জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য

২৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ০১:৫৫

এবার এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে মনে হলো মুম্বাই শহরে আছি : গাফফার চৌধুরী

অমর একুশে গানের রচয়িতা প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, নভেরা আহামেদ ও হামিদুর রহমানের আঁকা  শহীদ মিনারের মূল যে নকশা, তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। শহীদ মিনারের সঙ্গে একটি জাদুঘর, একটি পাঠাগার ও গবেষণাকেন্দ্র যুক্ত ছিল। বর্তমান যে শহীদ মিনার, সেটিকে অর্ধসম্পন্ন শহীদ মিনার বলা চলে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের অন্যভাষা প্রীতিরও তীব্র সমালোচনা করে বলেন বাঙালীরা ঈদের দিনে পায়জামা পড়ে একবার মুসলমান হয় আর ২১ ফেব্রুয়ারার দিনে বাঙালী হয়। লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব আয়োজিত  একুশের আলোচনা ও আবৃত্তিসন্ধ্যা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান  অতিথি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলা ভাষায় ইংরেজি ও হিন্দি শব্দের আগ্রাসনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘উর্দুর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছিলাম। কিন্তু হিন্দি আমাদের বিনা যুদ্ধে গ্রাস করে নিয়েছে। এবার একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। গিয়ে মনে হলো আমি মুম্বাই শহরে আছি। একটাও বাংলা গান হয়নি।’

তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থা এত নিচে গেছে যে এখন যারা স্নাতক করে বের হয়, তারা সঠিক বাংলাও লিখতে পারে না, ইংরেজিও লিখতে পারে না। ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে একদিনের অনুষ্ঠান না করে এটিকে হৃদয়ে ধারণ করতে হবে এবং এর সংস্কার করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশে বাংলা সংস্কৃতির পরিবর্তে বিদেশী সংস্কৃতি বিশেষ করে হিন্দি সংস্কৃতির আগ্রাসনের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দেশে এখন বেশিরভাগ মানুষ বাংলা নাটকের পরিবর্তে হিন্দী সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত।

তিনি বলেন, বাংলা ভাষার জন্য ২৪ বছর যুদ্ধ করতে হয়েছে সেখানে হিন্দী বিনাযুদ্ধে বাংলা ভাষা গ্রাস করছে। তিনি বলেন, বাংলা ভাষায় সংস্কার আনতে হবে। ইংরেজরা তাদের ভাষায় ১৮বার সংস্কার করেছে। আর তাই এখন বিশ্বের জনপ্রিয় ভাষা ইংরেজী।

বাংলা বানানের নানান অসংগতি তিনি তুলে ধরেন। তিনি প্রবাসে নতুন প্রজন্মের উপযোগী বাংলা বইয়ের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন।

আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এখন বাংলা চর্চার সাথে বাধাহীনভাবে মিশেল হচ্ছে ইংরেজি ও সেই সাথে যোগ হয়েছে হিন্দী শব্দের অনুপ্রবেশ। এটা আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ জীবনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, যে কোন ভাষায় অন্য ভাষার শব্দ যোগ হতে পারে, ব্যবহৃত হতে পারে, এটা ভাষার বহমান প্রকৃতির সাথে সাযুজ্যপূর্ণ। কিন্তু সেটা মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা থেকে হওয়া উচিত নয়, তেমনটা হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রথম আলোর পরামর্শ সম্পাদক কামাল আহমদ বাংলা ভাষার প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কথা বিশ্লেষণ করে বলেন, বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম বা প্রচলিত বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের সঙ্গে মানানসই বাংলা ফন্ট এখনো তৈরি করা যায়নি। কোনো কোনো প্রযুক্তিপণ্যে বাংলা পড়া যায় না কিংবা অক্ষরগুলো ভেঙে যায়। আবার ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করেই বাংলা সফটওয়্যারের কোড লিখতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ইংরেজি ভাষা ছড়িয়ে দেওয়ায় ব্রিটিশদের সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

পূর্ব লন্ডনের মাইক্রো বিজনেস সেন্টারে যুক্তরাজ্যে বাংলা সংবাদকর্মীদের সংগঠন ‘লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব’ জাতীয় শহীদ দিবস উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ‘অমর একুশে এবং বাংলা গণমাধ্যম’ নিয়ে আলোচনা করেন প্রথম আলোর পরামর্শ সম্পাদক কামাল আহমদ। ‘বিলাতের বাংলা পত্রপত্রিকার সংকট ও সম্ভাবনা’ নিয়ে আলোচনা করেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুস সাত্তার এবং ‘বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশে বিলেতের টিভি চ্যানেলগুলোর ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা করেন চ্যানেল এসের প্রযোজক ফারহান মাসুদ খান।

লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়েরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ট্রেজারার আ স ম মাসুম,  কবিতা আবৃত্তি করেন সালাউদ্দিন শাহীন, শহিদুর রহমান সাগর, তৌহিদ শাকিল, জাকি রেজওয়ানা প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত