নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ এপ্রিল, ২০১৫ ১৬:১৬

আটকে আছে আলী আমজদের ঘড়ির কাঁটা

নবাব আলী আমজাদের ঘড়ি/জিতু মিয়ার বাড়ি/বঙ্কু বাবুর দাড়ি। শত বছর পরেও সিলেটের এই প্রবাদটি লোকজন ভুলেনি। বর্তমানে হয়তো জিতু মিয়ার মতো অনেক বাড়ি ও বঙ্কু বাবুর মতো দাড়ি অনেকের আছে। কিন্তু নবাব আলী আমজাদের সেই ঘড়ির মতো ঘড়ি কেউ তৈরী করতে পারেনি। হয়তো পারবেও না কোনোদিন।

আজ ঐতিহ্য আর ইতিহাসের সাক্ষি সেই আলী আমজাদের ঘড়ির কাটা আটকে আছে।

একাধিকবার মেরামত করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে থেমে গেছে ঘড়ির কাটা। সিলেট নগরীতে প্রবেশকালে লোকজন ঘড়িটি ঠায় দাড়িয়ে দেখে ঠিকই। কিন্তু ঘড়ির কাটার শব্দ আর ঘন্টার ধ্বনি কারো কানে বাজে না। পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ঐতিহাসিক নবাব আলী আমজাদের ঘড়িটি আবার সচল করার দাবি করেছেন সিলেটবাসী।

১৮৭৪ সালের কথা। তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রুক সিলেট সফরে আসেন। তার সম্মানে কুলাউড়ার পৃথিম পাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান ঘড়িটি নির্মাণ করেন। সুরমা নদীর তীরে ও কীন ব্রিজের উত্তর ডান পাশে ঘড়িটির অবস্থান। আড়াই ফুট ডায়ামিটার ও দুই ফুট লম্বা ঘড়ির কাঁটা নির্মাণের পর থেকে সকলের নজর কাড়তে শুরু করে। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির ঘড়িটি আজ হয়ে উঠেছে সিলেটের ঐতিহ্য।

নবাব আলী আহমদ মনোরম স্থাপত্য শৈলীর পরিচায়ক ঘড়িটি নির্মাণ করলেও এর পরিচিতি পায় তার ছেলে নবাব আলী আমজাদের ঘড়িঘর নামে। লর্ড সাহেবের সম্মানে ঘড়িটি নির্মিত হলেও এ অঞ্চলের মানুষ ঘড়িঘরের সময় দেখে সে সময় আসা-যাওয়া ও কাজকর্ম সম্পাদন করতেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঘড়িঘরটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দীর্ঘদিন এটি অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকে। আশির দশকে প্রবাসীরা ঘড়িটি সংস্কার কাজে অর্থ ব্যয় করেন। ফলে কয়েক বছর সচল ছিলো ঘড়িটি। পরবর্তীতে ঢাকার একটি কোম্পানী ঘড়িটি মেরামত করে।

এর পর জাপানি সিজান কোম্পানি ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘড়িটি আবার চালু করে। চারপাশে বেষ্টনীর ওপর তিন ফুট উঁচু গ্রিল তৈরি করে ঘড়িটিকে সুরক্ষিত করা হয়। কিন্তু বছর না ঘুরতেই ঘড়িটির কাঁটা আবারও বন্ধ হয়ে যায়।

২০১০ সালে ঘড়িটি আবার সচল করে সিটি করপোরেশন। ছয় মাস যেতে না যেতেই এটি অচল হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ২০১১ সালে আবার ঘড়ি মেরামতের লক্ষ্যে ২৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে নগর ভবন। মেরামতের ৬ মাসের মাথায় ঘড়িটি অচল হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে অবস্থায় পড়ে আছে। থমকে দাড়ানো ঘড়ির কাটাটি আবার চলবে এমন প্রত্যাশা সিলেটবাসীর।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত