নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুলাই, ২০১৬ ২১:৫২

বাড়ি নয় যেনো রাজপ্রাসাদ, নির্মাণ ব্যয় তিনশ’ কোটি টাকা

এ যেনো বাড়ি নয়, রীতিমত রাজপ্রাসাদ। বাড়িটির নির্মানশৈলি আর দামী আসবাবপত্র মুগ্ধতা ছড়াবে যে কাউকে। সিলেটের ইসলামপুর এলাকার 'কাজি ক্যাসল' নামের এই বাড়িটি নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিনশ কোটি।

সিলেটজুড়ে এখন এই আলিশান বাড়ি নিয়ে আলোচনা। প্রাসাদসম এই বাড়িটি দেখতে ভিড় করছেন অনেকেই।

বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই বাড়ির মালিক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড আল-হারামাইন পারফিউমস্ গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুর রহমান। তিনি এনআরবি ব্যাংকেরও চেয়ারম্যান।  তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক টানা তিনবার সিআইপি নির্বাচিত হন। মাহতাবুর রহমান ২০১৩ ও ১৪ সালে বাংলাদেশে সর্বাধিক রেমিটেন্স পাঠানোর স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক রেকমিটেন্স এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

আরও পড়ুন - সিলেটের প্রবাসীদের বাড়িবিলাস

মাহতাবুর রহমান মূলত প্রবাসী। দেশে এসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকার উদ্দেশ্যেই বাড়িটি নির্মান করেছেন তিনি।। চার দেশের প্রকৌশলীর নকশায় প্রায় আড়াইশ নির্মাণ শ্রমিকের ৮ বছরের পরিশ্রমে নির্মিত হয়েছে এই বাড়িটি।

প্রায় ৮ একর জায়গার উপর নির্মিত এই বাড়িটির ছাদে আছে হ্যালিপ্যাড, সুইমিংপুল, স্টিমবাথ, লিফটসহ আধুনিক স্নানাগার। ২৯টি মাস্টার বেডের ডিজাইন করা হয়েছে ২৯টি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে।

সিলেটের ইসলাম পুর এলাকায় ৩ তলা বিশিষ্ট এই বাড়ির কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। দুবাই, ফ্রান্স, লেবানন ও জার্মানি এই চার দেশের প্রকৌশলী দ্বারা বাড়িটি নির্মাণ করা হয় ।

এ বিষয়ে মাহতাবুর রহমান বলেন, প্রথমে আমি দুবাই থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে এসেছিলাম, উনি প্রথমে ডিজাইনটা করেছিলেন, পরবর্তীতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনটা দিয়েছিলাম একজন লেবানিসকে। পুরো বাড়িটির লাইটিং-এর কাজ করেছে জার্মানের কোম্পানি টিফেনি লাইটিং। আর ফ্লোরগুলো করে দিয়েছে ফ্রান্সের একটি কোম্পানী।

জানা যায় প্রায় ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে বিলাস বহুল এই বাড়িটি। নির্মাণ ব্যয় নিয়ে বাড়ির মালিক মাহতাবুর রহমানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নিজের ব্যবহারের জন্য বাড়ি করেছি তাই এইটা নির্মাণে কত ব্যয় হয়েছে আমি তা হিসেবে করে দেখিনি।

তিনি বলেন, এইটা যদি আমার ব্যবসা হতো তাহলে আমি হিসাব রাখতাম। কতদিয়ে কিনেছি আর কত বিক্রি করবো, লাভ ক্ষতির হিসাব রাখতাম।  বাড়ির প্রয়োজনে যখন যা লেগেছে আমি তা খরচ করেছি।

গত ৮ বছর থেকে এক নাগাড়ে ২শ ৫০ জন শ্রমিক নিরলস কাজ করে তৈরী করেছেন বাড়িটি। বর্তমানে বাড়ির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। ৩ তলা এই বাড়িটির বিল্ডার এরিয়া প্রায় ৮০ হাজার স্কোয়ার ফুট। ৫ হাজার মানুষের অনুষ্ঠান করার বন্দোবস্ত আছে এই বাড়িতেই। পারিবারিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক কক্ষ।

মাহতাবুর রহমান জানান, ২৯টি মাস্টার বেডের ডিজাইন করা হয়েছে ২৯টি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আলোকে।

ভবনের শুধু নিচ তলায় রয়েছে ৯টি ডায়নিং রুম, ১৪টি ড্রইং রুম, আছে দুটি লিফট, আভিজাত্যময় ইতালিয়ান বুক ম্যাচিং ওয়ান প্লেট মার্বেলের আধিক্য আছে পুরো বাড়ি জুড়ে।

বাড়ির ভেতরে সৌদিআরবের ওয়াকফ মন্ত্রনালয়ের উপহার দেয়া পবিত্র কাবা শরীফের দরজার রেপ্লিকাও রাখা হয়েছে যত্ন করে। সরাসরি না দেখলে বুঝানো যাবে না এই বাড়ির সৌন্দর্য। “কাজি ক্যাসল” নামের ফেসবুক পেইজে ঢুকলেও জানা যাবে এই বাড়ির খুটিনাটি। রাত হলেই বৈদ্যুতিক বাতির আলোক ঝলকানিতে আরো রঙিন হয়ে ওঠে বাড়িটি। তখন আরো মোহনীয় রূপ ধারণ করে এই প্রাসাদসম বাড়ি।

লোক দেখানোর জন্য নয় একান্নবর্তী পরিবারের সকলকে নিয়ে একসাথে থাকার জন্যই এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন বলে জানালেন মাহতাবুর রহমান।

ইউরোপভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে মাহতাবুর রহমান বলেন, আমি থাকার জন্য বাড়িটি তৈরী করেছি, রুচির মধ্যে যদি ভালো হয়ে যায় তাহলে আমার কিছু করার নাই।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে বড় বাড়ি বানাবো এইটা কখনোই আমার স্বপ্ন ছিলো না। আমার স্বপ্ন ছিলো আমার ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাই কোন একটা প্রোগ্রামে একসাথে থাকবো। সেইজন্যই বাড়িটি বানানো।

তথ্য সূত্র : চ্যানেল এস ইউকে, ছবি ঋণ : ফেসবুক

আপনার মন্তব্য

আলোচিত