সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুলাই, ২০১৬ ০৩:০৮

পরের টার্গেট ভারত!

বিস্ফোরণের রিমোট যে নামধারী সংগঠনের হাতেই থাকুন না কেন,  নাশকতার রং বদলায় না। এই সূত্রটিকে সামনে রেখেই দেশের ভিতরে নিরাপত্তার দুর্গ নিশ্ছিদ্র করার চেষ্টা করছে ভারত। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার গতিপ্রকৃতিও বোঝার চেষ্টা চলছে এই সূত্র ধরেই।

নর্থ ব্লক সূত্রের মতে, ঢাকায় সাম্প্রতিক নাশকতার কাণ্ড এটাই প্রমাণ করে যে উপমহাদেশে একটি ছাতার তলায় বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন নিজেদের সুবিধা ও স্বার্থ অনুযায়ী হাত মিলিয়ে এগোচ্ছে। তা সে ইসলামিক স্টেট হোক বা লস্কর, জামাত-উল- মুজাহিদিন হোক কিংবা তার পিছনে থাকা আইএসআই। দিল্লির তাই আশঙ্কা, বাংলাদেশে একচোট মহড়ার পর ভারতই এই সন্ত্রাস-সিন্ডিকেটের পরের নিশানা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক কর্তার কথায়, ‘‘মনে করার কোনও কারণ নেই যে ওই সব ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন মিশে এক হয়ে গিয়েছে। এমনও নয় যে, তাদের নিজেদের মধ্যে বিবাদ মিটে গিয়েছে, একাকার হয়ে হয়ে গিয়েছে এদের ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র ও নাশকতার ধরন। কিছু ক্ষেত্রে স্বার্থ অভিন্ন হওয়াতেই কোনও কোনও অপারেশনে তারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘ঢাকার নাশকতা আমাদের সকলকে আবার মনে করিয়ে দিল, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে হবে। সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা ঠিক করে জাতিসংঘে প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়টিকেও এ বার জোরালো ধাক্কা দেওয়ার সময় এসেছে।’’

ভারতের পাশাপাশি আমেরিকা তথা পশ্চিম বিশ্বও একই ভাবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব জন কেরি আজমঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে প্রয়োজনে এফবিআই-এর সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আগামি ৪ অগস্ট ইসলামাবাদে বসছে সার্ক দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন। সেখানে তখন ভারত ও বাংলাদেশ, দু’দেশেরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও অফিসাররা থাকবেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানকে প্রশ্নের মুখে ফেলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দু’‌দেশ। ওই বৈঠকের উপর কড়া নজর রাখবে পশ্চিমি দেশগুলি।

গুলশনে গত শুক্রবারের হামলায় কোন কোন সংগঠনের মস্তিষ্ক, অর্থ, রসদ বা অন্যান্য ‘লজিস্টিক’ কাজ করেছে— তার ছবিটা এখনও পুরো স্পষ্ট নয়। তবে তবে কুয়াশা একটু একটু করে কাটছে। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হুসেন তৌফিক ইমাম ইতিমধ্যেই তদন্তের একটি নতুন দিকের উপর আলো ফেলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তানের আইএসআই ও জামাতের যোগ সর্বজনবিদিত। তারা বর্তমান সরকারকে নাড়িয়ে দিতে চায়।’’ পাশাপাশি সে দেশে একের পর এক হামলায় আইএস-এর ধাঁচটিও স্পষ্ট হয়ে উঠছে ভারতের কাছে। আইএস-এর মুখপত্র ‘দাবিক’ পত্রিকায় তাদের প্রশাসনিক কর্তা আবু ইব্রাহিম আল হামিদ এ বছরের গোড়াতেই ঘোষণা করেছিল, ‘বাংলাদেশে জেহাদ থমকে গিয়েছে। সেখানে আবার নতুন আশার আলো দেখা দেবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বাংলাদেশে জেএমবি তৈরি হওয়ার ঘটনাকেও জেহাদের স্বপ্ন পূরণের ধাপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল।

ইসলামাবাদ অবশ্য মঙ্গলবার সরকারি ভাবে গুলশনে নাশকতার দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে। পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘প্ররোচনামূলক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভারতকে দূষে পাকিস্তান এক বিবৃতিতে বলেছে, এই ধরনের খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমই প্রচার করছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

তবে পাকিস্তানের এই দাবিকে আমল না দিয়ে তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে গুলশন হামলার সংযোগের বাস্তবতা খতিয়ে দেখছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে খবর, এই সংযোগের পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে সৌদি আরবের। সিরিয়ার সরকার-বিরোধী জিহাদিদের গোপনে অর্থসাহায্য এবং অন্যান্য মদত জুগিয়ে এসেছে সৌদি। নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে তারা এই কাজে পাক প্রশাসন তথা আইসআই-কেও কাজে লাগিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গোয়েন্দাদের কাছে খবর, প্রায় দেড়শো কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে পাক সেনা তথা আইএসআই-কে কিনে নেওয়া হয়। সিরিয়ায় জঙ্গিদের অস্ত্র সাহায্য করার পিছনে এর পর থেকে পাক ভূমিকাও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এ ছাড়া, গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের একটি বড় সংখ্যক জঙ্গি সিরিয়া ও ইরাকে পাড়ি দিয়েছে প্রশিক্ষণ নিতে।

এই অবস্থায় বাংলাদেশ ও ভারতে হামলা শানানোর জন্য আইএসআই এবং আইএস যদি নিজেদের মধ্যে কোনও সমঝোতা করে নেয়, তাতেও আশ্চর্য হচ্ছে না নয়াদিল্লি। পাক গুপ্তচর সংস্থা এটাও নজরে রেখেছে যে, আইএস-এর শীর্ষপদে বসার পর একাধিক জনসভায় ভারতের নাম করেছে আবু বকর আল বাগদাদি। তার দাবি, অন্য অনেক দেশের মতো ভারতেও মুসলিমরা সুরক্ষিত নন। কাশ্মীরে সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের উপর ‘অত্যাচার’ করছে, এমন অভিযোগও এনেছিল বাগদাদি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বক্তব্য, ভারত অথবা বাংলাদেশের উপর হামলা যে দেশ বা সংগঠনই ঘটাতে চাক না কেন, পাকিস্তানের কৌশলগত সমর্থন বা সাহায্য না নিয়ে তা করা কার্যত অসম্ভব। পাকিস্তানের ভূকৌশলগত অবস্থান ও সে দেশে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসবাদের সংস্কৃতি এর কারণ। লস্কর বা আল কায়দা বরাবরই ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ায় নাশকতার জন্য আইএসআই-কে কাজে লাগিয়ে এসেছে। বিনিময়ে তাদের ‘কড়ি’ বুঝে নিয়েছে পাক সেনা তথা আইএসআই। নর্থ ব্লকের ধারণা, এ ক্ষেত্রেও আইএস-কে সাহায্য করার বিনিময়ে পাক সেনা দু’টি বিষয় চেয়ে নিতে পারে তাদের কাছ থেকে। এক, পাক ভূখণ্ডকে তাদের নাশকতা থেকে রেহাই দেবে আইএস। দুই, ভারত-বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করার প্রশ্নে আইএস তাদের নাশকতাকে ক্ষুরধার করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তার মতে, ‘‘ওসামা বিন লাদেন এবং তালিবান-প্রধান মোল্লা ওমরের মৃত্যুর পর আল কায়দা ও তালিবান নেতৃত্ব কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে রক্তপাত ঘটানার পর তাদের মূল লক্ষ্যবিন্দু আপাতত আফগানিস্তানে ছায়াযুদ্ধ। ফলে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস পাচারের প্রশ্নে কিছুটা তারতম্য আসতে বাধ্য। এই আপাত শূন্যস্থানের দিকে নজর রেখে এগোচ্ছে আইএস।’’
সূত্র : আনন্দবাজার

আপনার মন্তব্য

আলোচিত