ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, সিডনি থেকে

১৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০৯:৪৪

সিডনিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা কবে?

ফাইল ছবি

বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনে এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে নানা রকম টানাপড়েন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দলীয়ভাবে এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা না করার ঘোষণা দিয়েছিল আগেই। ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে নানা রকম বিরোধিতা ছিল উল্লেখ করার মতো। তারা এ বছর বাংলা নববর্ষ উদযাপনের বিরুদ্ধে রাজপথে, সামাজিক (ফেইসবুকে) এবং বাণিজ্যিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। কিন্তু তারপরেও এ বছর রমনা’র বটমূলে মানুষের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার থামাতে পারেনি, কিছুতেই।

বরং মানুষের অংশগ্রহণ এবং উদ্দীপনা ছিল অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

এ বছর চট্টগ্রামের ডিসি হিলের সড়কের নববর্ষের আলপনা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পুলিশের পক্ষ থেকে রমনার প্রবেশমুখে বাতাসা এবং গোলাপের শুভেচ্ছা ছিল নজিরবিহীন।

সারা বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে কোনো রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের বাইরেও এ বছর কানাডার টরেন্টোতে এক বর্ণাঢ্য এক মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছে। এ ছাড়াও অন্যান্য দেশে বাঙালিরা ‘জীবন যেখানে যেমন’ অবস্থার মধ্যে দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করেছে।

সিডনিতে ইতিমধ্যেই বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দুই দুটি বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মেলাসমুহে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙালিদের উপস্থিতি মেলার সফলতা দাবি করছে। সিডনিতে সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয় সিডনি অলিম্পিক পার্কে। বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া গত ২৫ বছর যাবত উক্ত মেলাটি আয়োজন করছে। এ বছর বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া আগামী ১৩ মে ২০১৭ বৈশাখী মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, আবহাওয়া ভালো থাকলে এই মেলাটিতে প্রতি বছর বিশ-পঁচিশ হাজার বাঙালিদের সমাগম হয়।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, টরেন্টোর বাঙালিদের মতো সিডনি’র বাঙালিরা এখনো একটি মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করতে পারেনি। যদিও টরেন্টোর তুলনায় সিডনিতে বাঙালিদের সংখ্যা অনেক বেশি। পর্যবেক্ষকদের মতে, সিডনিতে বাঙালিদের যত রকম আদর্শ-চেতনা আছে তার সবই প্রমাণ করে, কোনো না কোনো নামে মেলা আয়োজনের মাধ্যমে। এখানকার বাঙালিরা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতা মেলা’; বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বিজয় মেলা’; নববর্ষ উপলক্ষে ‘বৈশাখী মেলা’ আয়োজন করে। মেলার কোনো অভাব নেই; মেলায় মেলায় সয়লাব।

নিজেদের নেতৃত্বে মেলা আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনে বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে নতুন কমিটি করতেও দ্বিধা করে না। এই খেলায় সিডনিতে ‘মহল্লার ম্যাকবেথ এবং ব্যাক স্ট্রিট বয়েজদের’ যারপরনাই তৎপরতা মুখরোচক গল্পের যোগান দিচ্ছে, নিয়মিত। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে অনলাইনে, ইনলাইনে ‘এয়ারপোর্টলীগ’; ‘পরিবহনলীগ’ ‘হাইব্রিডলীগ’ ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ ‘জামায়াত-বিএনপি’ নানা বিশেষণে ভূষিত করে।

এতদ্বসত্ত্বেও ‘অহেতুক চিন্তা পরিষদ’ নামের স্যাটায়ারধর্মী একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী বছর পহেলা বৈশাখ, ১৪২৫ বংগাব্দ, সিডনি’র বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা লাকেম্বা’র হ্যাল্ডন স্ট্রিটে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের আহবান জানিয়েছে। তাদের দাবি, অস্ট্রেলিয়াতে যদি চাইনিজরা তাদের নববর্ষে ‘ড্রাগন প্যারেড’ করতে পারে, ইরানী মুসলিমরা যদি ‘নওরোজ উৎসব’ পালন করতে পারে, তাহলে বাঙালিরা কেন ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ করবে না? এজন্যে তারা অস্ট্রেলিয়াস্থ বাঙালিবান্ধব (বাংলাদেশি এবং ভারতের) সকল ব্যক্তি এবং সংগঠনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত