রাবি প্রতিনিধি

৩০ জুলাই, ২০১৭ ১৭:৫০

‘শিক্ষকরা সেদিন মুখে কালো কাপড় বেঁধে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে’

‘শিক্ষকরা শুধু ক্লাস রুমে পড়াশোনা শেখান না। শিক্ষকরা শুধু আমাদেরকে ক্লাস আর পরীক্ষা শিখান না। শিক্ষকদের কাছ থেকে তো আমরা মানুষ হওয়ার মন্ত্র শিখতে চাই। তাদের কাছ থেকে চরিত্র শিখতে চাই, নৈতিক মূল্যবোধ শিখতে চাই। আর সেই শিক্ষকরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে শিক্ষার্থীদের ওপর ২ ফেব্রুয়ারি হামলা করেছে। পত্রিকাতে সেটার ছবিও এসেছ। সেটার কোনো বিচার হয়নি।’

রোববার (৩০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে প্রগতিশীল ছাত্র জোট রাবি শাখা। এর আগে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গ্রন্থাগারের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়।

২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নামে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।

তিনি আরও বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোন এক ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে অস্ত্রের ট্রেনিং নিয়েছে। এটার ছবিও পত্রিকার পাতায় ছবি আকারে এসেছে। আমরা এ ঘটনার কোন বিচার পাইনি। আজকের এ আন্দোলন কেবল মামলা প্রত্যাহারে আন্দোলন নয়, এ আন্দোলন এ বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষার, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন রক্ষার আন্দোলন। সেদিন হাজার শিক্ষার্থী নেমেছিল। তারা বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান করতে দিব না।’

প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জিলানী শুভ বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাব, রাষ্ট্রকে ক্রমাগত স্বৈরতান্ত্রিকতার চাদরে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদী আমলাতান্ত্রিক ধারার ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রকে চালানো হচ্ছে। আর সরকার এখন ছাত্রদেরকে প্রতিপক্ষ বিবেচনা করছে। কারণ যে একচেটিয়া কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতায়নের ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, স্বৈরতান্ত্রিকতার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন তার বিপরীতে কোনো দৃশ্যমান বিরোধী শক্তি এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবাদ করছে একমাত্র ছাত্ররা, তাই ছাত্রদেরকে নামে বেনামে কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে?’

এ সময় ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যারা প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি করে শিক্ষার্থীদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে, তাদের নামে কোন মামলা হয় না। কিন্তু যারা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, যারা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষার অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করে। তারা নাকি পুলিশকে হত্যার চেষ্টা করেছিল!

জানা যায়, ২০১৪ সালে ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত অবস্থায় তাদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ বাহিনী ও তৎকালীন ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী। পরে ছাত্র ফেডারেশনের পাঁচ, ছাত্র ইউনিয়নের দুই, ছাত্র ফ্রন্টের এক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর তিন ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ মোট ২৫ জনকে আসামী করে পুলিশের কাজে বাঁধা, আগ্নেয়াস্ত্র বহন, ভাঙচুর ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে চারটি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে ভাঙচুর ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তাদেরকে আগামীকাল (৩১ জুলাই) রাজশাহী কোর্টে হাজিরা দিতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল কবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স প্রমুখ।

এসময় ২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের দাবি জানান বক্তারা।

বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী রাবি শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডির সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশন বিশ^বিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক উৎসব মোসাদ্দেক, ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি কিংশুক কিঞ্জল, সাধারণ সম্পাদক সুমন মোড়ল, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এম এ শাকিল হোসেন, ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি লিটন দাসসহ প্রগতিশীল ছাত্র জোটের প্রায় সকল নেতাকর্মী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত