সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ জুন, ২০১৬ ০২:১২

ফের গণভোটের আবেদনকে ক্যামেরনের ‘না’

ইউরোপিয় ইউনিয়নে থাকা, না থাকা নিয়ে গণভোটে বিপক্ষ দলের কাছে পরাজয়ের পর ফের গণভোট নেওয়ার আবেদনের প্রতি নেতিবাচক মত প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গণভোটের পর পার্লামেন্টে প্রথম বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ইইউ ছাড়ার পক্ষে গণরায় মেনে নিতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবারের গণভোটে হারের পর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া ক্যামেরন সোমবার পার্লামেন্টে বক্তব্যে ভোটের রায় মেনে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান বলে ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে।

বিশ্বজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের ওই গণভোটের পর এটাই যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্সে সরকার প্রধানের প্রথম বক্তব্য।

গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে যুক্তরাজ্যের সাড়ে চার কোটি ভোটারের ৫২ শতাংশ ইউরোপের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোটের সঙ্গে চার দশকের বন্ধন ছেড়ার পক্ষে রায় দেয়। এর ফলে যুক্তরাজ্যসহ বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় টলোমলো অবস্থার প্রেক্ষাপটে পুনরায় গণভোটের আওয়াজ উঠেছে যুক্তরাজ্যে এবং এর পক্ষে আবেদনে চার লাখ নাগরিকের সই ইতোমধ্যে সংগ্রহ হয়েছে।

ইইউতে থাকার পক্ষের ক্যামেরন পার্লামেন্টে বলেন, “ফল নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তবে এর ঝুঁকি নিয়ে আমি যা বলছিলাম, তা থেকে অবশ্যই আমি সরে আসছি না। এটা বড় কঠিন।

“আমাদের অর্থনীতিতে সমন্বয়ের প্রয়োজন আমরা এরই মধ্যে অনুভব করতে শুরু করেছি। আমাদের সাংবিধানিক বিষয়গুলোর চ্যালেঞ্জও দেখতে শুরু করেছি।”

ইংল্যান্ড, ওয়েলস, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড নিয়ে গঠিত যুক্তরাজ্যে এই গণভোটে স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্তি দেখা দিয়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ইইউ ছাড়ার পক্ষ জিতলেও হেরেছে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে।

স্কটল্যান্ড ইতোমধ্যে ইইউতে থেকে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে গণভোটের রায় বাস্তবায়ন আটকে দিতে তাদের পার্লামেন্টের মাধ্যমে ভেটো দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টেও ইইউ ছাড়ার বিপক্ষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে ইইউর সংবিধান অনুযায়ী, গণভোটে রায় হলেও সংশ্লিষ্ট দেশের পার্লামেন্টে তা অনুমোদিতে হয়ে আসার বাধ্যবাধকতা থাকায় এমপিরা এখনও তা আটকে দিতে পারেন।

তবে সংসদীয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন জনগণের রায়কে সম্মান দিতে সবার প্রতি অনুরোধ করে বলেছেন, “আমি স্পষ্ট করে বলছি, সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে যে সিদ্ধান্ত (গণভোটের রায়) আমাদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজও আমাদের শুরু করতে হবে।”

ভোটের ফল আসার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে ক্যামেরন বলেছিলেন, তিনি অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তার দল কনজারভেটিভ পার্টি নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করলে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। অক্টোবরে কনজারভেটিভদের নতুন নেতা নির্বাচনের সময় ঠিক থাকলেও তা এগিয়ে আনার দাবি তুলেছেন দলটির মধ্যম সারির নেতারা।

নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যাদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে, সেই বোরিস জনসন ও উইলিয়াম গোভ সোমবার পার্লামেন্টে ক্যামেরনের বক্তব্যের সময় উপস্থিত ছিলেন না। কনজারভেটিভদের এই দুই নেতাই ইইউ ছাড়ার পক্ষে জোর প্রচার চালিয়েছিলেন।

বিরোধী লেবার পার্টির ডেভিড ল্যামি গণভোটের পরও ইইউ ছাড়ার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। লিবারেল ডেমোক্রেট সদস্যরা বলছেন, ২০২০ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় গেলে তারা যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখার পদক্ষেপ নেবেন।

গণভোটে দ্বিধাবিভক্তি স্পষ্ট হওয়ার পর ইউরোপের অভিবাসীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বানও জানান ক্যামেরন।

যুক্তরাজ্যের গণভোটের ফলাফলে চরম হতাশ হলেও ইইউর বাকি ২৭ সদস্য বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে লন্ডন সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানির সরকার প্রধান আঙ্গেলা মের্কেল সোমবার ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া অলন্দ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনসির সঙ্গে আলোচনার আগেও বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপের জন্য যুক্তরাজ্যের সময়ের প্রয়োজন রয়েছে স্বীকার করে নিয়েই মের্কেল বলেছেন, তবে বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত