কামাল হোসেন, তাহিরপুর

১১ মার্চ, ২০১৫ ১২:৩৮

তাহিরপুরে তরমুজের বাম্পার ফলন

তরমুজ চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলানোর কথা জানিয়েছে প্রায় শতাধিক কৃষক

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় তরমুজ চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে চাষীরা।এ উপজেলায় এবছর তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ায় যেমন বেজায় খুসি তরমুজ চাষিরা তেমনি তরমুজ চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলানোর কথা জানিয়েছে প্রায় শতাধিক কৃষক। তবে তরুজের বাম্পার ফলন হলেও জেলা সদরের সাথে এ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এবং দেশে লাগাতার হরতাল অবরোধ থাকার কারণে কম দামে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

জানা যায়, ঢালারপাড় ও বিন্নাকুলি গ্রামের যাদুকাটা নদীরর্পূব তীরের সংলগ্ন জমি গুলো অতীতে উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটার উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের সাথে নেমে আসা বালি পড়ে দুধু বালি চরে পরিনত ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পাহাড়ী ঢলের সাথে ওই জমি গুলোতে পলি পড়ার কারণে এবছর যাদুকাটা নদীর তীরসহ ছোট-বড় কয়েকটি হাওরে তরমুজের চাষ করে বাম্পার ফলন পেয়ে চাষিদের চোখে মুখে যেন নতুন স্বপ্ন ফুটে উঠছে।

যাদুকাটা নদীর তীরসহ পুরো হাওর জুড়ে চোখ জুড়ানো সবুজ ঘাষের বুকে এ যেন বিধাতা  নিজের হাতে গড়া সাজিয়ে রাখা তরমুজের সারি , মনে হয় তরমুজের নিরব মিছিল কি অদ্ভুত প্রকৃতির এ সৃষ্টিকর্ম। তাহিরপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের ঢালারপাড়,লামাশ্রম, জঙ্গালহাটি, বিন্নাকুলি, মোদেরগাঁও ও করিমপুর এলাকাকে ঘিরে জাঙ্গাল ও বুরবুরিয়া হাওরে ১৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করেছে।

দেশে বিভিন্ন জেলার তরমুজ চাষীদের বাজারজাত করার পূর্বেই তাহিরপুরের তরমুজ চাষীরা সফল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জন করে গত ২০ জানুয়ারী হতে গ্লোরী.জাম্বু,ওরিয়ন,বাংলালিংকও ড্রাগন জাতীয় বিদেশী তরমুজ বাজারে ছেড়েছে। তরমুজ চাষী মারফত আলী, মিলন, ফারুক সহ অন্যান্য চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায় চলতি বৎসরে তাহিরপুর কৃষি অফিসের প্রযুক্তিগত সহায়তায় তরমুজ ফলনে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। প্রতি একর ভূমিতে ২০ হতে ২৫ হাজার টাকা খরচ করে আনুমানিক ৪ হাজার তরমুজ উৎপাদিত হয় যার আনুমানিক বিক্রয় মূল্য ৩/৪ লক্ষ টাকা।কিন্ত ব্যাপক আকারে তরমুজ চাষও দ্বীগুন ফলনের ফলে এবছর বাজার দাম কমে যায়। তবে কৃষকদের উপর এর প্রভাব পড়েনি কারন উন্নত প্রযুক্তি সহায়তার ফলে তরমুজ উৎপাদনে পুর্বের খরচের চেয়ে বর্তমানের খরচ কমে এসেছে এবং তরমুজের ফলন এবছ ভাল হওয়ার করণে। যদিও ঠান্ডা জনিত কারনে কোন কোন ক্ষেত্রে উৎপাদনে সামান্য পরিমানে ক্ষতি হলেও মারাত্মক কোন ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়নি চাষিদের। কারন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তরমুজ রোপন ওফলনের সময় টিএসপি,এমওপি ুসুপার জিপ সাম সার ফলনের পর জিংক মনো, ছত্রাক নাশক,মাকড় নাশক ওকীটনাশক ব্যবহার করেছিলেন।

চাষীদের মতে দেশের বাহির থেকে যেসব বীজ আমদানী হয় তা চলতি বছরে সময় মত হাইব্রীট জাতীয় বিভিন্ন বীজ পাওয়ায় পুর্বের চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে। তবে কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন ২ বছর পুর্বে কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক ডক্টর আফসারুজ্জামান এ হাওরে এসে স্থায়ীভাবে তরমুজ চাষীদের ফলনের সুবিধার্থে সেচ ব্যবস্থার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে এর কোন খোঁজ নেননি,  জাঙ্গাল হাটি গ্রামের তরমুজ চাষি বোরহান উদ্দিন বলেন, আমি এ বছর ৫ কেয়ার(৩০ শতকে এক কেয়ার) জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আমার প্রায় ১ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়েছে। এবছর তরমুজে তেমন কোন রোগ বালাই না থাকায় এবং ভাল ফলন হওয়ায় খরছ বাদেও আমার প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মত লাভ হবে। এবছর ভাল ফলন হওয়ার তাহিরপুর উপ সহকারী কৃষি অফিসার শামছুল আলম জানান সময়মত  নানান জাতীয় হাইব্রিট বীজ পাওয়ায় ও প্রাকৃতিক কোনরুপ প্রতিবন্ধকতা না থাকায় এবছর তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।  বিপণন সুবিধা পেলে চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি তরমুজ চাষে আরো বেশি উৎসাহিত হবে এবং উৎপাদনও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহ মোহাম্মদ মহফুজুল হক বলেন, উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের র্সাবক্ষনিক নজর ধারিতে জাঙ্গাল হাওর সহ বেশ কয়েকটি হাওরে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এখানে যদি সরকারিভাবে সেচের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ফলন আরও ভাল হত এবং কৃষকরা তরমুজ চাষে আরও অনুপ্রাণিত হত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত