বিনোদন ডেস্ক

০৪ মে, ২০১৬ ০০:৩৯

এমপির নামে অবৈধ গাড়ি, স্বামীসহ পলাতক মডেল মুন

সংসদ সদস্যের (এমপি) পরিচয়ে কার্নেট (শুল্কমুক্ত) সুবিধায় বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করে সেটি ব্যবহার করছেন ভিন্ন কোনো ব্যক্তি। একই রকম সুবিধায় বিদেশি পর্যটকদের জন্য আমদানি করা গাড়িও চালাচ্ছেন ভিন্ন ব্যক্তি। মিথ্যা ঘোষণা দিয়েও মূল্যবান গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে। এভাবে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র।

অবৈধ এসব গাড়ি প্রশাসনের নজর এড়াতে সংসদ সদস্য স্টিকার লাগিয়ে প্রকাশ্যেই চলাচল করছে। সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দারা এমন বেশ কিছু তথ্য পেয়ে ধারাবাহিক অভিযান শুরু করেছেন। গত ছয় মাসে গোয়েন্দারা সাতটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দও করেছেন।

সম্প্রতি গুলশান থেকে এমনি একটি পোরশে মডেলের গাড়ি জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা পুলিশ। গাড়িটির মালিক মডেলকন্যা জাকিয়া মুন ও তার স্বামী, ব্যবসায়ী সাইফুল আজম মহসিনকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

গত ৬ এপ্রিল গুলশান ১ নম্বর এভিনিউয়ের ৩৩ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর প্লটের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গাড়ি আটক করা হয়।

মুন ২০১২ সালে ‘মিস অদ্বিতীয়া বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। তিনি প্যসিফিক গ্রুপের মালিক শফিউল আজমের স্ত্রী। তাদের গাড়িটি বৃটিশ রেজিস্ট্রেশন প্লেট দিয়ে চালানো হতো। এর নম্বর- এসএফ০৫এইউএম। ৩২০০ সিসির এ গাড়িটি কার্নেট দি প্যাসেজ সুবিধায় বাংলাদেশে আনা হয়েছিল।

গত ২৪ এপ্রিল গুলশানের ২৪ নম্বর রোডের আজাদ মসজিদের পাশে ১১ নম্বর বাড়ি থেকে আরেকটি পোরশে জিপ জব্দ করা হয়। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এই গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আবদুল মতিনের নামে কেনা হয়। ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর আবদুল মতিনের নামে গাড়িটি কেনা হয়েছিল। পরে প্রেসটিজ মটরসের কাছে মাত্র ৮০ লাখ টাকায় এবং সেখান থেকে এবেলেকো ইন্ডাস্ট্রির কাছে গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। সাড়ে ৪ হাজার সিসির বিলাসবহুল এই গাড়িটির মোট শুল্ক ৫ কোটি টাকা। আবদুল মতিন ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ ১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ গত শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অ্যাপোলো হাসপাতালের পার্কিং থেকে একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ি জব্দ করা হয়। টানা তিন দিন অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দারা গাড়িটির সন্ধান পান।

সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কার্নেট সুবিধায় (শুল্কমুক্ত) গাড়িটি আমদানির পর অবৈধভাবে সংসদ সদস্য স্টিকার লাগিয়ে চালানো হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে এই রেঞ্জ রোভার গাড়িটি জব্দ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয় শুল্ক গোয়েন্দারা। তবে সেখানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অবৈধ মদ জব্দ করা হয়। পরে গাড়িটির নম্বর প্লেট বদল এবং এমপি স্টিকার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জব্দকৃত গাড়িটির মূল্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ‘অবৈধভাবে আমদানি ও মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বেশ কিছু দামী গাড়ি চলছে। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। শনিবার একটি রেঞ্জ রোভার গাড়ি জব্দ করা হয়। আগে এই গাড়িটিতে এমপি লেখা স্টিকার থাকলেও পার্কিংয়ে রাখার পরে তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গাড়িটির আসল নম্বর -ঢাকা মেট্টো শ ০০-০১৫১। পার্কিংয়ে রাখার পর এই নম্বরটি পরিবর্তন করে শেষে ৫০৩ বসানো হয়েছে। তবে পার্কিং রেজিস্টারের আগের নম্বরটিই ছিল।

ড. মইনুল খান আরো বলেন, গোপন খবর ছিল- হোটেল রিজেন্সি’র পার্কিং এরিয়ায় গাড়িটি লুকানো রয়েছে। হোটেলের পরিচালক আরিফ মোতাহার দীর্ঘদিন গাড়িটি অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে গোয়েন্দা টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে গাড়িটি সরিয়ে ফেলা হয়। তখনো গাড়িতে সংসদ সদস্য লেখা স্টিকার ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ি উদ্ধারের অভিযানের সময় রিজেন্সিতে তল্লাশি চালিয়ে ব্ল্যাক লেভেল, রেড লেভেল, হান্ড্রেড পাইপার, টিচার্স, বিভিন্ন ব্রান্ডের হুইস্কি ও বিয়ারসহ বিপুল পরিমাণ মদ পাওয়া যায়। এসব মাদকদ্রব্যের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি হোটেল কর্তৃপক্ষ। এরপর গাড়িটি খুঁজে বের করতে ধারাবাহিক অভিযান চলে। এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, পর্যটকদের বিশেষ সুবিধার সুযোগ নিয়েও কর ফাঁকি দিয়ে দেশে শতাধিক বিলাসবহুল গাড়ি চলছে। এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পর ধারাবাহিক অভিযান শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। গত ছয় মাসে রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে আরো ছয়টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়; যেগুলোর বৈধ নথিপত্র এবং শুল্ক ছাড়পত্র ছিল না।

শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক একটি সনদ অনুযায়ী যে সুবিধায় পর্যটকরা একটি দেশ থেকে অন্য দেশে শুল্ক না দিয়েই গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারেন, তাকেই ‘কার্নেট ডি প্যাসেজ’ বলা হয়। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ সুবিধা পান পর্যটকরা। এতে তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পর গাড়িটি ফেরত না গেলে সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়ম অনুযায়ী এর ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়।

কর্মকর্তারা আরো জানান, ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সালের দিকে বাংলাদেশে বেশ কিছু দামি গাড়ি কার্নেড দি প্যাসেজের আওতায় আনা হয়। পরে গাড়িগুলো ফেরত না নিয়ে এখানে বিক্রি করা হয়। গাড়িগুলো কেনার পর এসবের ভুয়া রেজিস্ট্রেশনও করা হয়।

সূত্র জানায়, গত ১২ এপ্রিল বনানী থেকে জব্দ করা হয় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি। এরপর রাজধানীর গুলশান থেকে আরেকটি বিএমডব্লিউ গাড়ি জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা, যেটির দাম তিন কোটি টাকা। এ সময় গাড়ির মালিক জেনারেটর ও এলিভেটর ব্যবসায়ী কাজী রেজাউল মোস্তফাকে আটক করা হয়। এর আগে গত বছরও গুলশান থেকে একটি বিএমডব্লিউ ও ধানমন্ডি থেকে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ জব্দ করা হয়েছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত