খালেদ মুহিউদ্দিন

১১ এপ্রিল, ২০১৯ ১৩:৪৮

পোড়া ফর্মুলা

আমি দুই মেয়ের সঙ্গে থাকি। সকালের স্কুল, রাতের অফিস, পরীক্ষা ইত্যাদি কারণে ছোটজনের সঙ্গে খুব আলাপ হয় না ইদানীং। পুরো সপ্তাহ জুড়ে বড়জন খুব বিচলিত-নুসরাতের মৃত্যুতে যা আরও তীব্র।

মেয়েটা মরে যাওয়ার পরে অনেকেই দেখছি বেদনায় আচ্ছন্ন।

৬ এপ্রিল মেয়েটার গায়ে আগুন লাগার পর যখন জেনেছি তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে তখন থেকেই মেয়েটার যন্ত্রণার শেষ চেয়েছি। কারণ এতখানি পোড়ার পরও যদি সে অলৌকিক কিছুতে বেঁচে যেতো, নিশ্চিত জানি আমরা তাকে মেরে ফেলতাম।

পাঁচদিন সে মরে নাই এর মধ্যে আমরা খুঁড়ে খুঁড়ে কত কিছুই না বার করেছি। আরও নিশ্চয়ই করতাম। তার জ্ঞান ছিল, সে নিশ্চয়ই জানতো তার বিরুদ্ধে মিছিল হচ্ছে। যারা সেই মিছিলে সামিল হচ্ছেন আর যার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে অভিযোগ সেই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তারা সকলেই তো এই দেশেরই মানুষ।

আমরা কোনো কিছু নিয়ে সর্বোচ্চ আলোড়িত হই, কিছু একটা দাবি করি আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাই। তারপর আমরা আর আগ্রহ পাই না। পাই। যদি জানতে পারি ঘটনার পেছনে একটা বা অনেকগুলো অন্য ঘটনা আছে।

তাই কিছু নিয়ে অনেককে আলোড়িত হতে দেখলেই আমার সংশয় হয়, মনে হয় দ্রুত আমরা একটি এন্টি থিসিস বানিয়ে ফেলব। খুঁজে বার করবো স্থান, কাল, পাত্র, পোশাক বা ক্ষমতার কোনো সাব টেক্সট। তারপর অন্যদের বিভ্রান্তিতে ফেলব আর নিজেরা আরও বেশি বিভ্রান্ত হয়ে যাব।

তার চেয়ে আমাদের চলতি ফর্মুলাই ভাল। প্রথমে ঘাগুলো ব্যান্ডেজে ঢেকে রাখুন, পরে কাফনে মুড়িয়ে মাটি চাপা দিন।

  • খালেদ মুহিউদ্দিন: নির্বাহী সম্পাদক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন

আপনার মন্তব্য

আলোচিত