নিজস্ব প্রতিবেদক

৩১ আগস্ট, ২০১৫ ১৩:২১

আমি থাকবো না, চলে যাবো : প্রতিবাদ সমাবেশে জাফর ইকবাল

আপনাদের যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি থাকবো না, চলে যাবো। তবে যাওয়ার আগে দেখে যেতে চাই আপনারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন। এরআগেও এখান থেকে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা হয়েছে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা সেটা করেছে। আমি তাদের কাছৈ মাথা নত করিনি। এখন চলে গেলেও স্বান্তণা থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বলে দাবিদারদের সময়েই চলে গেলাম। এখন গেলে যে সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে তাদের কাছে মাথা নিচু করে বিদায় নেয়া হবে।

ক্ষোভ, অপমান আর কষ্ট নিয়ে এই কথাগুলো বললেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আজ ১২টায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ সমাবেশে এমন আবেগময় কথা বলেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এই শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ এই সমাবশের আয়োজন করে।

সমাবেশে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, এর আগে আপনাদের কর্মসূচীতে আমি কখনো আসিনি। কারণ সবসময় বলা হয়, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। রাজনীতি করছি। সবাই বলে, 'এই দম্পত্তি' চলে গেলেই ভালো। এতো অপমান নিয়ে থাকা যায় না। একবার চলে যেতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এমন একটা নাটক তৈরি করলো সে জন্য আর যাওয়া গলো না।

তিনি বলেন, এসব কারনে আপনাদের দাবির প্রতি সমর্থন থাকলেও আমি আসতাম না। কিন্তু যখন শিক্ষকদের উপর হামলা করা হলো তখন আর বসে থাকতে পারলাম না।

তিনি বলেন, আমি একমাত্র মানুষ যাকে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, হেফাজত, আওয়ামী লীগ, বাম সংগঠনগুলো একযোগে অপছন্দ করে। এখন আওয়ামী লীগও অপছন্দ করে।

এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমি সবার কাছে ক্ষমা চাই, আমরা এখানে এমন কিছু ছাত্র সৃষ্টি করেছি যাদেরকে ব্যবহার করা যায়, যারা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে। এই ব্যর্থতার দায় আমার।'

জনপ্রিয় এই লেখক বলেন, শরীরে আঘাত লাগলে সেরে যায়। শরীরের ব্যথা ভালো হয় কিন্তু মনের ব্যথা ভালো হয় না। আমাদের মনে আঘাত লেগেছে।

প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা হয়। অথচ সবাই বসে বসে সে দৃশ্য দেখে। কেউ প্রতিবাদ করে না।

জাফর ইকবাল বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে সূবর্ণ সময় এখানে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে উৎপাদনশীল সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটেছে। তাই যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়টা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখন খুব কষ্ট লাগে। এখন বুড়ো হয়ে গেছি, আর সহ্য করতে পারি না।

উপাচার্যবিরোধী চলমান আন্দোলন নিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, এটা বোকাদের আন্দোলন। এরমতো বোকাদের সমাবেশ আর নাই। ক্লাস পরীক্ষা সবকিছু ঠিকঠাক মতো নেওয়া হচ্ছে আবার আন্দোলনও হচ্ছে- এদশে এভাবে কখনো দাবি আদায় হয় না। এমন অহিংস আন্দোলন কর্মসূচী দেখে মহাত্মা গান্ধিও লজ্জ্বা পেতেন। অথচ এই আন্দোলন কর্মসূচীর বিরুদ্ধেই ছাত্রলীগ লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের উপর হামলা করা হয়েছে।

ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করনে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তবে সব বিভাগের পরীক্ষা কর্মবিরতির আওতামুক্ত ছিলো। কর্মবিরতি শেষে তারা মিছিল ও সমাবেশ করেন। বিশ্বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে মিছলটি শুরু হয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

সমাবেশে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’-এর নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সৈয়দ সামসুল আলম, অধ্যাপক ইয়াসমিন হক, অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ শরাফউদ্দিন, অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম দিপু, আব্দুল্লাহ আল শোয়েব, এমদাদুল হক, মোস্তফা কামাল মাসুদ, আল আমিন রাব্বী, সৌরভ রায় প্রমুখ।

রোববার সকালে ভিসিবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ব্যানার কেড়ে নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রবিবার সকাল আটটায় প্রশাসনিক ভবন-২(উপাচার্য ভবন) এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় অধ্যাপক মো. ইউনুছসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত হন অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত