নিউজ ডেস্ক

২৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ২১:৫৯

শাবিতে জাফর ইকবালের জন্মদিন পালন

শিক্ষার্থীদের সাথে ড.মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

শাবিপ্রবির সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রিয় শিক্ষক ড.মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ৬২ তম জন্মদিন পালন করেছে । গতরাতে প্রথম প্রহরে কেক কাটার মধ্য দিয়ে এই গুণী মানুষের জন্মদিন উৎসব পালন শুরু করে তাঁর শিক্ষার্থীরা । জাফর ইকবালের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার ভক্ত অনুরাগীরা ফেসবুক ও টুইটারে দিনভর তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান । জাফর ইকবালের ছাত্র এবং বর্তমানে সিএসই বিভাগের বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষক সাহিদুল ইসলাম সুমন তার ফেসবুকে লেখেন - 
অনেকের মতে জাফর ইকবাল কল্পনাবিলাসী - বাস্তবতা ভুলে অদ্ভুত স্বপ্নের ফেরী করে বেড়ান!

"জাফর ইকবাল তার কল্পনাবিলাসিতা সবচেয়ে বেশী ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছেন শাবিপ্রবিতে এবং ওখানকার সিএসই ডিপার্টমেন্টে। শুরু থেকে আঠারো বছর ধরে উনার চালানো সিএসই ডিপার্টমেন্ট এখন দেশের অন্যতম সেরা (মতান্তরে সবচেয়ে সেরা)। আর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যে শাবিপ্রবি এত অল্প বয়সেই অনেক শ্রদ্ধার একটা জায়গা করে নিয়েছে, তার পেছনেও এই জাফর ইকবালের ভূমিকাই অন্যতম।

বাস্তবতা না বুঝে কল্পনার জগতে থেকেই যদি এতো কিছু করা যায়, তাহলেতো মনে হয় বাস্তবতা একটু কম বুঝাই ভালো!

শুভ জন্মদিন স্যার।"

সিএসই বিভাগের ছাত্র সুদীপ্ত কর লেখেন-
"

ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টার চলে। সার্কিট ল্যাবে কাজ করতেসি। একটা গ্রাফ আকা লাগবে। একটু ভেজাইল্যা গ্রাফ। এক্স এক্সিসের ইউনিট ঠিক করা নিয়ে কনফিউশনে পড়লাম। স্যারের কাছে গিয়ে বললাম এই সমস্যা। স্যার টানা দশ মিনিট ঝাড়ল। একটা কথাই মনে আছে। তোমাকে কি আমি এখন গ্রাফ আকা শিখাবো? না পারলে তোমার উচিত ক্লাস ফাইভে ভর্তি হওয়া। তার পরে আমি বাকী ৩ বছরে কোন টিচারের কোন ক্লাসে প্রশ্ন করার সাহস পাইনাই।
ইন্টার সেমিস্টার ফুটবলে আমাদের ব্যাচ চ্যাম্পিয়ন হলাম। স্যার ডিপার্টমেন্ট হেড হিসাবে প্রাইজ দিতে মাঠে আসছেন। আসার পর নিজেই ফুটবল নিয়ে কতক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করলেন। আমরা এই দৃশ্যে মহাখুশি। আবেগে কাইন্দালচি এই রকম অবস্থা।

সেকেন্ড ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টারের শেষ দিকে একটা আকাম করলাম। বহিষ্কার হয়ে যাবো যাবো সিচুয়েশন। স্যার ক্লাসে এসে প্রায় আধাঘণ্টা ঝাড়লেন। তারপর বললেন তুমি আমার রুমে আসবা। তোমার বাসায় জানাবো। ৩০৯ নাম্বার রুম থেকে বের হয়ে স্যারের পিছন পিছন হাঁটা শুরু করলাম। স্যার হাঁটতে হাঁটতেই প্রশ্ন করলেন, আমাকে বোঝাও এইটা করসো কেন? আমি মেজাজ সামলাইতে না পাইরা বলে ফেললাম ছোটবেলা থেকে আপনার বই পড়ে বড় হইসি তো, এই জন্য সত্যি কথা বলার আগে ভয় লাগেনা। স্যার ধুম করে দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর বললেন, যাও ক্লাসে যাও।

২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর বেলা। কাদের মোল্লার রায় দিছে। মাথামুথা গরম। ডিপার্টমেন্টে গেলাম। স্যারের রুমে গেলাম। গিয়ে বললাম, স্যার কিছু একটা করেন। কি করবো এইটা বলেন। স্যার বললেন, তোমরা ইয়াং জেনারেশন। ডিসিশন তোমরা নেবে। আমার কাছে ঠিক মনে হলে আমি তোমাদের পিছনে পিছনে থাকবো।

সাস্টের সিএসই ডিপারটমেন্টের বয়স অনেক কম। সেই তুলনায় সাফল্য অনেক। ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে এটা কেন সম্ভব হয়েছে। স্যার কোন ম্যাজিক দেখান নাই, এক্সট্রা কিচ্ছু করেন নাই। উনি শুধুমাত্র উনার দায়িত্ব পালন করেছেন। উনি উনার স্টুডেন্টদেরকে বিশ্বাস করেন। যে যেটা করতে চায় তাকে সেটা করতে দেন। এই জন্য যা যা লাগে উনি চুপচাপ সাপ্লাই দিয়ে যান। ক্রেডিট নিতে চান না। নাথিং। খালি উনি উনার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন। আর উৎসাহ দিতে জানেন।

আমার মনে আছে সেকেন্ড ইয়ারে থাকা অবস্থায় সিলেটের ডিজিটাল ইনোভেশন ফেয়ারে আমরা পুরস্কার পেয়েছিলাম। প্রোগ্রামে স্টল আমরা ক্লাসের ৪ জন ম্যানেজ করেছিলাম, প্রাইজ ও আমরাই নিয়েছিলাম। রাতে স্যারের কাছে ট্রফি দিতে গেলাম। সজীব স্যার আমাদেরকে দেখিয়ে বললেন এরা বাচ্চাকাচ্চারাই সব করেছে। স্যার হাসি দিয়ে বললেন, হুম এখন থেকেই অভ্যাস করো। পরে কিন্তু আমার আরও বড় বড় প্রাইজ লাগবে।

ডিপার্টমেন্টে ল্যাবে যখন আগে কাজ করতাম তখন থেকে এখন পর্যন্ত দেখে আসছি একাডেমিক, নন একাডেমিক যে কোন প্রজেক্টের কাজে স্যারের কাছে কিছু চাইলে যেমনেই হোক ম্যানেজ করে দেন। আমাদের ৩ তালার ৫ টা ল্যাব ২৪*৭ খোলা। পোলাপান কাজ করে। ডিপার্টমেন্ট ভালো না করার কারণ নাই।

ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম ক্লাসেই উনি নতুন পোলাপান কে বলে দেন, সরকারী ভার্সিটিতে তোমাদের পড়াশোনার টাকা দেয় রিকশাওলারা, গার্মেন্টসের শ্রমিকরা। সুতরাং তাদের টাকার ঋণ শোধ করা তোমাদের দায়িত্ব। নিজের জীবন, সুখ নিয়েই ব্যস্ত থেকোনা। তোমাদের মাথায় দেনার বোঝা আছে।

শুভ জন্মদিন জাফর ইকবাল স্যার।
অনেক কিছু শিখিয়েছেন।

"

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত