রোববার বেলা ১১টা। শুরুতে কয়েকজন দলে দলে শিক্ষার্থী ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১০ মিনিট যেতে না যেতেই কয়েকশো শিক্ষার্থী। এরপর তা হাজারে। শুরুতে তারা দাঁড়িয়ে গাইলেন সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে কোটা সংস্কারের দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে দেখা গেছে এ দৃশ্য।

এরপরই শুরু হয় কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে একের পর এক বক্তব্য। তারা কেউ কোটা পদ্ধতির বিপক্ষে নন। তবে সেটা ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই, কোটা পদ্ধতির সংস্কার চাই’ স্লোগানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রোববার বেলা ১১টায় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধন শেষে একটি মৌন মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলো মেধায় নিয়োগ দেয়া, চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার নয়, কোটায় কোন বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা নয় এবং চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ।

মানববন্ধনে সালাউদ্দিন সায়েম নামের ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষার্থী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জানিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ এ কোটা বৈষম্য থাকতো না। আমরা চাই না কোটা পদ্ধতি বাতিল হোক, আমরা চাই কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা হোক। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের নিজের স্বার্থে যুদ্ধ করেনি, তারা সাধারণ জনগণের জন্য যুদ্ধ করেছে, তারা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে যুদ্ধ করেছেন।’

এ সময় আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আজ সামাজিক প্রতিবন্ধী। আমরা গ্রামের কৃষক মা-বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পড়াশোনা করছি। কিন্তু এই কোটা ব্যবস্থার যাতাকলে আজ আমরা পিষ্ট হচ্ছি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের স্বপ্নকে ভাঙা হচ্ছে। আমরা এ বৈষম্যের সংস্কার চাই।’

মানববন্ধন থেকে কোটা পদ্ধতি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৪ মার্চ) আবারো মানববন্ধনের ঘোষণা দেয়া হয়।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুচিতা রায়ের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম মোর্শেদ, দর্শন বিভাগের মামুনুর রশিদ, সুমাইয়া রহমান, ফিরোজ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের রাশেদুল ইসলাম মুবিন, অর্থনীতি বিভাগের জুয়েল মামুন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মমিনুল ইসলাম, মাসুম মোন্নাফ, ইতিহাস বিভাগের ইন্দ্রজিৎ, সমাজকর্ম বিভাগের ফজলে রাব্বি, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের খাদিজা আক্তার প্রমুখ।