ওয়েব ডেস্ক

০২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২২:৩৩

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘে পাকিস্তানি সিনেটরের চিঠি

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের পর একে ‘বিচারিক হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লেখা হয়েছে।

চিঠিটি লিখেছেন পাকিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর রেহমান মালিক।

পাকিস্তানের সংবাদপত্র ‘দ্য নিউজ’-এ বুধবার (২ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি একই সঙ্গে তাদের অনলাইন সংস্করণেও প্রকাশিত হয়। 

একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করে বাংলাদেশে গিয়ে এই দুই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে পাকিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের হাইকমিশনার প্রিন্স জেইদ বিন রা’দ আল হুসেইনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রেহমান মালিক।

সেইসাথে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য ঘটানো এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনের আওতার সবটুকু ক্ষমতা প্রয়োগেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ওই চিঠিতে সিনেটর মালিক লিখেছেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক এই দণ্ডের ঘটনা পাকিস্তানের জনগণ গভীর উদ্বেগ ও দুঃখের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা এই ঘটনাকে মানবাধিকারের নজিরবিহীন লঙ্ঘন বলে মনে করছি। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালকে জড়িয়ে ঘটানো চলমান এই ভ্রান্ত বিচারের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের নীরবতার বিষয়েও পাকিস্তানের জনগণ উদ্বিগ্ন।’

দ্য নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিনেটর মালিক ওই চিঠিতে বলেছেন, ৪৫ বছর আগে যেসব নেতা তাঁদের তৎকালীর নিজের দেশের (পাকিস্তান) প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেছিলেন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন তাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার।

চলতি বছরের ৭ জুন বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের কথা উল্লেখ করে সিনেটর মালিক বলেন, সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনেই মোদি বলেছিলেন যে, ১৯৭১ সালে একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাঙন তৈরি হয়। মোদি বলেছিলেন, ‘১৯৭০ সালে আমাদের দিনগুলোর কথা মনে করুন। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বলুন যে আমরা এক ছিলাম। এখানে যত মুক্তিযোদ্ধা বসে আছেন, আমি আপনাদের সম্মান জানাই। আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা যুদ্ধ করে রক্ত দিয়েছিল। এটা বলা কারো পক্ষেই সম্ভব ছিল না যে কোন রক্তটা ভারতীয় জওয়ানের আর কোন রক্তটা মুক্তিযোদ্ধার।’

এই কথার পর প্রমাণ করতে আর বাকি থাকে না যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত হস্তক্ষেপ করেছিল। মালিক লিখেছেন, এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন উপেক্ষা করতে পারে না। ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য র (RAW), ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সেই সময়কার সেনা প্রধান এবং সেই সময়ের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীই সরাসরি দায়ী। তারাই নিরীহ জনগণকে হত্যা করে সার্বভৌম পাকিস্তানকে ভেঙেছে।

মানবাধিকার কমিশনকে রেহমান মালিক লিখেছেন, ‘তাই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দুই নেতাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া পুরোপুরি বানানো বিষয় এবং এরা কেউই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বরং ভারতীয় অর্থায়ন ও সমর্থনে গঠিত মুক্তি বাহিনীই এসব ঘটিয়েছে।’

বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের হাতে আরো 'নির্দোষ' মানুষের জীবন শেষ হওয়ার আগেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করেন রেহমান মালিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত