বই আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমরা হয়তো আজকে শুধু কাগজে বই পড়ি না, আমরা অনেক সময় কম্পিউটারের পর্দায় অথবা স্মার্টফোনে বই পড়ছি। বিশেষ করে বইয়ের মাধ্যমে লেখক লেখিকারা বাক স্বাধীনতার জন্য কাজ করেন লড়াই করেন। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে যখন যেখানে বাক স্বাধীনতা হ্রাস পায় তখন এটা আমাদের সবার জন্য সর্বনাশের কারণ হয়। তাই আমাদেরকে বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা একান্ত কর্তব্য। বিশেষ করে যুবকদেরকে এজন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিজের ভাষায় নিজে বাক স্বাধীনতা প্রকাশের এবং বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীকে কেন্দ্র করে যুবকরাই লড়াই করেছিল জীবন দিয়েছিল।

প্রধান বক্তা হিসাবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শহীদ দিবস নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। পৃথিবীতে যত মানুষ আছে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার যে অধিকার তা হল তাদের মৌলিক অধিকার। সে অধিকার একুশের চেতনা এবং উপলব্ধিটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা সফল হয়েছি ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে। আমাদের সুদূর প্রবাসে যে সকল বন্ধুরা আছেন যারা মাতৃভাষা প্রিয়তাকে বিশ্বাস করেন ফ্রান্সের আমাদের যুব সমাজ বিশেষ করে যুব ইউনিয়ন পর পর ৩য় বারের মতো অমর একুশ উপলক্ষে বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই এবং এর ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা প্রসারে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এছাড়াও তিনি বলেন, সম্প্রতি পাঠ্য পুস্তকে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এর জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

মেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কবি বদরুজ্জামান জামানের একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত “গ্রন্থ নানা রঙের ছড়া” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন ড. ফিলিপ বেনোয়া।

এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন শিশু শিল্পী অনুপমা চন্দ রিতু এবং অমিত। সংগীত পরিবেশন করেন খন্দকার আতাউর রহমান। আবৃত্তি করেন বদরুজ্জামান জামান, আবৃত্তি শিল্পী গিয়াস বাবু ও মুহাম্মদ গোলাম মোর্শেদ। পুঁথি পাঠ করেন বিশিষ্ট পুঁথি শিল্পী কাব্য কামরুল। এছাড়াও যুব ইউনিয়ন কর্মীদের গণসংগীত এবং উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ফ্রান্সের পরিবেশনা নাটিকা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান পুরো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে এক ভিন্ন মাত্রা দান করে।

প্যারিসের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় বেশ কিছু স্টল অংশ গ্রহণ করে। দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দের লেখকদের বই ক্রয় করেন। প্রবাসে এধরনের আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখারও আহবান জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত