নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ অক্টোবর, ২০১৫ ১৮:১৯

১৪ বছর ধরে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছে লিডিং ইউনিভার্সিটি, ব্যবস্থা নিচ্ছে ইউজিসি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর আইনে রয়েছে, সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে হবে। তবে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরও বিভিন্ন বিপনী বিতানের মধ্যে চালাচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থায়ী স্থাপন করলেও সেখানে নেই তেমন কোনো কার্যক্রম। শর্ত ভঙ্গের কারণে সম্প্রতি ইউজিসি লিডিং ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হ্ওয়া লিডিং ইউনিভার্সিটি প্রথমে বন্দরবাজারস্থ মধুবন শপিং সেন্টারের দুটি ফ্লোর নিয়ে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে। মধুবন মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে সম্প্রতি সুরমা টাওয়ার ও রংমহল টাওয়ারে স্থানান্তরিত করা হয় লিডিংয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। কামালবাজারে নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মিত হলেও শিক্ষা কার্যক্রমের প্রায় পুরোটাই চলছে নগরীর বিপনী বিতানগুলোতে।

জানা গেছে, স্থায়ী ক্যাম্পাস শহর থেকে দূরে হ্ওয়ায় সেখানে যেতে আপত্তি রয়েছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার শঙ্কায় কতৃপক্ষও কামালবাজারে স্থায়ী ক্যাম্পাসে সম্পুর্ণ কার্যকম চালু করতে অনিচ্ছুক বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি অস্থায়ী ঠিকানায় সাত বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে এমন ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় ইউজিসি। তবে ইউজিসির কোনো জবাব দেয়নি লিডিং ইউনিভার্সিটি। তাই সিলেটের এই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইউজিসির কর্মকর্তারা।

তবে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা ইউজিসির চিঠির জবাব পাঠিয়েছি। তবে চেয়ারম্যান দেশে না থাকা ও উপাচার্য পরিবর্তনজনিত কারণে কিছু দেরী হয়ে গেছে।
কবির হোসেন বলেন, কামালবাজারে আমাদের নিজস্ব বিশাল ক্যাম্পাস রয়েছে। সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম চলছেও। তবে এখনো ল্যাব স্থায়ী ক্যাম্পাসে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ইন্টারনের্টেও সমস্যা রয়েছে। তবে আমরা আশা করছি, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৭০ শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করতে পারবো।

গত ১৩ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি অথবা আংশিক যেতে পেরেছে তাদের সার্বিক অবস্থা রিপোর্ট আকারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে জমা দিতে।

শিক্ষামন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও লিডিং ইউনিভার্সিটিসহ তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো তথ্য প্রদান করেনি।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের ক্যাম্পাস পরিস্থিতির সার্বিক পরিস্থিতি রিপোর্ট আকারে জমা দিতে বললেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য না দিয়ে গৎবাঁধা বিভিন্ন রিপোর্ট পাঠায়। পরে ছয়টি প্রশ্নসংবলিত একটি চিঠি ৩৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায় ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ।

চিঠিটিতে জানতে চাওয়া হয়েছে নিজস্ব ক্যাম্পাসের স্থায়ী অবস্থান ও পরিমাণ, অবকাঠামো (বর্গফুটে), নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম (শতকরা), স্থায়ী ক্যাম্পাসে কী কী প্রোগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে, সেপ্টেম্বর '১৫-এর মধ্যে কত শতাংশ শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়েছে এবং পুরোপুরিভাবে ক্যাম্পাস স্থানান্তরের জন্য চাহিত সময়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মখলেছুর রহমান জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬টি ক্যাম্পাসের অবকাঠামোর সার্বিক চিত্র ইউজিসিতে জমা দিয়েছে। অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, লিডিং ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটি কোনো তথ্যই জানায়নি।

মখলেছুর রহমান বলেন, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বিদেশে আছেন। তিনি দেশে ফিরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত