নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ২০:৪১

শাবি ভিসিকে ‘দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার’ পরামর্শ শিক্ষামন্ত্রীর

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি—এমন একটি দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে টানা কর্মসূচির মধ্যে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় সফরের দিকে তাকিয়ে ছিল শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রী সেখানে কথা বললেন দুই পক্ষের সঙ্গেই। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানালেন না।

প্রথমে মন্ত্রী যান শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিয়ে বললেন, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির (আচার্য) কাছে তুলবেন। অন্যান্য দাবি পূরণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।

এরপর মন্ত্রী যান উপাচার্যের কার্যালয়ে। শিক্ষকদের সঙ্গে দীপু মনির বৈঠকে যোগ দিতে নিজ বাসভবন থেকে ২৬ দিন পর বের হয়ে সেখানে যান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সেখানে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এবার কিছু বলেননি দীপু মনি। প্রায় ১৫ মিনিটের আলোচনা শেষে উপাচার্যের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি। পরে কথা বলেন রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলেছেন।’

কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ‘মন্ত্রী বলেছেন, উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই (আচার্য) সব সিদ্ধান্ত দেবেন।’ ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন করতে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন—এমন একটি কথাও জানান আনোয়ারুল।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব ঘটনার জন্য শিক্ষার্থীসহ সবার কাছে উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার জন্য বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী, জানান অধ্যাপক আনোয়ারুল।

এরআগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দুপুরে সার্কিট হাউজে আলোচনায় বসেন মন্ত্রী। বৈঠক শেষে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতিই (আচার্য) উপাচার্যের নিয়োগ বা অপসারণের সিদ্ধান্ত দেন। এ কারণে শাবি উপাচার্যের অপসারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সব বক্তব্য রাষ্ট্রপতিকেই অবহিত করবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘তাদের (শিক্ষার্থী) যা যা বক্তব্য আছে, পুরো ঘটনা সম্পর্কে তাদের কী বলার আছে, তা সব বর্ণনা করেছে। তাদের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি।

‘তাদের যে দাবি আছে—পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, শিক্ষকতার মান, শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ কীভাবে উন্নত করা যায় সেসব তারা নিজেরাই চিন্তা করে বেশ কিছু প্রস্তাব দাঁড় করিয়েছে...। তাদের দাবিগুলোর বেশ কিছুই পূরণ করা হয়েছে। বাকি যেগুলো আছে তা সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পূরণের উদ্যোগ নেব।’

এরপর মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে জানান। সেইসঙ্গে দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দেন।

সার্কিট হাউসে দুপুরে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন। নতুন দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হকের নিয়োগ চান তারা। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার আবেদীন বৈঠকে বসার আগে জানান তাদের আট দফার দাবিগুলো।

সেগুলো হলো—উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।

শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন। ২৬ জানুয়ারি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে তারা এক সপ্তাহের অনশন ভাঙেন। সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য জাফর ইকবালের কাছে তারা পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো ছিল—উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সব আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া, পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন ও অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।

এর মধ্যে সেদিনই জামিন পান গ্রেপ্তার সাবেক শিক্ষার্থীরা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচও দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর গত রোববার ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ প্রক্টর আলমগীর কবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত