নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:৪৭

আন্দোলনকারীদের মেডিকেল সাপোর্ট ‘বন্ধ’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদেরকে দেওয়া মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধের অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে থেকে যে মেডিকেল টিম উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছিলেন, তারা সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) ভোররাত আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আয়োজিত জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানানো হয়।

সেসময় তারা আন্দোলন বিষয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেন এবং অনশনকারীদের জীবনঝুঁকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে বলেন, 'অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তারা সবাই খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন। তারা অর্গান ড্যামেজের ঝুঁকিতে আছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'অনশনকারীদের মেডিকেল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিনিয়র চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, অনশন দীর্ঘায়িত হলে যেকোনো মুহূর্তে হার্ট ফেইলিওরসহ কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।

এর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না। ২৩ জানুয়ারি দুপুরের পর শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে তা না হওয়ায় তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধের ঘোষণা দেন।

মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অনশনকারীদের মধ্যে ১৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকি ১০ জন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত