সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ আগস্ট, ২০১৭ ২৩:০০

সহকারী পরিচালক থেকে নায়করাজ

ছিলেন সহকারী পরিচালক, সেই থেকে বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি পুরুষে পরিণত হন তিনি। বাংলাদেশের সিনেমাজগতের সবচেয়ে রোমান্টিক নায়ক ধরা হয় তিনি। তিনি রাজ্জাক। ভক্তদের কাছে যিনি নায়ক রাজ নামে পরিচিত।

এদেশের চলচ্চিত্রের ভিত্তি যে মানুষগুলোর হাত ধরে তৈরি হয়েছিল তাদেরই একজন নায়করাজ রাজ্জাক। দেশের কোটি ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে তিনি সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

সাধারণ আবদুর রহমান থেকে তিনি হয়েছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। দাপটের সঙ্গে ঢালিউডে রাজত্ব করেছেন টানা তিন দশক।

কিংবদন্তি এই অভিনেতা পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান ভারতের) কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্বরসতী পূজাতে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে বেছে নেন।

১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান তিনি। সাথে স্ত্রী ও প্রথম সন্তান বাপ্পারাজ।

প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।
সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক।

পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন-সহ আরও বেশ ক'টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন।

জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে।

তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।

এ প্রসঙ্গে রাজ্জাক এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘আমি দিনের পর দিন এফডিসিতে এসে পড়ে থাকতাম। অভিনয়ের সুযোগ চেয়েছিলাম, পাইনি। কিন্তু হতাশ হয়নি। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি। যা আয় হতো তা দিয়ে আমার সংসার চলত না। কিন্তু আমার স্ত্রী লক্ষ্মী কোনোদিন আমাকে নিরুৎসাহিত করেনি। সে পাশে ছিল বিধায় আজ আমি এত দূর আসতে পেরেছি।’

১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক সম্মাননা।

এছাড়াও, রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন।

তার প্রযোজনা সংস্থা রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নির্মাণ করেছিলেন।

এর মধ্যে - আকাঙ্ক্ষা, অনন্ত প্রেম, পাগলা রাজা, বেঈমান, আপনজন, মৌ চোর, বদনাম, সত্ ভাই, চাঁপা ডাঙ্গার বৌ, জীনের বাদশা, ঢাকা-৮৬, বাবা কেন চাকর, মরণ নিয়ে খেলা, সন্তান যখন শত্রু, আমি বাঁচতে চাই, কোটি টাকার ফকির প্রভৃতি।

১৯৭২ থেকে ’৮৯ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—স্লোগান, আমার জন্মভূমি, অতিথি, কে তুমি, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, প্রিয়তমা, পলাতক, ঝড়ের পাখি, খেলাঘর, চোখের জলে, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, ভাইবোন, বাঁদী থেকে বেগম, সাধু শয়তান, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, মায়ার বাঁধন, গুণ্ডা, আগুন, মতিমহল, অমর প্রেম, যাদুর বাঁশী, অগ্নিশিখা, বন্ধু, কাপুরুষ, অশিক্ষিত, সখি তুমি কার, নাগিন, আনারকলি, লাইলী মজনু, লালু ভুলু, স্বাক্ষর, দেবর ভাবী, রাম রহিম জন, আদরের বোন, দরবার, সতীনের সংসার, অন্ধ বিশ্বাস, জজসাহেব, বাবা কেন চাকর, পৃথিবী তোমার আমার, বাবা কেন আসামি, মরণ নিয়ে খেলা, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, বাপ বেটার লড়াই, পিতার আসন, পিতামাতার, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, ভালোবাসার শেষ নেই, ও হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ প্রভৃতি।

অসুস্থতার কারণে গত দু’বছর ধরে পরিবার থেকে তাকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেওয়া হচ্ছিল না। তবে তিনি ঈদুল ফিতরে তার ছেলে সম্রাটের পরিচালনায় দুটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত