নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ১৮:১৯

জাফর ইকবালকে ইমেরিটাস অধ্যাপক চান শাবি শিক্ষার্থীরা

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে তাদের দাবি ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হকের নিয়োগ।

শুক্রবার দুপুরে সিলেটের সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার আবেদীন বৈঠকে বসার আগে তাদের আট দফার দাবিগুলো।

সেগুলো হলো—উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সিলেটে পৌঁছান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তার সঙ্গে আছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল ইসলাম নওফেল।

উল্লেখ্য, শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। এরপর পুলিশ ৩০০ জনকে আসামি করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ফরিদ উদ্দিন আহমদ। ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। ২৩ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অবরুদ্ধ উপাচার্যের জন্য প্রক্টর, শিক্ষক সমিতির নেতা ও দুজন কাউন্সিলর খাবার নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের বাধায় তারা বাসভবনে ঢুকতে পারেননি। ২৮ ঘণ্টা পর ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেন তারা।

২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হকের হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচটি দাবি সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য তুলে দেন। এরপর ৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, অসুস্থতার কারণে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়ে প্রক্টরের পদ থেকে বৃহস্পতিবার আলমগীর কবীরকে অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবির মধ্যে জহির উদ্দিন আহমদ ও আলমগীর কবীরের অপসারণও ছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত