বিনোদন ডেস্ক

০১ আগস্ট, ২০১৬ ১২:০০

ফিল্ম রিভিউ: উড়তা পঞ্জাব

পরিচালনা: অভিষেক চৌবে

অভিনয়: শাহিদ কপূর, করিনা কপূর খান, আলিয়া ভট্ট, দিলজিত্‌ দোসাঞ্জ

বাস্তব বড়ই রূঢ়, বড় কঠিন, সেটা মেনে নেওয়া বোধহয় আরও কষ্টসাধ্য। আর সেই কঠোর বাস্তবচিত্র যদি চলচ্চিত্রের মতো কোনও গণমাধ্যমের দ্বারা প্রচারিত হয়, তাহলে কয়েকজন মানুষের (পড়ুন, সেন্সর বোর্ড অধিকর্তাদের) আঁতে বেশ বড়সড় ঘা লাগে। সেই কারণেই এত বিধিনিষেধ— এত কাটছাঁট করার আজ্ঞা। তাও ‘রাখে হরি মারে কে’ প্রবাদবাক্যটি স্মরণ করিয়ে শেষমেশ নির্ধারিত দিনেই মুক্তি পেল ‘উড়তা পঞ্জাব’ ছবিটি। মুক্তির আগেই যে-ছবি এক প্রকার আন্দোলন সৃষ্টি করেছে তার জন্য ছবির নির্মাতাদের ছবি প্রচারের খরচ বেশ খানিকটা লাঘব হয়েছে। সে জন্য অবশ্য তাঁদের সেন্সর বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আবার একথাও সত্যি যে, প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির আগের দিনই ছবির প্রিন্ট ইন্টারনেটে মুক্তি পেয়েছে। তবু দমানো যায়নি মানুষের উত্‌সাহ। সেকথা প্রমাণ হয়েছে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের ভিড়ে।

ছবিটির বিষয়বস্তু সামাজিক। ভারতের পঞ্চনদীর রাজ্য পঞ্জাবের তরুণ প্রজন্ম যেভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে তার বাস্তবচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে এই ছবিতে। চারজন প্রধান চরিত্র— পপ-তারকা টমি সিংহ (শাহিদ) একজন মাদকাসক্ত যাঁর ভক্ত তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশই ড্রাগের কবলে আক্রান্ত, কুমারী পিঙ্কি (আলিয়া) একজন বিহারি হকি খেলোয়াড় যে রোজগারের টানে পঞ্জাবে চলে আসে, সরতাজ সিংহ (দিলজিত্‌) একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর এবং প্রীত সাহানি (করিনা) একজন চিকিত্‌সক যিনি মাদকাসক্তদের চিকিত্‌সা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এই চারজনের ভিন্ন পথ, ভিন্ন কাহিনি এক হয়ে যায় ছবির গতিপথের সঙ্গে।

ছবিটি অনেকটা ছোটগল্পের ধাঁচে নির্মিত। তাই দর্শক হিসেবে মনে হতেই পারেই কেমন যেন হঠাত্‌ শেষ হয়ে গেল! কোনও পরিণতি কি আদৌ পেল? কিন্তু বাস্তবও তো তাই। পরিণতি কি সেখানেও মেলে? যত বড় সেলিব্রেটিই হোক, পুলিশের হেফাজতে এলে সে সাধারণ মানুষই। অসহায় নারীকে একলা পেয়ে দুষ্কৃতিরা তার ফায়দা লোটার চেষ্টায় মত্ত হয়, সেই মুহূর্তে কোনও ‘হিরো’ তাঁকে রক্ষা করতে আসে না। কোনও পুলিশ ইন্সপেক্টর ব্যক্তিগত অনুসন্ধান করলে তিরস্কারই জোটে তাঁর কপালে আবার কোনও ডাক্তার তাঁর রোগীকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর হলেও ঘটনাচক্রে নেশাগ্রস্ত রোগীই হয়ে যেতে পারে তাঁর প্রাণনাশের কারণ— এ সবই বাস্তব। এ সবই ধরা পড়েছে ছবিতে। এ ছবি যেন সমাজের দর্পণ, ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী এই ছবির ব্যখ্যা হয়। কারও কাছে শুধুই গালিগালাজে ভরা একটি ছবি আবার কারও কাছে নিটোল বাস্তবের খণ্ডচিত্র।


‘ইশকিয়া’ ও ‘ডের ইশকিয়া’ খ্যাত পরিচালক অভিষেক চৌবে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন বিশাল ভরদ্বাজের অনেকগুলি ছবিতে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাঁর কাজ তাই ছবিতে অনেক জায়গায় বিশালের কাজের ছায়া রয়েছে। ছবির চিত্রনাট্য ও সম্পাদনা প্রশংসার দাবি রাখে। যেভাবে একের পর এক দৃশ্য রেখে তাঁদের মধ্যে ‘লিঙ্ক’ সৃষ্টি করা হয়েছে তা অতুলনীয়। শাহিদ ও করিনার অভিনয়ক্ষমতার জন্যই তাঁদের এই ছবিতে কাস্ট করা হয়েছে তবে আলিয়া অনবদ্য। ‘হাইওয়ে’র আলিয়ার আঁচ এ ছবিতে বিদ্যমান। তাঁর ভোজপুরী উচ্চারণ, তাঁর অসহায়তা, করুণ দৃষ্টি, বেঁচে থাকার আর্তি সব কিছুর জন্যই ছবিটি বারবার দেখা যায়।

পঞ্জাবের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা ও গায়ক দিলজিতের এটি প্রথম হিন্দি ছবি, অন্য চারজন তুখড় অভিনেতাদের মাঝে তিনি বেশ নজর কেড়েছেন। সংগীত এ ছবির একটি চরিত্র। অমিত ত্রিবেদীর ‘ডার্ক মিউজিক’ ছবির গতি, লয় ও ছন্দের মাত্রাবৃদ্ধি করেছে। পঞ্জাবি কবি শিবকুমার বাতালভির ‘এক কুড়ি জিদা নাম মোহব্বত’ কবিতাটি ছবির একটি গান। যা ঘুরে ঘুরে আসে গোটা ছবিতে। ছবি শেষ হওয়ার পরেও তার রেশ থেকে যায় দর্শকদের মনে। ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখলে আখেরে নিজেদেরই লাভ, আর ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড সংস্করণটি বরং ছবির রিপিট ভ্যালু বাড়াতে সহায়ক হোক!



-দেশ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত