নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ২০:০১

সিলেটে বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব: কী থাকছে, কারা আসছেন?

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যে কোন আয়োজন মানেই যেন সংস্কৃতিপ্রেমিদের চাহিদার চেয়েও বেশি কিছু। দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানী ঢাকাতে বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতি উৎসব আয়োজন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সিলেটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১০ দিনব্যাপী বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব সিলেট ২০১৭।

সংস্কৃতি চর্চার উৎকর্ষকে লক্ষ্য ধরে মানবিক সাধনায় এই প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাইরে কোন বিভাগীয় শহরে এত বড় পরিসরের সংস্কৃতি উৎসব আয়োজন করতে যাচ্ছে বেঙ্গল। আর সিলেটের সংস্কৃতিপ্রেমিদের জন্য চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কিছুই রয়েছে সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিতব্য এ আয়োজনে।

পুরো কমপ্লেক্সকে সিলেটের গুণী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নামানুসারে নানা ভাগে ভাগ করে জ্ঞানতাপস জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে উৎসর্গীত এ ১০ দিনের আয়োজন সাজিয়েছে বেঙ্গল।

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চ ও হাছন রাজা মঞ্চে মুল আয়োজনের পাশাপাশি শাহ আব্দুল করিম চত্বর, রাধারমণ দত্ত বেদী, গুরুসদয় দত্ত চত্ত্বর ও কুশিয়ারা কলোনেড এর মধ্যেও থাকছে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা আয়োজন।

কী থাকছে? কে আসছেন? কখন কী হচ্ছে?

প্রথম দিন (২২ ফেব্রুয়ারি, বুধবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্র বর্ন টুগেদার, টেলিভিশন ও গেরিলা।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে ওয়ার্দা  রিহাব’র নির্দেশনায় মণিপুরি নৃত্য, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট এর পরিবেশনায় দেশের গান, অদিতি মহসিনের কন্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং ফোক ফিউশন করবে গানের দল জলের গান।

দ্বিতীয় দিন (২৩ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টায় চলচ্চিত্র মেঘমল্লার। ৭টা ১৫ মিনিটে মণিপুরি থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চ নাটক কহে বীরাঙ্গণা।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের পরিবেশনায় তবলা, ভবন বাউলের কন্ঠে লোকগান, মনোময় ভট্টাচার্যের কন্ঠে নজরুল সঙ্গীত, চন্দনা মজুমদার ও শতাব্দী রায়ের পরিবেশনায় থাকছে লোকগান।

তৃতীয় দিন (২৪ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে সকাল ১০টা ৩০ থেকে কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্নালী চট্টোপাধ্যায় পরিবেশন করবেন রাগাশ্রিত সঙ্গীত, পুরোনো দিনের বাংলা গান পরিবেশন করবেন সুবীর নন্দী ও ঝুমা খন্দকার, গানের দল ও কৃষ্ণকলি পরিবেশন করবেন জীবনমুখী গান।

চতুর্থ দিন (২৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে সকাল ১০টা ৩০ থেকে কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বরেন্দ্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী গীতিনৃত্য গম্ভীরা পরিবেশন করবেন আতাউর রহমান মিন্টু ও তাঁর দল, ইফফাত আরা দেওয়ান পরিবেশন করবেন বাংলা গান, নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন খায়রুল আনাম শাকিল, লোকসঙ্গীত পরিবেশন করবেন লাবিক কামাল গৌরব, নবনিতা চৌধুরী ও বেবী দেওয়ান।

পঞ্চম দিন (২৬ ফেব্রুয়ারি, রবিবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে সকাল ১০টা ৩০ থেকে কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে নীলাঞ্জনা দাসের পরিবেশনায় নৃত্যনাট্য দ্রোহকাল, রাজরূপা চৌধুরী দর্শক মাতাবেন সরোদে, রবীন্দ্র সঙ্গীত ও তিন কবির গান করবেন লাইসা আহমেদ লিসা এবং থাকছে কুদ্দুস বয়াতীর পরিবেশনায় পালাগান।

ষষ্ঠ দিন (২৭ ফেব্রুয়ারি, সোমবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় চলচ্চিত্র অজ্ঞাতনামা, জালালের গল্প ও আয়নাবাজী।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে রামকৃষ্ণ সরকার ও তার দলের পরিবেশনায় বৃহত্তর ভাটি অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য, চা জনগোষ্ঠীর পরিবেশনায় ঝুমুর। সিলেটের আঞ্চলিক গান পরিবেশন করবেন সর্বজনবিদিত লোকসঙ্গীত শিল্পী সুষমা দাস, আঞ্চলিক গান পরিবেশন করবেন সিলেটের শিল্পী মো. শামীম আহমদ ও বাউল সূর্য্যলাল দাস।

সপ্তম দিন (২৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় চলচ্চিত্র দিপু নাম্বার টু, আন্ডার কন্সট্রাকশন, অনিল বাগচীর একদিন।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাঁশি শোনাবেন মনিরুজ্জামান, ভজন ও কীর্তন পরিবেশন করবেন শারমিন সাথী ইসলাম ও বিজন চন্দ্র মিষ্টি। রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন শামা রহমান এবং রবীন্দ্র ও আধুনিক গান পরিবেশনায় থাকবেন ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য।

অষ্টম দিন (১ মার্চ, বুধবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৮টায় চলচ্চিত্র আমার বন্ধু রাশেদ, রানওয়ে এবং তিতাস একটি নদীর নাম।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টা ২০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকছে অ্যাকাডেমি ফর মণিপুরি কালচার এন্ড আর্টস এর পরিবেশনায় মণিপুরি নৃত্য, রাগাশ্রিত সঙ্গীত পরিবেশন করবেন প্রিয়াঙ্কা গোপ, বুলবুল ইসলামের কন্ঠে থাকবে রবীন্দ্র সঙ্গীত। জ্যোতি চক্রবর্তীর পরিবেশনায় থাকছে রবীন্দ্র ও আধুনিক গান।

নবম দিন (২ মার্চ, বৃহস্পতিবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টায় চলচ্চিত্র রিনা ব্রাউন এবং ৭টা ১৫ মিনিটে লোকনাট্যদল ঢাকার পরিবেশনায় মঞ্চ নাটক কঞ্জুস।

হাছন রাজা মঞ্চে বিকাল ৪টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ সিলেটের শিশুদের দলবদ্ধ পরিবেশনা, শিশুতীর্থের পরিবেশনায় গীতিনাট্য। নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রাকিবা ইসলাম ঐশী, ভাওয়াইয়া পরিবেশন করবেন সাইফুল আলম রাজা, ফেরদৌস আরার কন্ঠে থাকছে নজরুল সঙ্গীত। ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী হৈমন্তী শুক্লার কন্ঠে পরিবেশিত হবে আধুনিক গান এবং বাউল গান পরিবেশন করবেন ভারতের পার্বতী বাউল।

দশম দিন (৩ মার্চ, শুক্রবার)

সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টায় চলচ্চিত্র ঘাসফুল এবং ৭টা ১৫ মিনিটে নাট্যদল সুবচনের পরিবেশনায় মঞ্চ নাটক মহাজনের নাও।

হাছন রাজা মঞ্চে বিকাল ৪টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গীতবিতান বাংলাদেশের শিশুদের পরিবেশনায় সঙ্গীত ও কবিতায় ঋতুরঙ্গ, অনিন্দিতা চৌধুরীর কন্ঠে থাকছে নজরুল সঙ্গীত। বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয় পরিবেশন করবে সেতার।

এরপর শেষদিনের সমাপনী অনুষ্ঠানের পর থাকছে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিবেশনায় রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং বাউল শফি মণ্ডলের কন্ঠে বাউল গান।

উৎসবের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দিনের কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, প্রথিতযশা মঞ্চ-অভিনেতা ও নির্দেশক শাঁওলি মিত্রসহ ভারতের ২৩ জন প্রাবন্ধিক, কবি ও সাহিত্যিক এবং নেপালের ২ জন বিশিষ্ট লেখক।

থাকছেন দেশের খ্যাতমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, শাহীন আখতার ও হরিশংকর জলদাস, প্রাবন্ধিক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সনৎকুমার সাহা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, রুবি রহমান, রবিউল হুসাইন, তারেক সুজাতসহ বাংলাদেশের মোট ৫০ জন কবি এবং লেখক।

এছাড়াও শাহ আবদুল করিম চত্ত্বরে প্রদর্শিত হবে সঙ্গীত যন্ত্র ও সিলেটের লোকগানের প্রদর্শনী, কুশিয়ারা কলোনেডে স্থাপত্য প্রদর্শনী, গুরুসদয় দত্ত চত্ত্বরে থাকবে হস্ত ও কুটির শিল্প এবং বেঙ্গল প্যাভিলিয়ন।

উৎসবের রাধারমণ দত্ত বেদীতে বসছে চিত্রশিল্পীদের আর্ট ক্যাম্প। বিশিষ্ট চিত্রকর রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, শহিদ কবির, রোকেয়া সুলতানা, জামাল আহমেদ, শিশির ভট্টাচার্য্য, তৈয়বা লিপিসহ ২৭ জন শিল্পী উৎসব চলাকালীন ‘সুবীর চৌধুরী আর্ট ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করবেন।

ইতোমধ্যে www.bengalculturalfest.com শুরু হয়েছে বিনামূল্যের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন। এছাড়াও মোবাইল থেকে bengal লিখে ৬৯৬৯ নাম্বারে মেসেজ পাঠিয়েও রেজিস্ট্রেশন করা যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত