বিনোদন ডেস্ক

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৬:০৭

সালমান খানকে ‘হত্যার হুমকি’

রাজস্থানের হরিণ শিকার মামলায় ফেসবুকে সালমান খানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ই টাইমস ও ডেকান ক্রনিকলের প্রতিবেদন অনুসারে লাল কালি দিয়ে 'ক্রস' চিহ্নিত সালমানের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে গ্যারি শুটার নামের একটা অ্যাকাউন্ট থেকে।

ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘সালমান, ভারতীয় আইন থেকে বেঁচে গেলেও ‘বিশনয়’ সম্প্রদায় তোর জন্য মৃত্যু ঘোষণা করেছে। এই আইনে তোর মৃত্যুদণ্ড হয়েছে।’

অবশ্য ক্যাপশন শেষ হয়েছে কিছু উপদেশ বাণী দিয়ে। শেষ লাইনে লেখা হয়েছে, ‘নারীদের সম্মান কর, মদ থেকে দূরে থাক, প্রাণীদের প্রতি দয়াশীল হ, আর গরিবদের পাশে দাঁড়া।’

অবশ্য এত দিনে মামলা, তদন্ত, আইনি জটিলতার মতো মৃত্যু পরোয়ানাও সালমান খানের জন্য ডালভাত হয়ে যাওয়ার কথা। কম তো মেরে ফেলার হুমকি পেলেন না তিনি। এর আগেও একাধিকবার মৃত্যু পরোয়ানার চিরকুট পৌঁছেছে সালমানের ঠিকানায়।

বলিউড তারকা সালমান খান আর মামলা যেন একে অন্যের পরিপূরক। সেই ১৯৯৮ সালের ঘটনা। রাজস্থানে ব্লকবাস্টার হিট ছবি 'হাম সাথ সাথ হ্যায়ে'র শুটিং করতে গিয়ে দুটি কৃষ্ণ হরিণ শিকার করে ফেঁসে যান তিনি। ২০ বছর পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে রায় হল সালমানের। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড। দীর্ঘদিন পর সেই রায়ে আদালতের বাইরে সে সময় উল্লাস করে মিষ্টি বিতরণ করেছে রাজস্থানের 'বিশনয়' সম্প্রদায়ের মানুষ।

এর মধ্যে ফুটপাতে গাড়ি উঠিয়ে মানুষ হত্যার মামলায় রেহাই পেয়েছেন তিনি। যোগ হয়েছে মুম্বাইয়ের একজন টেলিভিশন সাংবাদিক, অশোক পাণ্ডের মামলা। ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ৩২৩, ৩৯২ ও ৫০৬—এই তিনটি ধারায় যথাক্রমে মারধর, ছিনতাই ও হুমকির অভিযোগে মামলা করেছেন তিনি। নিম্ন আদালতে পাত্তা না পেয়ে গিয়েছেন উচ্চ আদালত পর্যন্ত। অবশেষে আদালত পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই ধোপে টিকছে না। এবার শোনা যাচ্ছে, আদালত কৃষ্ণ হরিণ শিকারের মামলা থেকেও অব্যাহতি দিতে যাচ্ছেন সালমান খানকে।

রাজস্থানের ডিসিপি ধর্মেন্দ্র যাদব অবশ্য বলেছেন, তারা গ্যারি শুটারের আড়ালে আসল মানুষটাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এটি কোনো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নয়। বরং একটা সম্প্রদায়ের। যাদের নাম ‘০০৭’ (জেমস বন্ডের কোড)। তবে কাউকে এখনো এই দলের সদস্য পরিচয়ে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত চলছে।’

১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজস্থানের যোধপুর কোর্টে প্রথম এই মামলা তোলা হয়। সালমান খানসহ শুটিং ইউনিটের সাইফ আলী খান, সোনালী বেদ্রে, টাবু, নীলম কোঠারির বিরুদ্ধে। তবে তদন্তে অন্য সবাই ছাড়া পেলেও এখনো মুক্তি মেলেনি সালমান খানের। সালমানকে তখন গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল, যদিও ১০ দিন পর জামিনে ছাড়া পান তিনি।

বিষ্ণুর পূজারি বিশনয় সম্প্রদায় কয়েক শ বছর ধরে ২৯টি রীতি অক্ষরে অক্ষরে মানার চেষ্টা করে। আর সেই সব রীতির মোদ্দা কথা প্রকৃতি, গাছ আর প্রাণী রক্ষা। বিশেষ করে কৃষ্ণ হরিণকে। বিশনয় সম্প্রদায় পবিত্র হিসেবে গণ্য করে, 'প্রায় বিলুপ্ত' এই হরিণের পূজাও করে। বর্ণচোরা এই কৃষ্ণ হরিণ বর্ষার শেষে পুরুষ চিংকারের রং থাকে কালো। কিন্তু শীতের সঙ্গে সঙ্গে রং হালকা হতে হতে এপ্রিল নাগাদ বাদামি হয়ে যায়।

প্রাচীন হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, এই কৃষ্ণ হরিণেরাই ভগবান কৃষ্ণের রথ টানত। তাই এই হরিণকে বাতাস এবং চাঁদের বাহন হিসেবেও মানা হয়।

সেই সব বিশ্বাস এবং ভক্তির কারণেই প্রভাবশালী বিশনয় সম্প্রদায় ২০ বছরেও এই মামলা নিয়ে হাল ছাড়েনি। আর সঙ্গে প্রাণী ও পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনকারীদের সাহায্য তো ছিলই। ২৭ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত