নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০৬:৩৬

তোমরা ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট করে দিয়েছ: শিক্ষার্থীদের জাফর ইকবাল

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী-আন্দোলনে দেশের ৩৪ উপাচার্যের (ভিসি) ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।

বুধবার ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেই ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ঢাকা থেকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড ইয়াসমিন হক। তারা পায়ে হেঁটে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে যান। টানা দুই ঘণ্টারও বেশি কথা বলার পর ড. জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিণী ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙতে রাজি করান শিক্ষার্থীদের।

সকাল ৮টার দিকে ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী হাতে পানি পান করে বা অন্য কোনো আয়োজনে অনশন ভাঙবে বলে কথা দেয় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের সব অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে গণমাধ্যমগুলোর সামনে কথা দিয়েছ, এই অনশন ভাঙবে। তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান। একজন মানুষের জন্য তোমরা জীবন দিয়ে দেবা এটা মানা যায় না। সাবেক ৫ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে। যেহেতু মামলা করা হয়ে গেছে তো আদালতে তোলা হবে। তারা কথা দিয়েছেন ছাত্রদের জামিন দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আসলে এসেছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে। আমি খুব ইমোশনাল, আমার চোখে পানি চলে আসে। ওরা (সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থী) টাকা-পয়সা দেওয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছে। তোমাদেরকে সাহায্য করতে যদি অ্যারেস্ট হতে হয় তাহলে আমি হব।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীর একটা স্মারকগ্রন্থে আমার কাছে একটা লেখা চেয়েছিল। সেই লেখাটার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আমাকে দশ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হইছে। আমি এই সম্মানীর টাকাটা নিয়ে আসছি, এই আন্দোলনের ফান্ডে এই টাকাটা দিচ্ছি, তোমরা রাখো। এবার পারলে আমাকে অ্যারেস্ট করুক। সাবেক শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে সহায়তা করায় অ্যারেস্ট হলে আমাকেও অ্যারেস্ট করুক। আমি দেখতে চাই সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কিনা।’

আপ্লুতকণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আইজিপিকে বলেছি, ছাত্রদের বিশ্বাস করুন। ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তাদের মারবেন না। সবার হাতে স্মার্টফোন থাকে একটা ছবি দেখান যে, ছাত্ররা গুলি করেছে। এসবের কোনো প্রমাণ নেই।’

ছাত্রদের উদ্দেশে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা টের পাচ্ছ না তোমরা কী করেছে। ৩৪ জন ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। তোমরা সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ে নাড়া দিয়েছ। আমি ধরে নিয়েছিলাম, অনশনের এখানে মেডিকেল টিম আছে। তারা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, ডাক্তাররা ছিলেন কিন্তু তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে এখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আমি এসব ঘটনা বলব। এখানের অনশনকারীদের অবস্থাই যখন এতো খারাপ, তাহলে অসুস্থ ২০ জনের কী অবস্থা! আমি শঙ্কিত। এটা চরম অমানবিকতা। ’

‘তোমাদের আমি অভিনন্দন জানাই। এমন আন্দোলনে বাইরের মানুষ নিজেদের স্বার্থে নিয়ে নেয়। তোমরা সেটা হতে দাওনি। আমি বহিরাগত। এরপরও তোমরা যদি আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেব।’

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত