উত্তম কাব্য

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৫:৪৩

কাশফুলের ডগায় দুলছে শরৎ

চলছে শরৎকাল। আকাশে, কাশবনে, ফেসবুকে- সবখানেই এখন শরতের আবহ।  

আকাশ নীল। পথের ধারে, নদীর কিনারে ফুটেছে সাদা কাশফুল। শরতের স্পর্শ পেতে তাই কাশফুলের কাছে দলে দলে ছুটছে মানুষ।

আর ফেসবুক তো এখন সাদা হয়ে গেছে কাশফুলে। সবার দেয়ালেই ঝুলছে কাশফুলের ছবি।

কয়েকদিন ধরেই সিলেটে কাঠফাটা রোদ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলছে এর তান্ডব। তাই বিকেলে একটু স্বস্তির  পরশ পেতে নগরবাসীরা ভীড় করছেন নগরের খুব কাছেই বেড়ে ওঠা কাশবনগুলোতে।

সিলেট শহরের কাছাকাছি মুলত দুই জায়গায় দেখা যায় বিশাল কাশফুলের সমারোহ।

সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ সুরমার ২৭ নং ওয়ার্ডে শিববাড়ি এলাকার একটু অদূরে রয়েল সিটি আবাসনের কাছেই দেখা ফিলে শরতের প্রতীক হয়ে উঠা কাশফুলের।

আর নগরের টিলাগড়ের পূর্ব শাপলাবাগ এলাকার মিরাপাড়ায় গিয়ে দক্ষিণ পূর্ব দিকেই দেখা মিলবে আরেকটি সুবিশাল সেই কাশবনের।

সম্প্রতি এই দুই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, বিকেলের শেষ রোদে  মানুষজন ভীড় করছেন এসব কাশবনগুলোতে। কাশফুলের পাশে ছবি তোলায় মত্ত সকলে। করোনাকালীন দীর্ঘ বন্দী জীবন পেরিয়ে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে ছুটে বেড়াচ্ছেন সবাই।

দর্শনার্থীদের বেশীর ভাগই এসেছেন শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরে। প্রত্যেকেই মোবাইলে ছবি তুলেছেন বিভিন্ন  ভঙ্গিতে। অনেকেই আবার চলে এসেছেন পূজার মডেল শুট করতে ডিএসএলয়ার ক্যামেরা নিয়ে।

গত শুক্রবার শিববাড়ী এলাকার অদূরে রয়েল সিটির কাশবন এলাকায় গিয়ে দেখা হয়ে হয় সাংবাদিক অদিতি দাসের সাথে।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা থেকে দুই দিন আগে সিলেটে আসি। এসে মনে হল ঢাকা থেকেও বেশী গরম সিলেটে। তাই একটু শান্তি পেতে ছুটে এসেছি এই কাশবনে। তবে বিকেল ৫ টায় যাওয়ার পরেও ভয়ংকর গরম অনুভব করেছি। যদিও শরতের এই অপরূপ কাশবন আর সুন্দর আকাশ দেখে ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। অনেক ইয়াং লোকজনের ভিড় ছিল। কাশবনে ছবি তোলা এখন রীতিমতো ক্রেজে পরিণত হয়েছে।

শনিবার টিলাগর এর পূর্ব শাপলাবাগ এলাকার কাশফুল এলাকায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন, ইমরান আহমেদ সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মুক্তি বড়ুয়া।

তিনি জানান, খুব ভালো লেগেছে এখানে এসে। শেষ বিকেলের আলো আর কাশফুল সত্যি মন কেড়ে নিয়েছে।

তবে মানুষ কাশফুল নষ্ট করছে এই বিষয়টা খুব বেদনাদায়। আমাদের প্রত্যেকেই প্রকৃতির কাছাকাছি আসা যেমন দরকার তেমনি এর বৈচিত্র্য সৌন্দর্য রক্ষা করাও জরুরী।

সেখানেই দেখা হয় নাটকর্মী কামরুল হক জুয়েল ও ফারজানা হক সুমী দম্পতির সাথে। তারা বলেন, জায়গাটা খুবই সুন্দর, প্রকৃতি আকাশ মনে হয় একসাথে মিশে গেছে। পাশ দিয়েই ছুটে চলেছে ছুট্টো একটি খাল। যা কাশবনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

তারা বলেন, কিছু মানুষ কাশফুল ছিড়ে  নিচ্ছে। অনেকে আবার পা দিয়ে মাড়িয়ে ভেঙে ফেলছে। অনেক জায়গায় দেখলাম আগুন দিয়ে ধরিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে কাশফুল। প্রাকৃতিক জায়গাগুলো মানুষ এভাবে নষ্ট না করলে খুব ভালো হতো। আমাদের আরো সচেতন হওয়া জরুরী।

যেভাবে যাবেন:

রয়েল সিটির কাশবন এলাকায় যেতে হলে সিলেটের শহর থেকে যে কোন ধরনের যানবাহন করে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে আসতে হবে। সেখান থেকে ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দিকে  সিএনজি অটোরিকশা বা লেগুনা দিয়ে আপনি রয়েল সিটিতে যেতে পারেন। আবার রিকশা নিয়েও যাওয়া যায়। নামতে হবে শিববাড়ী বাজার এর থেকে একটু দূরে রয়েল সিটি আবাসিক প্রকল্প এলাকায়। এর অপর প্রান্তেই রেললাইন এর পরেই রয়েছে কাশফুলের সমরোহ।

আর শাপলাবাগের কাশবনে যেতে প্রথমেই সিলেটের যে কোনো জায়গা থেকে আসতে হবে টিলাগড় পয়েন্টে। সেখানে এসে  পূর্ব দিকেই সিএনজি বা রিকশা দিয়ে চলে যেতে হবে পূর্ব শাপলাবাগ এলাকার মিরাপাড়ায়। সেখানে গিয়েই দক্ষিণ-পূর্ব দিকে তাকালেই দেখা যাবে কাশবনের আরেক রাজ্য।

এছাড়াও গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জে, বাদাঘাট এলাকায় ও শহরের টিভিগেইট এলাকার দিকেও কিছু কিছু কাশবন দেখা যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত