নিজস্ব প্রতিবেদক

০১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৪:০৮

ক্লাসরুমে যেতে পারছেন না, ক্লাস নেবেন সিঁড়িতেই

‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’ প্ল্যাকার্ড হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহকর্মীদের সম্পর্কে ‘বাজে মন্তব্য’ করার অভিযোগে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের আগস্টে সিন্ডিকেটের সেই সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এরপরও ক্লাসে ফিরতে বাধার শিকার হয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন রুশাদ ফরিদী। তারপরেও কোন কাজ হয়নি বলে এবার ক্লাসরুম না পেয়ে সিঁড়িতেই ক্লাস নিতে যাচ্ছেন ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়িতে রোববার (১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় তার এই ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক ইভেন্ট খুলেছে।

এই ইভেন্ট নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করেছেন ড. রুশাদ ফরিদীও। এতে তিনি লিখেন, ক্লাসে ফিরতে না পারলেও ক্লাসের বাইরে সিঁড়িতে ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। উদ্যোগী ছাত্রদের অনেক ধন্যবাদ।

তিনি আরও লিখেন, এই গল্পটা আগেও বলেছি আবারো বলছি। ফেইসবুকে একটা মিম দেখেছিলাম যেখানে হুডি পরা এক লোক বেশ ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তার নাম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। একজন এসে তার হুডি তুলে দেখে ভেতরে আসলে লেখা: স্ট্যাটিস্টিক্স। এই যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব যেটা ঘটছে ডেটা সায়েন্স, মেশিন লার্নিং, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ঘিরে, তার মূলে কিন্তু এই পরিসংখ্যান। অথচ এই পরিসংখ্যান আমাদের বেশীরভাগের কাছে বেশ বিরক্তিকর একটা বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। আমার চেষ্টা থাকবে একটা ভিন্ন এপ্রোচ নেয়ার।

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, উচ্চ আদালতের এ–সংক্রান্ত রায়ের কপিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো পায়নি। তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালতের আদেশটির কপি পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷’

রুশাদ ফরিদীর অভিযোগ, মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল৷ অর্থনীতি বিভাগের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে কয়েকজন সহকর্মী প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ করেন। উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি ক্লাসে ফেরার সুযোগ পেলেও এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন না। বিভাগের পক্ষ থেকে তার কাগজপত্র গ্রহণ করা হচ্ছে না। আদালতের রায়ের কপি না পেলেও নিজের আইনজীবীর স্বাক্ষর করা রায়সংক্রান্ত কাগজপত্র বিভাগে জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ক্লাসরুমের বাইরে সিঁড়িতে তার এই ক্লাস নেওয়াটা প্রতিবাদ স্বরূপ হলেও সিরিয়াস ক্লাস নেওয়া হবে বলেন ড. রুশাদ। পরিসংখ্যান বিষয়ের এ ক্লাস দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে প্রায় ৪০ মিনিটের মতো তা স্থায়ী হতে পারে বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত