নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ০১:২০

ভুল বাংলা বানান শুদ্ধ করছে কাকতাড়ুয়া

ফেব্রুয়ারি মাসের একদিন আগে ৩১ জানুয়ারি সিলেটের সংগঠন কাকতাড়ুয়া তাদের নিয়মিত কার্যক্রম- “বাংলা বানান শুদ্ধি” অভিযান চালিয়েছে।


ফেব্রুয়ারি মাসের একদিন আগে ৩১ জানুয়ারি সিলেটের সংগঠন কাকতাড়ুয়া তাদের নিয়মিত কার্যক্রম- “বাংলা বানান শুদ্ধি” অভিযান চালিয়েছে। শনিবার সকাল নটা থেকে শুরু হয়ে দুপুর দুইটা পর্যন্ত তাদের এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান ফয়সালের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ শুদ্ধি অভিযানে অংশ নেয়। 
শহরতলির বালুচর (নয়াবাজার) থেকে রংতুলি নিয়ে হাটতে শুরু করে অভিযাত্রী দলটি। সেনপাড়া, শিবগঞ্জ, মীরাবাজার, নাইওরপুল, জেলরোড, বারুতখানা হয়ে, ভুল বানান ঠিক করতে করতে তারা জিন্দাবাজার পৌঁছায়। জিন্দাবাজারের মুক্তিযোদ্ধা গলিতে বিভিন্ন প্রেসে হানা দেয় এবং প্রেসমালিকদের শুদ্ধ বাংলা বানানে শব্দ লেখার ব্যাপারে অনুরোধ করে।



বানান শুদ্ধ অভিযান নগরীর বিভিন্ন মুদি দোকান, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেক সারা ফেলেছে। উদ্যোগতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক দোকান মালিক তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। আবার অনেকে সহযোগিতার হাতও প্রসারিত করেছেন। নাইওরপুল এলাকার দোকানদার একরামুল ইসলাম বলেন, “আমি জানতাম আমার সাইনবোর্ডের বানানটি ভুল। করবো করবো করেও শুদ্ধ করছিলাম না। কাকতাড়–য়ার সদস্যদের অনুরোধে আজ বানানটি শুদ্ধ হলো।” বানান শুদ্ধির পরিকল্পনাকারী শুভ সারোয়ার বলেন-“ভাষার জন্য সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র বাঙ্গালীরাই প্রাণ দিয়েছে । যদিও বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, সামান্য অসচেতনতার জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রাপ্য মর্যাদা দিতে পারি না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ বাংলা বানানের ভুল। রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, দোকান, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে ফেইসবুক অবধি এসব ভুলের বিস্তার। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম, এসব ভুলের বিপরীতে একটা সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।”



শুদ্ধি অভিযান শেষ করে সবাই নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায় তারা। শহীদ স্তম্ভে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে স্যালুটও জানানো হয়। নিজেদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গায়ত্রী সুনন্দা বলেন- “আমরা রং তুলি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। পথিমধ্যে ভুলগুলোর জন্য মূল দায়ী যারা, অর্থাৎ আর্টের দোকান, প্রিন্টিং প্রেস বিবিধ প্রতিষ্ঠান, সেখানেও মালিক বা আর্টম্যানকে বাংলা বানান যাতে ভুল না করে সেরকম প্রচারনা চালাই। এই প্রচেষ্টা অনলাইনেও চলবে। আমাদের জ্ঞানে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে যাবো।” খোঁজ নিয়ে জানা যায় সাধারণত যে শব্দগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় এসেছে সে শব্দগুলোই বেশি ভুল হচ্ছে। ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান গুলোও অনেকের অজানা। বাংলা একাডেমি থেকে -িকার ও ী-কারের যে নিয়মগুলো দেয়া আছে সেগুলো অনুসরণ করছে না অনেকে। কাকতাড়ুয়ার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেন- আমরা ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম বানান শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলাম। গত এক বছরে অনেকবার এ কর্মসূচী চলেছে। আমরা চাই সারা বাংলাদেশে ভুল বানানগুলো ঠিক হয়ে যাক।” আগামী ২১ ফেব্রুয়ারিতে, ২০১৫ তারিখ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সারা বাংলাদেশে নিজ নিজ এলাকায় বানান শুদ্ধি অভিযান শুরু হোক এমন অনুরোধ করেছেন সিলেটের কাকতাড়ুয়ারা।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত