হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি

১৯ মার্চ, ২০২৪ ২১:৫৬

ছাত্ররাজনীতি মানে ক্যাম্পাস ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা নয়: শাবিপ্রবিতে সাদ্দাম

ছাত্ররাজনীতি মানে ক্ষমতার দম্ভ দেখানো, পাওয়ার প্র্যাকটিস করা, ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা কিংবা শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ প্রয়োগ করা নয়। ছাত্রলীগে পদ-পদবি পাওয়া মানে নিজের রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করাও নয়। ছাত্র রাজনীতি হলো এমন একটি রাজনীতি যেটি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে, ক্যাম্পাস স্থিতিশীল ও পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করবে; এমনটি মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীসভায় এসব কথা বলেন কেন্দ্রীয় এ ছাত্রলীগ নেতা।

ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে সাদ্দাম বলেন, আমরা সব সময় বলি পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারের চেয়ে শিক্ষার ক্যারিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের সিভিল সোসাইটি মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি মানেই আগামী দিনের নেতৃত্বে তৈরির কারখানা হিসেবে কাজ করা। আমরা মনে করি, এসব সংজ্ঞা রাজনীতির সীমিত সংজ্ঞা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই সংজ্ঞাগুলোতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে।

ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে আপনারা দক্ষ হবেন, যোগ্য হবেন, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হবেন। এতে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়বে, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়বে, মানবিক কাজগুলো অনুভব করবেন, লেখাপড়া শেষ করে মানসম্মত চাকরির নিশ্চিত করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আপনারা নিজেদের তৈরি করুন। তবে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজনীতির কার্যকলাপ পরিবর্তন করতে না পারলে ছাত্ররাজনীতি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। সেজন্য মেধাভিত্তিক, সৃজনশীল ও দক্ষতাভিত্তিক নেতৃত্ব তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়ে রাজনীতি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগকে ক্ষমতার দম্ভ থেকে বেরিয়ে এসে নীতিগত রাজনীতি করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আধুনিক ও স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি তৈরি করা সম্ভব হবে। আমি বিশ্বাস করি, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আগামীতে স্মার্ট, আধুনিক এবং শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতির পথ দেখাবে। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গৌরব, দেশের অনেককিছুরই উদ্ভাবনে প্রথমের সাক্ষী। তাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিও স্মার্ট হবে। আগামী প্রজন্ম এ বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে, তাতে আপনাদের হাত ধরে এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে বলে আমি বিশ্বাসী।

কর্মী সম্মেলনে স্লোগানের পর স্লোগান দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, আপনারা এখানে সুশৃঙ্খলভাবে আছেন। তবে শুরু থেকেই একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, আপনাদের স্লোগান দিতে নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনারা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে সেটা কখনোই প্রত্যাশা করি না। আপনারা সংখ্যায় কতজন আছেন? এটা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনার পরিমিতিবোধ কেমন? ব্যক্তিত্ব কেমন? লিডারশিপ কোয়ালিটি কেমন? একথা শুনে হয়ত অনেকে হাততালি দিতে চেয়েছেন। তবে আপনাদের কখন কী করতে হবে, কী করতে হবে না, সেটা যদি বুঝতে না পারেন সেক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যাশিত স্মার্ট, মেধাভিত্তিক ও প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতি বাস্তবায়ন করা দুরূহ হয়ে পড়বে।

আপনারা যখন কারো নামে স্লোগান দেন। সেটা যখন বারবার দিতেই থাকেন, দিতেই থাকেন, সে স্লোগান তো কোন পলিটিক্যাল মেসেজ দেয় না। বরং আপনার স্লোগানের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিরক্তিবোধ করে প্রোগ্রামে আসতে আগ্রহ দেখাবে না।

ছাত্রলীগ যখন স্লোগান দিয়েছে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, তখন রাষ্ট্র ভাষা বাংলা কায়েম হয়েছে। স্লোগান দিয়েছে তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা তখন মাতৃতৃপ্তির অভ্যুদয় ঘটেছে। ছাত্রলীগ যখন স্বৈরাচারীর পতন চেয়ে স্লোগান দিয়েছে তখন বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করেছে। তবে আজকে আপনারা (ছাত্রলীগ কর্মী) যে স্লোগান দিয়েছেন সেটি আগামী প্রজন্মের জন্য কী বার্তা দিয়েছে? এর মাধ্যমে আপনাদের রাজনৈতিক ভাষাটিও আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।

এ স্লোগান দিয়ে আপনারা আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীর স্বপ্নের কথা বলেছেন? কোন সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কথা উচ্চারণ করেছেন? কোন কিছুই তো বলেননি। বরং আপনারা দিয়েছেন ব্যক্তির স্লোগান। ব্যক্তিগত স্লোগান বা রাজনৈতিক সর্বস্ব স্লোগান জননেত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তর করতে কোন ভূমিকাই রাখতে পারবে না। তাই আমাদের কোনটি করা উচিত, কোনটি করা উচিত না জানা খুবই জরুরি।

শাবিপ্রবিতে নারী ছাত্রলীগকর্মী না থাকার আক্ষেপ জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মীসভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থী খুবই নাজুক। এতে আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্তভাবে সংযুক্ত করতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ, আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ আধুনিক নয়। তাই সে মাত্রায় আমাদের ছাত্রীদেরও নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

কর্মী সভায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃতে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশের প্রথম স্মার্ট ক্যাম্পাস হিসেবে রূপান্তরিত হবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ প্রযুক্তিগত দিকসহ দেশের অনেক কিছুরই প্রথমের সাক্ষী এ শাবিপ্রবি। এরমধ্যে অন্যতম হলো প্রথম অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড, প্রথমবারের মতো সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, ড্রোন উত্তোলন, আন্তর্জাতিক জার্নালে সবচেয়ে বেশি গবেষণাপত্র প্রকাশ, শিক্ষা ও গবেষণায় উত্তরোত্তর সফলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দ্রুততম সময়ে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়ে ইনান বলেন, দীর্ঘ এক দশক ধরে কমিটি না থাকা গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিটকে আরও গতিশীল করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে। যারা ত্যাগী, স্মার্ট, পরিশ্রমী ও শিক্ষার্থীবান্ধব তাদের নিয়ে স্বপ্ন সময়ের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তাতেই বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন, শিক্ষা-গবেষণাসহ নানা কর্মকাণ্ড অবদান রেখে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ইনান।

দীর্ঘ ৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এ কর্মীসভায় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিপন মিয়া, আল আমিন রহমান, জয়নাল আবেদীন ও আবু সাঈদ কনক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও কাজল দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম, উপ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. নাজমুস সাকিব, উপ দপ্তর সম্পাদক বারেক হোসাইন আপন, সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক আকিব মোহাম্মদ ফুয়াদ প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত