লিটন দেব জয়

৩০ জুলাই, ২০২১ ০১:৩৭

‘গরিবের ডাক্তার’ এজাজুল ইসলাম

তার সমমনা চিকিৎসকরা ফি নেন হাজার টাকা বা তারও অনেক বেশি। অথচ ঢাকা মেডিকেলের নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধানের পদ অলঙ্কৃত করা ডাক্তার এজাজুল ইসলাম ফি নেন দু'শ, তিন'শ টাকা। গরিব রোগীদের অনেক ক্ষেত্রে বিনা ফি'তেই চিকিৎসা করেন। তার চেম্বারের নেমপ্লেটের পাশে লিখা আছে 'গরিব রোগীর ফিস শিথিলযোগ্য'। এই একটি বাক্য তাকে পৃথক করেছে অনেক ডাক্তার থেকে! ইট-সুড়কির ব্যাংকে টাকার ব্যালেন্স না বাড়িয়ে এজাজুল ইসলাম মানুষের হৃদয়ব্যাংকে ভালোবাসা জমা করেছেন।

মহৎ এই সিদ্ধান্তের কারণে দিনে দিনে সাধারণ মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন 'গরিবের ডাক্তার'। অনেক রোগী তাকে দেখিয়ে এসে চোখ-মুখে চকচকে আনন্দ মেখে বলেন, 'ডাক্তার এজাজের কথা শুনলেই তো রোগ পঞ্চাশ পারসেন্ট ভালো হয়ে যায়।' এসব ঘটনা জেনে আমার মতো অনেকের মনও নিশ্চয়ই একশ' পারসেন্ট ভালো হয়ে গিয়েছিল? শুদ্ধতম আনন্দগুলো এভাবেই সংক্রমিত হয়।

বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে অনেক বছর আগে ডাক্তারদের ভিজিট ফি তিন'শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। দেশের সিংহভাগ ডাক্তার সে ভিজিট ফি দ্বিগুণ-তিনগুণ করে ফেলেছেন এখন। কিন্তু সমুদ্র হৃদয়ের অধিকারী ডাক্তার এজাজ তার ফি বাড়াননি। সবুজ এই বদ্বীপজুড়ে নিম্ন আয়ের মানুষই বেশি। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ অজস্র। তাদের সাধ্য নেই চিকিৎসার পেছনে এতো অর্থ ব্যয়ের। আহার জোগাতেই যাদের হাড়-মাংস এক হয়; চিকিৎসা সেখানে বিলাসিতার নামান্তর। ডাক্তার এজাজের বিষয়টা অজানা নয়। মানব দেহের রোগ সারিয়ে তোলা যার মহান ব্রত; তার মন তো লোভের ছায়ায় মলিন হতে পারে না। কলঙ্ক স্পর্শ করতে পারে না তার হৃদয়ের মহাভূমি।

এই চমৎকার মানুষটার ভেতর 'মহাকাব্যিক পরশপাথর' হুমায়ূন আহমেদ খুঁজে পেয়েছিলেন অনুপম এক অভিনেতাকে। ধারাবাহিক নাটক 'সবুজ সাথী' দিয়ে শুরু হয়েছিল এক অনবদ্য অভিনয় যাত্রা। 'শ্রাবণ মেঘের দিন', 'দুই দুয়ারী', 'চন্দ্রকথা', 'শ্যামল ছায়া', 'নয় নাম্বার বিপদ সংকেত', 'আমার আছে জল' দিয়ে এ যাত্রা হয়ে উঠেছিল আরও বর্ণিল। ক্রমেই সে যাত্রা সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠছে।

জনপ্রিয়তা এজাজুল ইসলামের কদম চুমেছে অবলীলায়। পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আর এ রকম হবেই না বা কেন? তিনি তো এর যোগ্য দাবিদারও বটে। নাটক সিনেমায় তিনি থাকা মানেই দর্শকদের বাড়তি আনন্দ উপভোগ করা। যাপিত জীবনের সব যন্ত্রণা ভুলে একটু খানি আনন্দে ভাসা।

এজাজুল ইসলাম এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন- "আমি ডাক্তার হিসেবেও ১০০ ভাগ হ্যাপি, অভিনেতা হিসেবেও শতভাগ হ্যাপি। আমাকে যদি বলেন, আমি পরের জনমে কী হতে চাই, তাহলে বলবো আমি পরের জনমেও এই এজাজই হতে চাই। অভিনেতা এজাজ হতে চাই, ডাক্তার এজাজ হতে চাই। আমার এই স্ত্রী বাচ্চা ও মাকেও পরের জীবনে পেতে চাই। কারণ এই জীবন আমার অনেক সুখের। আমি অনেক হ্যাপি।"

প্রিয় এজাজুল ইসলাম, দেশে আপনার মতো একজন মানুষ থাকাও পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমরাও প্রতিটি জনমে আপনার মতো মানুষের সান্নিধ্য চাই। আপনার অভিনয় দেখে বার বার আনন্দে ভাসতে চাই। হৃদয়ে মানবপ্রেম আঁকা এমন সোনার মানুষ আর কোথায় পাবো বলুন?

আপনার মন্তব্য

আলোচিত