নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ০০:০৮

কাজিরবাজার সেতু : নগরে নতুন নিঃশ্বাস ফেলার স্থান

সিলেট নগরীকে যানজট মুক্ত করার জন্য শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর উপর নির্মান করা হয়েছিলো কাজিরবাজার সেতু। উদ্বোধনের আগে এই সেতু হয়ে উঠেছে নগরবাসীর নিঃশ্বাস ফেলার একটুকরো উন্মুক্ত স্থান। বিকেল হলেই শ'য়ে শ'য়ে নগরবাসী জড়ো হচ্ছেন সেতুতে। ঈদের ছুটিতে জনসমাগম আরো বেড়েছে।

ইট কাঠের ঠাসা বুনোটের এই শহরে নেই কোনো উন্মুক্ত স্থান। সারা দিনের কর্মব্যস্ততার শেষে বিকেল হলে একটু হাওয়া খাওয়া, নিজের মতো একটু হাটাচলার কোনো জায়গা নেই।

এই অভাব পুরণ করতে নবনির্মিত কাজির বাজার সেতুকেই বেছে নিয়েছেন নগরবাসী। ব্রিজ উপর দাঁড়িয়ে দেখা সুরমার জলে সূর্যের হারিয়ে যাওয়া, কিংবা সারা দিনের কর্মক্লান্ত শরীরে একটু হাওয়ার পরশ- দেহমন দুটোই তখন জড়িয়ে যেতে বাধ্য।

দেহমন জুড়াতে তাই প্রতিদিন বিকেলে অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন সেখানে। আড্ডার জায়গাহীন এই শহরে কাজির বাজার সেতু হয়ে উঠেছে তরুণদের আড্ডারস্থল।

এখন কাজির বাজার ব্রিজে গেলে ব্রিজ শব্দের ভিন্ন অর্থ মনে হতে পারে আপনার। মনে হতে পারে, ব্রিজ মানে বুঝি- বেড়ানোর জায়গা।

শনিবার ঈদের পরদিন বিকেলে কাজির বাজার সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছেন এখানে। সেতু জুড়ে অনেকটা জনজট লেগে আছে। এদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। ভ্রমণপিপাসুরা জড়ো হওয়ার কারণে সেতু জুড়ে দোকান খুলে বসেছে ভ্রাম্যমান চটপটিওয়ালা, চা-ওয়ালারা।

শনিবার বিকেলে কাজিরবাজার সেতুতে বেড়াতে এসেছিলেন কলজে ছাত্র আরিফুর রহমান বলেন, সুযোগ পেলেই বিকেলে এই সেতুতে ঘুরতে আসি। বন্ধুবান্ধবদের সাথে নিয়ে আসি।

তিনি বলেন, নগরীর ভেতরে খোলা কোনো জায়গা নেই। বিকেলটা কাটানোর মতো কোনো জায়গা নেই। এই সেতুটাতে এখনো যান চলাচল শুরু না হওয়ায় তাই এখানেই ঘুরতে আসি।

প্রশস্ত সেতু বিকেলে হাটাচলা করার জন্য বেশ ভালো জায়গা উল্লেখ করে সেতুর দুই পাশে দেয়াল তুলে দেওয়ায় ক্ষেভ প্রকাশ করলেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী সানজিদা আক্তার। তিনি বলেন, দুই পাশে দেয়াল তুলে দেয়ার ফলে সেতুটার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ভালো করে নদী দেখা যায় না। বাতাসে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এসব দেয়াল।

বিকেল হলেই প্রচুর লোকজন সেতুটিতে জড়ো হলেও এখানে নিশ্চিন্তে একটু সময় কাটানোর বিপত্তিও আছে। দলবেঁধে হরণ বাজাতে বাজাতে ছুটে চলা মোটরসাইকেলগুলো হয়ে উঠেছে এখানে ঘুরতে যাওয়া নগরবাসীর যন্ত্রণার কারণ। এখনো তেমন যান চলাচল শুরু না হওয়ায় এই সেতু হয়ে উঠেছে অনেক তরুণের মোটর সাইকেল নিয়ে গতি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র। মেয়েদের দেখলেই মোটর সাইকেলের গতি বাড়িয়ে দেয়া, হরণ বাজানাে এসব উপদ্রব তো রয়েছেই। শুরু হয়েছে ছিনতাইকারীদের উৎপাতও।

শনিবার বিকেলে কাজির বাজার সেতুতে ঘুরতে যাওয়া প্রণব পাল বলেন, উদ্বোধন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নগরবাসীর ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত এই সেতুতে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দিলে ভালো হয়। উদ্বোধনের পরও এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে উন্মুক্ত জায়গাহীন এই নগরে নগরবাসী এই সেতুতে অনন্ত নিরুপদ্রব বিকেল কাটাতে পারবেন।

তবে এমন ছোটখাটো উপদ্রব সত্ত্বেও বিকেল হলেই অনেকে ভীড় করছেন কাজির বাজার সেতুতে।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকায় সুরমা নদীর উপর কাজির বাজার সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম অবস্থায় চার লেন বিশিষ্ট ৩৬৬ মিটার দীর্ঘ এবং ১৯ মিটার প্রস্তের এ সেতুটির প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

সেতুটির নির্মাণকাজ ২০০৭-০৮ অর্থবছরের মধ্যেই সমাপ্ত করার কথা ছিল। নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত