শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

১৪ জুন, ২০২৩ ২০:৪৪

একবেলার বৃষ্টিতে শাবিপ্রবিতে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি

সকাল থেকে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ফলে চলাচলে দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউভার্সিটি সেন্টারের সামনে, একাডেমিক ভবন বি, ডি, এ এর সামনে, চেতনা একাত্তরের সামনে, হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে, প্রথম ছাত্রী হল রোড়ে, শাহপরান হলের মধ্যবর্তী স্থানে গোড়ালি থেকে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠেছে। এতে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে অনেকে অর্ধভেজা হয়ে ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা দাপ্তরিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। কেউবা পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে রাস্তা পারাপার করছেন। অনেকে আবার এ দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোন কেন্দ্রীয় পয়ঃনিষ্কাষণ ব্যবস্থা নেই। ছোট ছোট যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলো অপরিষ্কার আর মাটি ভরাট হয়ে আছে। যার ফলে ড্রেনগুলো দিয়ে ঠিকঠাকভাবে পানি বের হতে পারছে না। ফলে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া একাডেমিক ভবন ডি এর এক্সটেনশন ভবন, বেগম ফলিলাতুন্নেছা মুজিব হল হওয়ায় এসব স্থান দিয়ে আগের মত পানি চলাচল করতে পারছে না। ফলে পানিগুলো ক্যাম্পাসে এসে জমাট হয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে।

হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় অর্ধ ভিজা হয়ে আসা সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৮ সেশনের এক শিক্ষার্থীর সাথে। তিনি বলেন, আজ (বুধবার) দুপুরে আমাদের টার্ম টেস্ট ছিল, তাই ক্যাম্পাসে আসতে হয়েছে। ক্যাম্পাসে এসে দেখি সব জায়গায় পানি। ফলে ভিজে ভিজে হলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। আর এখন ক্যাম্পাসে অল্প বৃষ্টি হলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। তাই প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র কর্মচারী বলেন, গতবছর বন্যার জন্য ক্যাম্পাসে হাটু থেকে কোমর অব্দি পানি হয়েছে। এবছর তো এখনো বন্যা হয়নি, তবুও রাস্তায় হাটুঁ পরিমান পানি হয়ে গেছে। না জানি বৃষ্টির দিন আসলে কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যে ড্রেন আছে তা অনেকদিন ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তাই পানি বের হতে না পেরে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

প্রথম ছাত্রী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন বলেন, ক্যাম্পাসে অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। আমাদের হলের রাস্তায়ও হাঁটু পরিমান পানি হয়েছে। দুই-এক বছর আগেও এমন পরিস্থিতি ছিল না। ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। তাই বৃষ্টির পানিগুলো ভালোভাবে যেতে পারছে না। মনে হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে ভবনগুলো তৈরি হওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তোরনের জন্য সেন্ট্রাল ড্রেনের ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। আর এখন যে ভবনগুলো তৈরি করা হচ্ছে তার আগে উচিত ছিল ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা। তখন এ সমস্যা আর তৈরি হত না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শহিদুর রহমান বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের দুইপাশে অনেক খালি জায়গা রয়েছে। তবে দুই পাশের পানি বের হওয়ার জন্য যেরকম ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ফলে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। তাই ক্যাম্পাসে যে কালবার্ট ও অভ্যন্তরীণ ড্রেন আছে তা আরো বাড়ানো দরকার। অন্যথায় দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফজলুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো কাজ হচ্ছে, মাটি ভরাট হচ্ছে, যার ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। এটা খুব বড় ইস্যু না, আমরা চাইলে তাৎক্ষণিক কোন ব্যবস্থা নিতে পারব না, তবে সমস্যাগুলো অবজারবেশন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ সম্যার মূলে রয়েছে অপরিকল্পিত উন্নয়ন। কাজেই একটা প্রজেক্ট নেওয়ার আগে এটার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সাউন্ড সিস্টেম, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছু বিবেচনা করে কাজ করতে হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত