নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০০:০৯

হামলা ‘তদন্তের দায়িত্বে থাকা’ শাবির ৩ ছাত্রলীগ নেতাকে হামলার দায়ে বহিস্কার

শিক্ষকদের উপর হামলার দায়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) তিন ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বহিস্কৃত তিনজনই শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন। হামলাকারীদের খুঁজে বরে করতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো বলে দাবি করেছিলো শাবি ছাত্রলীগ।

সোমবার (৩১ আগস্ট) সাময়িক এ বহিস্কারাদেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই তিন নেতাকে শোকজও করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সোমবার বিকেলে ছাত্রলীগ থেকে ‘আগাছা’ পরিস্কারের নির্দেশ দেওয়ার পর পরই এ বহিস্কারাদেশ আসল। এর আগ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও শাবি ছাত্রলীগ হামলার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছিলো।

বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সাইদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায়, ১ম যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ।

এ তিনজনই হামলা পরবর্তী শাবি ছাত্রলীগ কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন। গত রবিবার বিকেলে শাবিপ্রবি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছিলেন।

তবে শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষকদের নেতা ফারুক উদ্দিন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আবু সাইদ আকন্দ, অঞ্জন রায় ও সাজিদুল ইসলাম সবুজ রোববার সকালে শিক্ষকদের উপর হামলায় সরাসরি অংশ নেন। এদের নেতৃত্বেই শিক্ষকদের উপর হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেন তিনি।

এনিয়ে রোাবার রাতে সিলেটটুডে-তে ‘হামলাকারীদের দিয়েই ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি!' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এর আগে রবিবার (৩০ আগস্ট) সকালে ভিসিবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ব্যানার কেড়ে নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

রবিবার সকাল আটটায় প্রশাসনিক ভবন-২(উপাচার্য ভবন) এর সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় অধ্যাপক মো. ইউনুছসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। লাঞ্ছিত হন অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ব ঘোষিত একাডেমিক কাউন্সিল ঠেকাতে রবিবার সকাল ৯টা থেকেই প্রশাসনিক ভবন-২(উপাচার্য ভবন) এর সামনে অবস্থান কর্মসূচী ছিল আন্দোলনকারী 'মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ' শিক্ষক পরিষদের।

অন্যদিকে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি ঠেকাতে সকাল ৭টা থেকেই একই স্থানে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। পরে সকাল সাড়ে ৭টায় আন্দোলনকারী শিক্ষকরা উপাস্থিত হলে ছাত্রলীগের সাথে বাক-বিতন্ডা হয়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী বলে দাবী করলেও ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ, সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় ও যুগ্ম সম্পাদক সাজিদুল ইসলাম সবুজ উপস্থিত ছিলেন।

সকাল আটটায় উপাচার্য তার কার্যালয়ে উপস্থিত হলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আন্দোলনকারী শিক্ষকরা এ সময় উপাচার্যকে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে বাধা দিতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল করে জোরপূর্বক উপাচার্যকে নিয়ে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

এ সময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ‘শাবিপ্রবির মাটি/ছাত্রলীগের ঘাঁটি’ স্লোগান দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলাও চালায়। ছিনিয়ে নেয় শিক্ষকদের ব্যানার। দিনভর ক্যাম্পাসে বৃষ্টিতে ভিজে এ ঘটনার প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত