রাবি প্রতিনিধি

১১ জুলাই, ২০১৭ ১৪:৩৬

ছাত্রলীগের হাতে কোনো শিক্ষার্থীই নিরাপদ নয়, রাবিতে মানববন্ধনে ক্ষোভ

বাস ভাঙচুরের ছবি তোলার ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ কর্তৃক দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরাফাত রহমানের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে মাত্র দুজন ছাত্রনেতার বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে রাবি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক সোহাগ বলেন, ‘যে ছাত্র সংগঠন শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির কথা বলে। সেই ছাত্র সংগঠন আজ একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপরে। আমাদের এখানে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। এ ছাত্র সংগঠনের কাছে এখন কোনো শিক্ষার্থীই নিরাপদ নয়।’

সোহাগ আরও বলেন, ‘আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে বলতে চাই, আপনারা মাত্র দুজন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছেন কিন্তু কেনো? গতদিন (হামলায় জড়িত) তো প্রায় ৮-১০ জন নেতা-কর্মী সেখানে ছিল। যাদের প্রত্যক্ষ মদদে আরাফাতের ওপর হামলা করা হয়েছে। মাত্র দুজনকে বহিষ্কারের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারেন না। আমরা চাই এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।’

আরাফাত রাহমানকে প্রথম মারধরকারীর নাম উল্লেখ করে রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক হুসাইন মিঠু বলেন, ‘আরাফাতকে কেন মারধরের শিকার হতে হলো তা ইতোমধ্যে সবার জানা। আমি স্পষ্ট করে বলছি, আরাফাতকে প্রথম ঘুষি মেরেছিল কানন! কানন মারার পর সে মাটিতে পড়ে যায়। এর পর বাকিরা তাকে বেধড়ক মারতে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা আসলে কোনো শাস্তি না। এটা একটা নাটক। তারা তাদের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আমাদের পদক্ষেপ নিব। আমরা এ অন্যায়ের বিচার নিয়েই ছাড়ব।’

মানববন্ধনে রাবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজ মিশু বলেন, ‘সাংবাদিকরা সংবাদ তৈরি করবে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এই যে, এই সংবাদ তৈরির কারিগররাই অনেক সময় সংবাদ হয়ে যায়। তেমনই গতকাল আরাফাত রহমানকে মারধর করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা প্রায়ই সন্ত্রাসী ভূমিকা পালন করে যা কখনই কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

এসময় আরও বক্তব্য দেন দৈনিক সমকাল-এর রাজশাহী প্রতিনিধি সৌরভ হাবিব, রাবি কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আব্দুল মজিদ অন্তর, ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সদস্য রাশেদ রিমন। রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি কায়কোবাদ আল মামুন খান, রাবিসাসের সভাপতি হাসান আদিব।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার সকালে বাস ভাঙচুর করছিল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান লাবণ, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাননসহ ১০/১২ জন নেতাকর্মী। এ ঘটনার করার ছবি তোলায় তাদের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হন আরাফাত। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়।

এঘটনায় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সোমবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাবি শাখার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন ও আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়কে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।

হামলার ঘটনায় সোমবার ( ১০ জুলাই) রাতে চার ছাত্রলীগ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনের নামে ‘হত্যাচেষ্টা’ মামলা করেন আরাফাত রহমান। মামলায় আসামিরা হলেন রাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আহমেদ সজীব, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত