সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ১২:৫৭

জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সরকারী নির্দেশনা

একটি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার পর সে সব প্রতিষ্ঠান থেকে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এবার জামায়াতে ইসলামী নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।।

যুদ্ধাপরাধ আদালতের ভাষায় ‘ক্রিমিনাল দল’ জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবির মধ্যে এই নির্দেশ এল।

গত রোববার পাঠানো অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা স্বাক্ষরিত ওই চিঠির সঙ্গে দুই পাতার একটি বিবরণী ও ২১৬ পাতার একটি সংযোজনীও পাঠানো হয় কেন্দ্রিয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো সে চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জামায়াত নিয়ন্ত্রিত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আসান মো. মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা ওই চিঠিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চিঠির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “সরকার যখন নির্দেশ দিয়েছে আমরা (বাংলাদেশ ব্যাংক) অবশ্যই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব।

“তবে চিঠি ও তার সঙ্গে যেসব তথ্য-উপাত্ত অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে, প্রথমে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কতটা করার সুযোগ আছে, সেগুলোও দেখতে হবে।”

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঠানো চিঠিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নে সরাসরি ব্যবস্থা সুযোগ নেওয়ার থাকলেও কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে সম্পর্কে কিছু বলা হয় নি, ফলে সিদ্ধান্তটা নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই।

পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য যে সব ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ সুবিধা নিয়েছে সে দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইসলামী ব্যাংক, যাকে জামায়াত সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই। বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এবং এখনও আছেন।

এর আগের মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা আবু নাসের মোহাম্মাদ আব্দুজ জাহের মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ।

তার আগে পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত মীর কাসেম আলী। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এই সদস্য ব্যাংকটির পর্ষদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সদস্যও (প্রশাসন) ছিলেন। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নানও জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, রোগ নিরূপণী কেন্দ্র, ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়। ব্যাংকের পাশাপাশি কয়েকটি বীমা প্রতিষ্ঠানকেও জামায়াতের বলে মনে করা হয়। বলা হয়, তাদের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম, পরিবহন কোম্পানি এবং কয়েকটি আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারাদেশে অসংখ্য কোচিং সেন্টার ও স্কুল-কলেজও জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বলে চিহ্নিত।

এর আগে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২৯ অক্টোবর জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে পাঠানো আদেশে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ।

চার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবের কাছে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন নথিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এনে তা নিজেদের সংগঠনের কাজে ব্যয় করার পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য করার কাজে ব্যবহার করছে।

জানা যায়, শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জামায়াত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সক্রিয়। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমিতি থেকে সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জঙ্গিদেরও অর্থায়ন করা হয়।

নজরদারির আওতায় আনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে_ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, মনোরোমা, রেনেসাঁ, ইসলামী ব্যাংক ক্রাফট অ্যান্ড ফ্যাশন, ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইসলামী ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামী ব্যাংক ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড ডিজ্যাবল রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, রেটিনা, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, কোরাল রিফ, মিশন ডেভেলপারস, কেয়ারি, ইনটিমেট হাউজিং, সোনারগাঁ হাউজিং, কেয়ারি গ্রুপ, কেয়ারি প্লাজা, কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস্, বিডি ফুড, ইয়ুথ গ্রুপ, মিশন গ্রুপ, আল-হামরা শপিং সেন্টার, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো. লি., ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো. লি., তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অনাবিল, সৌদিয়া, আবাবিল, ছালছাবিল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাস্ট, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, সিএনসি, ফুলকুড়ি, স্পন্দন, ফোকাস, কংক্রিট, কনসেপ্ট, অ্যাক্সিলেন্ট, ওমেকা, অপটিমামসহ ৫৬১ প্রতিষ্ঠানের নাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত