নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ আগস্ট, ২০১৫ ০০:৩৩

‘হামলাকারীদের’ দিয়েই ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি!

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। নিজেরা হামলার সাথে জড়িত নয় দাবি করে হামলাকারীদের খুঁজতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষকদের অভিযোগ, হামলাকারীদের দিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। সরাসরি হামলায় অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের অনেকে কমিটিতে রয়েছেন বলে দাবি শিক্ষকদের।

রবিবার বিকেলে শাবিপ্রবি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ পাঁঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানান।

শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিবন চক্রবর্তী পার্থকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে অন্যান্যদের মাঝে রয়েছেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, ১ম যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান।

তবে শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষকদের নেতা ফারুক উদ্দিন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আবু সাইদ আকন্দ, অঞ্জন রায় ও সাজিদুল ইসলাম সবুজ রোববার সকালে শিক্ষকদের উপর হামলায় সরাসরি অংশ নেন। এদের নেতৃত্বেই শিক্ষকদের উপর হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটিকে হামলার ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন এই শিক্ষক নেতা।

বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় তার দলের নেতাকর্মীরা জড়িত নন। কেউ যদি এত জড়িত থাকেন তবে তার দায় নিজেকেই নিতে হবে।

পার্থ আরও বলেন- শিক্ষকদের আন্দোলনের সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের উপর মিথ্যা বানোয়াট যে অভিযোগ উঠেছে তা খুবই দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যদি কেউ ব্যাক্তিগত ভাবে করে থাকে তবে তার দায়ভার একান্ত ব্যাক্তিগত। তারপরেও যদি ছাত্রলীগের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তবে সাংগঠনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি দাবি করেন- কিছু অনুপ্রবেশকারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ব্যবহার করে এই হামলা করতে পারে। তবে দলে কোন অনুপ্রবেশকারী থাকতে পারে চিন্তায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে রোববার সকালে ভিসিবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ব্যানার কেড়ে নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

রবিবার সকাল আটটায় প্রশাসনিক ভবন-২(উপাচার্য ভবন) এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় অধ্যাপক মো. ইউনুছসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত হন অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব ঘোষিত একাডেমিক কাউন্সিল ঠেকাতে রবিবার সকাল ৯টা থেকেই প্রশাসনিক ভবন-২(উপাচার্য ভবন) এর সামনে অবস্থান কর্মসূচী ছিল আন্দোলনকারী 'মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ' শিক্ষক পরিষদের।

অন্যদিকে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি ঠেকাতে সকাল ৭টা থেকেই একই স্থানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পরে সকাল সাড়ে ৭টায় আন্দোলনকারী শিক্ষকরা উপাস্থিত হলে ছাত্রলীগের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে দাবী করলেও ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় ও যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ উপস্থিত ছিলেন।

সকাল আটটায় উপাচার্য তার কার্যালয়ে উপস্থিত হলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা এ সময় উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বাধা দিতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল করে জোরপূর্বক উপাচার্যকে নিয়ে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ‘শাবিপ্রবির মাটি/ছাত্রলীগের ঘাঁটি’ স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলাও চালায়। ছিনিয়ে নেয় শিক্ষকদের ব্যানার। দিনভর ক্যাম্পাসে বৃষ্টিতে ভিজে এ ঘটনার প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত