সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০২:০৬

আক্রান্ত হলেই গুলি: আতঙ্কে জামায়াত, নজরদারিতে ৫৬১ প্রতিষ্ঠান

দেশে গত ৩৮ দিনে মুক্তমনা লেখক-ব্লগারদের ওপর হামলা; প্রকাশক, প্রকৌশলী, পুলিশ সদস্য, ধর্মীয় হামলা, বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ও হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে সরকার।

ঘটনার অব্যবহিত পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একাধিক ঘটনাকে "বিচ্ছিন্ন ঘটনা" হিসেবে উল্লেখ করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী এসবকে "পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড" মনে করছেন এবং এর পেছনে যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর জড়িত থাকার ইঙ্গিত করেন।

এদিকে, এসব ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীর নাম। বিভিন্ন সময় তাদের আস্তানা থেকে হামলার আলামতও উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন প্রেক্ষাপটেই গোয়েন্দাদের বাড়তি নজর ছিল জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।

তাই সরকারের নির্দেশে দ্রুত মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে ৫৬১টি প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।

বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (কনফিডেনসিয়াল) মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষরে ছয়টি বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো পুলিশ সদস্যদের ওপর কোনো আক্রমণ হলে বিধি মোতাবেক বল প্রয়োগ করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার .করবেন।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিবিসিকে বলেছেন, তল্লাশি চৌকিতে হামলা হলে পাল্টা জবাবের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আক্রান্ত হলেই পুলিশ সদস্যরা গুলি করতে পারবেন, এজন্য কোনো প্রকার পূর্বানুমতির প্রয়োজন পড়বে না- এমন খবর শোনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। তারা বিবৃতি দিয়ে এ জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ ঘোষণা দেশের আইন, সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী বলেও দাবি করেছে।

বুধবার ঢাকার আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া চেকপোস্ট এলাকায় শিল্প পুলিশের এক কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যার পর পুলিশের সদর দপ্তর থেকে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে দেশের ৬৪ জেলাসহ সবকটি রেঞ্জের ডিআইজির কাছে। সে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে গুলি করতে পিছপা হওয়া যাবে না, এর জন্য কারো অনুমতির প্রয়োজন নেই।

এছাড়া র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ গত বুধবার রাতে বিজি প্রেসের সামনে সাংবাদিকদের বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিজের ও অন্যের জীবন রক্ষার জন্য যে কোনো মুহূর্তে গুলি করতে পারবে এ জন্য কোনো নির্দেশনা প্রয়োজন নেই।

একই দিন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপির পুলিশ কমিশনার অফিসে উপ-পুলিশ কমিশনার ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠককালে বলেছেন, ‘তল্লাশী চৌকিতে দায়িত্ব পালনকালে কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলেই গুলি চালাতে পারবেন।’

পুলিশ কর্মকর্তাদের এ ধরনের বক্তব্য এবং পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে পাঠানো এম. আলম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ ধরনের নির্দেশনার ফলে পুলিশ বাহিনী বেপরোয়া হয়ে যাবে। পুলিশদের আর জবাবদিহির ভয় থাকবে না।

এ নিদের্শের ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করার প্রবল আশংকা প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে- এভাবে দেশের পুলিশ বাহিনীকে নিরীহ জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ঘোষণা দেশের আইন, সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।

দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ও জামায়াতের আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে জামায়াত-বিএনপি নাশকতা চালাতে পারে এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। এবং সাম্প্রতিক সময়ের হত্যাকাণ্ড ও হত্যা প্রচেষ্টাগুলো সে নাশকতারই ইঙ্গিত মনে করছে পুলিশ প্রশাসন।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২৯ অক্টোবর জারি করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে পাঠানো আদেশে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ।

চার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবের কাছে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন নথিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নামে এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এনে তা নিজেদের সংগঠনের কাজে ব্যয় করার পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সাহায্য করার কাজে ব্যবহার করছে।

জানা যায়, শুধু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জামায়াত-শিবিরপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কাজে সক্রিয়। জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সমিতি থেকে সংগঠনের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি জঙ্গিদেরও অর্থায়ন করা হয়।

নজরদারির আওতায় আনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে_ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ, মনোরোমা, রেনেসাঁ, ইসলামী ব্যাংক ক্রাফট অ্যান্ড ফ্যাশন, ইসলামী ব্যাংক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইসলামী ব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইসলামী ব্যাংক ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড ডিজ্যাবল রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, রেটিনা, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমেজিং সেন্টার, কোরাল রিফ, মিশন ডেভেলপারস, কেয়ারি, ইনটিমেট হাউজিং, সোনারগাঁ হাউজিং, কেয়ারি গ্রুপ, কেয়ারি প্লাজা, কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস্, বিডি ফুড, ইয়ুথ গ্রুপ, মিশন গ্রুপ, আল-হামরা শপিং সেন্টার, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো. লি., ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স কো. লি., তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অনাবিল, সৌদিয়া, আবাবিল, ছালছাবিল, ফুয়াদ আল খতিব মেডিকেল ট্রাস্ট, সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী, সিএনসি, ফুলকুড়ি, স্পন্দন, ফোকাস, কংক্রিট, কনসেপ্ট, অ্যাক্সিলেন্ট, ওমেকা, অপটিমামসহ ৫৬১ প্রতিষ্ঠানের নাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত